ডেস্ক নিউজ
রাজধানীর হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি প্রকল্পকে ‘পাবিলক ট্রাস্ট’ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে উক্ত ট্রাস্টের লে-আউট প্ল্যানের বাইরে সকল ব্যবসায়িক স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়েছেন। গতকাল বুধবার বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল এবং বিচারপতি রাজিক আল জলিলের ডিভিশন বেঞ্চ এ রায় দেন। রায়ে ১০ দফা নির্দেশনাও রয়েছে। এ তথ্য জানান, রিটের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন অ্যাডভোকেট ইমাম হোসেন।
মনজিল মোরসেদ জানান, ২০১৮ সালে একটি জাতীয় দৈনিকে ঢাকার হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি প্রজেক্টে লে আউট প্ল্যানের নির্দেশনার বাইরে কতিপয় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনা বন্ধে রাজউকের নিষ্ক্রিয়তা সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
পরিবেশ এবং মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা ‘হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পীস ফর বাংলাদেশ’র পক্ষে অ্যাডভোকেট রিপন বাড়ৈ প্রতিবেদনটি যুক্ত করে জনস্বার্থে রিট করেন। শুনানি শেষে হাইকোর্ট রুল জারি করেন। রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে আদালত উপরোক্ত আদেশ দেন।
দশ দফা নির্দেশনাগুলো হচ্ছে (১) তুরাগ নদীর রায়ের নীতি অনুসারে ঢাকার হাতিরঝিল- বেগুনবাড়ি প্রজেক্টকে পাবলিক ট্রাস্ট (জনগণের সম্পত্তি) ঘোষণা করা হল। (২) ঢাকার হাতিরঝিল প্রকল্পে হোটেল, রেস্টুরেন্ট, দোকানসহ সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থাপনা অবৈধ ঘোষণা করা হল। আগামী ৬০ দিনের মধ্যে সকল বাণিজ্যিক স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ প্রদান করা হল। (৩) প্রকল্প এলাকায় বাণিজ্যিক স্থাপনা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হল। (৪) প্রকল্পের সংরক্ষণ, উন্নয়ন, পরিচালনার জন্য পৃথক একটি কর্তৃপক্ষ গঠন করে প্রধানমন্ত্রীর তত্বাবধানে পরিচালনা করা। (৫) প্রকল্পের স্থায়ী পরামর্শক হিসেবে বুযেটের প্রকৌশল বিভাগ এবং সেনাবাহিনীর ২৪তম ব্রিগেডকে যৌথভাবে পরামর্শক নিয়োগ করা হল। (৬) প্রকল্প এলাকায় জনসাধারণের জন্য ‘আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়াশরুম’ নির্মাণ করা। (৭) প্রকল্প এলাকায় সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা। (৮) পায়ে চলা, সাইকেল চালানা এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা চলাচলের ব্যবস্থা নেয়া। (৯) প্রকল্প এলাকার লেকে মাছের অভয়ারণ্য প্রতিষ্ঠা করা। (১০) প্রকল্প এলাকায় বাণিজ্যিক কোন স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না।
অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, হাইকোর্ট তার রায়ে প্রথম বাঙালি বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর নামে প্রকল্পের নামকরণ করারও পরামর্শ দেন। আদালত উল্লেখ করেন যে, হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকা হল ঢাকার ফুসফুস। এজন্য এর সুরক্ষা অপরিহার্য। ‘কন্টিনিউইং ম্যান্ডামাস’ (চলমান রায়) হিসেবে রাখা হয়েছে।
চূড়ান্ত শুনানিতে মনজিল মোরসেদ বলেন, হাতিরঝিলে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে ঢাকার সবচেয়ে নান্দনিক বড় প্রকল্প হিসেবে চালু করার পরে কিছু দিনের মধ্যেই লে আউট প্ল্যানের বাইরে অবৈধভাবে রেস্টুরেন্ট ও অন্যান্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান চালুর মাধ্যমে জনসাধারণের স্বাভাবিক চলাচলকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন সেখানে ভ্রমণে আসেন। ট্রাফিক জ্যামের কারণে স্বাভাবিক চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কারণে বাস্তবায়িত প্রকল্পটি নান্দনিক সৌর্ন্দয্য হারাচ্ছে। জনগণের টাকায় তৈরি প্রকল্পে কারও ব্যবসার সুযোগ করে দিয়ে জনস্বার্থ বিরোধী কাজ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ১০ সেপ্টেম্বর বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার এবং বিচারপতি কে. এম. হাফিজুল আলমের তৎকালীন ডিভিশন বেঞ্চ লে-আউট প্ল্যান বহির্ভুত স্থাপনা তৈরি বন্ধে নির্দেশনা দেন। একই সঙ্গে লে-আউট প্ল্যান অনুযায়ী হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি প্রকল্প রক্ষার কেন নির্দেশ দেয়া হবেনা-এই মর্মে রুল জারি করেন। রিটে গণপূর্ত বিভাগের সচিব, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী, রাজউক চেয়ারম্যান, ডিএমপি কমিশনার, ওসি হাতিরঝিল, পিডি হাতিরঝিল প্রকল্পের পরিচালককে বিবাদী করা হয়। শুনানিতে মসজিল মোরসেদকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট সঞ্জয় মণ্ডল।