ডেস্ক নিউজ
ঈদে চার দিনের টানা ছুটির পর আবারও রাজধানীতে ফিরতে শুরু করেছেন নগরবাসী। তবে ফেরার পথে ছিল না কোনো ভোগান্তি। রাস্তাও ছিল ফাঁকা। নির্ধারিত সময়ের আগেই গন্তব্যে পৌঁছতে পেরেছেন ঢাকামুখী মানুষ। যাঁরা প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করতে নাড়ির টানে ঢাকা ছেড়েছিলেন, অফিস-আদালত খোলায় অনেকেই মঙ্গলবার প্রথম কর্মদিবসে যোগদানের জন্য ঢাকায় ফিরেছেন। এরই মধ্যে মঙ্গলবারও অনেককে রাজধানী ছেড়ে যেতে দেখা গেছে। তাঁদেরও যাত্রা ছিল স্বস্তিদায়ক।
মঙ্গলবার অফিস-আদালত খুললেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি ছিল খুবই নগণ্য। খোদ সচিবালয় থেকে শুরু করে পুরান ঢাকার কোর্ট-কাচারি, বাণিজ্যিক এলাকা, শিল্পাঙ্গনসহ সর্বত্র ছিল ছুটির আমেজ। ঢাকার সড়কগুলোয় যানবাহন আর মানুষের কোনো ভিড় লক্ষ করা যায়নি। শপিং মল, বিপণিবিতানও ছিল ফাঁকা।
সচিবালয়ে ঈদের ছুটি শেষে প্রথম কর্মদিবসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, ঈদের ছুটিতে উত্তরবঙ্গের যাতায়াতে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। তবে গত ঈদুল ফিতরের চেয়ে এবার ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক ছিল বলে দাবি করেন তিনি।
এদিকে রাজধানীর গাবতলী, সায়েদাবাদ, মহাখালী ও গুলিস্তানের বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কর্মজীবী মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে ঢাকায় ফিরছেন। ফিরতি ভাড়া নিয়েও কারও কোনো আক্ষেপ নেই।
গাবতলী টার্মিনালের হানিফ পরিবহনের কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম জানান, ভোরবেলা যেসব গাড়ি ঢাকায় ঢুকেছে সেগুলো যাত্রীতে পূর্ণ ছিল। তবে রাস্তা ফাঁকা থাকায় গাড়িগুলো নির্ধারিত সময়ের আগেই টার্মিনালে প্রবেশ করেছে।
বগুড়া থেকে ঢাকায় ফেরা ব্যাংকার আব্দুর রহমান জানান, ছুটি শেষ হওয়ায় ঢাকায় ফিরতে হয়েছে। কারণ মঙ্গলবার থেকেই ব্যাংক খোলা। এসব তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে।
অনেকেই রাতে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন স্থান থেকে লঞ্চে উঠে সকালে সদরঘাটে নামেন। তাঁদের ছিল অফিসে যোগদানের তাগিদ।
ঢাকায় ঈদ শেষে অনেকে গতকাল বিভিন্ন জায়গায় বেড়ানোর উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়েন। সাকিব নামের এক যুবক জানান, তাঁর আব্বা কপবাজারে চাকরি করেন। ঈদে ঢাকায় আসতে পারেননি। এ জন্য তিনি মা ও বোনকে নিয়ে কপবাজারে যাচ্ছেন। কয়েক দিন থাকবেন। সেখানেই হবে মূলত তাঁদের ঈদ আনন্দ।
এ ছাড়া ঈদের আগে যাঁরা বাস-ট্রেনের টিকিট পাননি, তাঁদেরও কেউ কেউ গতকাল ঢাকা ছেড়েছেন। অনেককে প্রিয়জন বা পরিবার-পরিজনকে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে বেড়ানোর উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়তে দেখা গেছে। তবে বাস, ট্রেন ও লঞ্চ টার্মিনালগুলোতে কোনো ভিড় দেখা যায়নি। গাড়িগুলোও নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে গেছে।
এদিকে মঙ্গলবার ঢাকায় চিরচেনা যানজটের দৃশ্য দেখা যায়নি। নগরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ জানিয়েছেন, ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে যাওয়া সব মানুষ এখনও ঢাকায় পৌঁছেনি। ছুটি শেষে ঢাকায় পৌঁছাতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, মতিঝিল অফিসপাড়া, আদালতে স্বল্প সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীর উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। ঈদের শুভেচ্ছা বিনিয়ম ও খোশগল্পের মধ্য দিয়ে তাঁদের দিন কেটেছে। অনেকে ঈদের নির্ধারিত ছুটির পর ব্যক্তিগত ছুটি নিয়েছেন। তাঁদের ঢাকায় পৌঁছাতে আর কয়েকদিন সময় লাগবে। এর পরই জমবে ঢাকা।
এদিন ঢাকার গুলিস্তান, মতিঝিল, নিউমার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড, ফার্মগেট, মৌচাক, কারওয়ান বাজার, পান্থপথ, বনানী, গুলশান, বারিধারা, উত্তরার জনবহুল জায়গাগুলো ছিল ফাঁকা। ছিল না চিরচেনা যানজটের সেই দৃশ্য। অল্প সংখ্যক মানুষ ও যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। আগে ঢাকার এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পৌঁছতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে থাকতে হতো। আর গতকাল রাস্তা ফাঁকা থাকায় মুহূর্তেই চলাচল করা গেছে। যাত্রীবাহী বাস, প্রাইভেট কার, সিএনজি অটোরিকশা, রিকশার সংখ্যা ছিল কম।
লোকসমাগম না থাকায় অধিকাংশ হোটেল-রেস্তোরাঁও খোলেনি। সীমিত পরিসরে কিছু রেস্তোরাঁ খোলা দেখা গেছে। ঢাকার কারওয়ান বাজারসহ বৃহৎ পাইকারি কাঁচাবাজারগুলোও জমেনি।