ডেস্ক নিউজ
রাজধানীতে সুপেয় পানির সংকট কাটাতে ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে ‘ঢাকা এনভায়রনমেন্টালি সাসটেইনেবল ওয়াটার সাপ্লাই’ প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার ও রূপগঞ্জে। মেঘনা নদীর পশ্চিম পাড়ে বিশনন্দী এলাকায় দৈনিক ১০৫ কোটি লিটার পানি উত্তোলন ক্ষমতাসম্পন্ন ইনটেক স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্বপাড়ে ওয়াসার নিজস্ব জায়গায় সুপেয় পানি উত্তোলন ও সরবরাহ করা হবে। এ লক্ষ্যে প্রথম ধাপে দৈনিক ৫০ কোটি লিটার ক্ষমতাসম্পন্ন পানি শোধনাগার নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এতে ঢাকা মহানগরের উত্তর পশ্চিমাংশে বিশেষ করে বাড্ডা, গুলশান, বনানী, উত্তরা, মিরপুর, দক্ষিণখান, উত্তরখান, মাটিকাটাসহ অন্যান্য এলাকায় শতভাগ সুপেয় পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীনে ঢাকা ওয়াসা প্রকল্পটি পরিচালনা করছে। প্রকল্পটির ৩০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটি ডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত হয় ২০১৪ সালে। গত ডিসেম্বরে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নানা সমস্যায় কাজই শুরু হয় ২০১৯ সালের মে মাসে। এরপর মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত। শুরুতে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা। মেয়াদের সঙ্গে এখন প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা। ২ বছর মেয়াদসহ এই প্রকল্পেরই ব্যয় বাড়ে ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। তবে করোনা পরিস্থিতিসহ নানা কারণে দ্বিতীয়বার মেয়াদ বাড়লেও যথাসময়ে প্রকল্পটি শেষ হবে কি না সংশয় রয়েছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, এরই মধ্যে প্রকল্পের ৩০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। মন্ত্রণালয় ও ঢাকা ওয়াসা প্রকল্পটি তদারকি করছে। সম্প্রতি সরেজমিনে রূপগঞ্জের গন্ধর্বপুর পানি শোধনাগার কেন্দ্র পরিদর্শন করেন স্থানীর সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। এরপর তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আশা করছি, অল্প সময়ের মধ্যে ঢাকায় শতভাগ মানুষের মাঝে পানি সরবরাহ করা হবে। এটা বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। পানির স্তর অনেক নিচে নেমে যাচ্ছে। এ কারণে আমাদের সারফেস ওয়াটারের কথা চিন্তা না করে উপায় নেই। সুপেয় পানি দিতে হলে আমাদের বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিতে হবে। ঢাকাসহ সারা দেশের জন্য সেইফ ওয়াটার দেওয়া হবে।’ নির্ধারিত ২০২৩ সালেই নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ওয়াসার গন্ধর্বপুর ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে জানান স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, অযৌক্তিক কারণে প্রকল্প ব্যয় আর মেয়াদ বাড়লে ক্ষমা পাবেন না কেউ। ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান বলেন, ‘প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দিনে ৫০ কোটি লিটার বাড়তি পানি পাবে রাজধানীবাসী।’ জানা গেছে, ঢাকা পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ (ওয়াসা) বর্তমানে ৪০০ বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত ঢাকা মহানগরী এলাকায় প্রায় ১৫ মিলিয়ন জনসাধারণকে সুপেয় পানি সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছে। ঢাকা মহানগরীর উত্তর পশ্চিমাংশ ও তৎসংলগ্ন এলাকাসমূহে পানি সরবরাহের মূল উৎস ভূ-গর্ভস্থ গভীর নলকূপ। কিন্তু প্রতি বছর ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমে নিচে নেমে যাচ্ছে। ফলে নলকূপগুলোর পানি উত্তোলন ক্ষমতা প্রতিনিয়ত কমছে। পানির চাহিদার কারণেই ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে ভূ-উপরিস্থ উৎস হতে পানি ব্যবহারের জন্য নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ঢাকা ওয়াসার নিজস্ব জায়গায় মেঘনা নদী হতে পানি উত্তোলন ও সরবরাহের ব্যবস্থা রেখে পানি শোধনাগার নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। মেঘনা নদীর বিশনন্দী এলাকায় নির্মাণাধীন ইনটেক হতে পানি তুলে ১ম ফেইজে বৃহদাকার ২টি পাইপের মাধ্যমে ঢাকা সিলেট গোলকান্দাইল হয়ে রূপগঞ্জের গন্ধর্বপুরে ওয়াসার নিজস্ব জায়গায় শোধনাগারে পানি আনা হবে। সেখানে পরিশোধিত পানি শীতলক্ষ্যা ও বালু নদী ক্রস করে মাদানী এভিনিউ হয়ে ঢাকার বারিধারায় আনা হবে।
সুপেয় পানি, বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ২০ কোটি ডলারে ঋণচুক্তি : এদিকে বাংলাদেশের গ্রামীণ প্রান্তিক মানুষের জন্য সুপেয় পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন সরবরাহ করার জন্য বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ২০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তি হয়েছে। বিশ্বব্যাংক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) মধ্যে সম্প্রতি একটি ভার্চুয়াল ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিতে ইআরডি সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন এবং বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি মার্সি মিয়াং টেম্বন স্বাক্ষর করেন। এই ঋণের জন্য ২ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে। এর মধ্যে সুদ হিসেবে ১ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং সার্ভিস চার্জ হিসেবে দিতে হবে ০.৭৫ শতাংশ হারে। এর মাধ্যমে ‘বাংলাদেশ রুরাল ওয়াটার, স্যানিটেশন অ্যান্ড হাইজিন ফর হিউম্যান ক্যাপিটাল ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের ৭৮টি উপজেলার গ্রামীণ অঞ্চলের ৬ লাখ মানুষের জন্য নিরাপদ পানি এবং ৩৬ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যকর স্যানিটেশন নিশ্চিত করা হবে। গত ২৪ নভেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পটি পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) বাস্তবায়ন করছে। ইআরডি জানায়, এর মাধ্যমে বাংলাদেশের আর্সেনিক ও আয়রনের সমস্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে নির্বাচিত গ্রামগুলোতে নিরাপদ পানি সরবরাহে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে এবং ৩৬ লাখ মানুষের জন্য স্বাস্থ্যকর স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।