ডেস্ক নিউজ
দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করে ‘জয় বাংলা ইয়ুথ এ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন দেশের ৩১ সংগঠন ও তরুণ উদ্যোক্তা। পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান ধারণ করে প্রচার করা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুব সমাজের অবদানকে স্বীকৃতি দিতে সব সময় তরুণ সমাজের পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। গতকাল সাভারের শেখ হাসিনা জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউটে পুরস্কার তুলে দেন বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র ও সিআরআইয়ের ট্রাস্টি রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও তাঁর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা ও সিআরআইয়ের চেয়ারম্যান সজীব ওয়াজেদ জয়ের ধারণ করা বক্তব্য প্রচার করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যুব সমাজ আমাদের মূল শক্তি। আমরা যে নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছি সেই ইশতেহারে আমরা আমাদের যুব সমাজকে উৎসর্গ করেছি। আজ তরুণরা নিজেদের প্রস্তুত করবে আগামী দিনের জন্য, যাতে তারা এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। আর প্রজন্মের পর প্রজন্ম যাতে এই ধারা অব্যাহত থাকে। একটা কথা মনে রাখতে হবে আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের পেছনে তরুণদের শক্তি, উদ্যোগ, উদ্যাম কাজ করেছে।’ দেশ ও মানুষের কল্যাণে যেসব তরুণ উদ্যোক্তা ও সংগঠন কাজ করে যাচ্ছে তাদের পুরস্কৃত করার উদ্যোগের প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী।
বঙ্গবন্ধু সেই তরুণ বয়স থেকে এদেশের নিপীড়িত- শোষিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম শুরু করেছিলেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু তরুণদের সব ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ সবসময় তরুণদের গুরুত্ব দেয়। তরুণরাই পরিবর্তন এনে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন বিজ্ঞানের যুগ, প্রতিনিয়ত পরিবর্তন আসছে। প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে, এগিয়ে যেতে হবে। যদি এই পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে না পারি, তাহলে পিছিয়ে যেতে হবে। জ্ঞান ও মেধা দিয়ে তরুণরাই সেই পরিবর্তন আনতে পারে।
প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘পঞ্চাশ বছর আগে জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। এই দীর্ঘ সময়ে অনেক পথ পার হয়ে আসতে হয়েছে। ষড়যন্ত্র, হত্যাকা-, স্বৈরাচারী সরকার। তবে এখন পঞ্চাশ বছর পর খুব গর্ব করে বলতে পারি বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়ন হচ্ছে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে।’
তিনি বলেন, ‘যারা নিজেদের পরিশ্রম দিয়ে নিজেদের উদ্যোগে দেশের মানুষের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তারা সোনার বাংলার একটি উদাহরণ। সোনার বাংলা হচ্ছে আমাদের দেশের মানুষের উন্নয়নের স্বপ্ন। আমার দেশের উন্নয়নের স্বপ্ন। দেশের প্রতিটি মানুষ যাতে সুস্থ থাকে, শান্তিতে থাকে, অভাব না থাকে; সেটাই হচ্ছে সোনার বাংলার স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন পূরণ করার জন্য আমাদের আওয়ামী লীগ সরকার পরিশ্রম করে যাচ্ছে।’
দেশের জন্য কাজ করা তরুণ উদ্যোক্তা ও সংগঠনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে জয় বলেন, ‘আমাদের ভিশন ২০২১ হচ্ছে সেই স্বপ্নের একটি ভিশন। ডিজিটাল বাংলাদেশ সেই স্বপ্নের একটা উদ্যোগ। তবে শুধু সরকারের ওপর নির্ভরশীল থাকলে হবে না। আমাদের দেশে যারা দেশের জন্য পরিশ্রম করছে, সময় দিচ্ছে, অর্থ দিচ্ছে তারা কারও কাছে হাত পেতে নয় তাদের ইচ্ছা হচ্ছে বিভিন্ন মানুষের সমস্যা সমাধান করা। তারাই হচ্ছে আমাদের সোনার বাংলার স্বপ্ন।’
প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমরা নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছি। লড়াই করে রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। কেউ আমাদের স্বাধীনতা হাতে তুলে দেয়নি। তেমনি সোনার বাংলাও আমরা গড়ছি নিজেদের পরিশ্রম, নিজেদের মেধা দিয়ে। আমরা কারও ওপর নির্ভরশীল না। তাই আমি অত্যন্ত গর্বিত যে আমাদের দেশে ইয়াং বাংলার পার্টিসিপেন্ট এর মতো উদ্যোগ আছে, মেধাবী-তরুণ ছেলেমেয়ে আছে; যারা দেশের জন্য পরিশ্রম করে যাচ্ছে।’
পুরস্কার তুলে দেয়ার আগে বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র ও সিআরআইয়ের ট্রাস্টি রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি সমাজের জন্য কাজ করা তরুণ উদ্যোক্তা ও ব্যক্তির প্রশংসা করে বলেন, ‘আপনারা যেভাবে কাজ করছেন এভাবে কাজ করে যাবেন। আমরা আপনাদের কাছ থেকে অনেক উৎসাহ ও সাহস পাই। আপনারাই হচ্ছেন আমাদের ভবিষ্যত।’ এ সময় দেশের সব সেক্টরে আরও বেশি তরুণদের হাতে দায়িত্ব দেয়ার সময় এসেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, তরুণদের সামনে নিয়ে আসতে হবে, তাদের সাপোর্ট আসতে হবে। তিনি ইয়াং বাংলা ও সিআরআইয়ের পক্ষ থেকে তরুণদের পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
জয় বাংলা ইয়ুথ এ্যাওয়ার্ডের চূড়ান্ত পর্বে মোট পাঁচটি ক্যাটাগরিতে এই পুরস্কার দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে- জলবায়ু পরিবর্তন ও উদ্ভাবন, সংস্কৃতি ও যোগাযোগ, সামাজিক উন্নয়ন, সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন, দক্ষতা ও কর্মসংস্থান। জলবায়ু পরিবর্তন ও উদ্ভাবন ক্যাটাগরিতে শাহানা আফরিন দিনা (স্টেপ এহেড), আশিকুজ্জামান (ইনিশিয়েটিভ অব কোস্টাল ডেভেলপমেন্ট-আইসিডি), আবদুল্লাহ আল আরাফ (আইডিইবি আইওটি ও রোবটিকস রিসার্চ ল্যাব), সুমন সাহা (বাংলাদেশ সায়েন্স সোসাইটি), মোহাম্মদ শামস জাব্বার (টেক একাডেমি), সানজিদুল আলম সেবন শান (ইকোভেশন বাংলাদেশ) মনোনীত হয়েছেন।
সংস্কৃতি ও যোগাযোগ ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছেন ইউসুফ ইবনে ইয়াকুব (রিফ্লেক্টিভ টিনস), শাহরিয়ার হোসেন বাবলা (চকবোর্ড কমিউনিকেশন), রাতুল দেব (জেন ল্যাব), সুব্রত চাকমা (উজানি যুব শিল্পগোষ্ঠী), মোঃ ইমরান হোসেন (মোহনা সাংস্কৃতিক সংগঠন), গিরিধর দে (বাংলাদেশের দুষ্প্রাপ্য ছবি সমগ্র), অর্ণব দত্ত: (প্রজন্ম)।
সামাজিক উন্নয়ন পর্বে পুরস্কার পেয়েছেন মাহমুদুল হাসান (খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোটারেক্ট ক্লাব), ফারিয়া আঞ্জুম খান ধ্রুবা (ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির রোটারেক্ট ক্লাব), রিগান কুমার কানু (বাংলাদেশ চা সম্প্রদায় ছাত্র যুব পরিষদ), মোঃ নুরুল আলম (মেধাবী কল্যাণ সংস্থা-এমকেএস), জীবন ঘোষ (আমরা তাদের জন্য)।
সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে অবদান রেখে পুরস্কৃত হয়েছেন মির্জা গালিব সতেজ (স্বপ্নের খোঁজে), ফাইরুজ ফাইজাহ বেথার (মনের স্কুল), আনিকা সুবাহ আহমেদ (ইভলিউশন ৩৬০), লামিয়া তানজিন তানহা (ট্রান্সএ্যান্ড), মাশরুর ইশরাক (থার্ড আই), মোহাম্মদ জিহাদুল ইসলাম আল-আজাদ (মনীষা মিম নিপুণ হিজড়া), (পথচলা ফাউন্ডেশন)।
দক্ষতা ও কর্মসংস্থান ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছেন অমিয় প্রপান চক্রবর্তী (ধ্রুবতারা যুব উন্নয়ন ফাউন্ডেশন-উণউঋ), মোহাম্মদ আশিকুল ইসলাম (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মডেল ইউনাইটেড নেশনস এ্যাসোসিয়েশন-ডুমুনা), এসরাত করিম (অমল ফাউন্ডেশন), আরাফাতুল ইসলাম আকিব (স্টার্টআপ চট্টগ্রাম), আবু হাসান (জয়তা পলি) (দিনের আলো হিজড়া উন্নয়ন মহিলা সংস্থা), শিরিন আক্তার আশা (আসমানী যুব নারী ফাউন্ডেশন), অনামিকা সান্যাল (এইচএসটিইউ মজার স্কুল)।
প্রসঙ্গত, দেশের উন্নয়নমূলক কর্মকা-ে তরুণ প্রজন্মকে সরাসরি অন্তর্ভুক্ত করার উদ্দেশে ২০১৪ সালের ১৫ নবেম্বর আত্মপ্রকাশ করে ইয়াং বাংলা প্লাটফর্ম। এই প্লাটফর্ম থেকে তরুণদের ক্ষমতায়ন ও দেশ গঠনে তাদের অবদান তুলে ধরার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তরুণদের কাজের স্বীকৃতির জন্য জয় বাংলা ইয়ুথ এ্যাওয়ার্ড দেয়া হচ্ছে।