মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী ১০ হাজার ৭৮৯ রাজাকারের নামের প্রথম দফা তালিকা প্রকাশ করেছে। আর এই তালিকার মধ্যে রয়েছে নাটোরের ৪৮ জন রাজাকারের নাম। তালিকায় নাটোর সদর এবং সিংড়া উপজেলায় রাজাকারের নামের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। এছাড়াও এই তালিকাতে যাদের নাম উঠে এসেছে তাদের মধ্যে অনেকেই মৃত্যুবরণ করেছেন। অনেকেই এলাকা ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করছেন বলে জানা গেছে। তবে এই তালিকায় নাম থাকায় হতাশ হয়ে পড়েছেন তালিকাভুক্তরা। সরকারের কাছে তাদের দাবী আরো ভাল ভাবে তদন্ত করে সঠিক করে তালিকা প্রকাশ করা হোক।
মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রনালয়ের স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকারের নামের তালিকা প্রকাশের সংবাদের পর থেকেই নাটোরের সিংড়ার মানুষের মাঝে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা কল্পনা। এতো বছর পর তালিকায় যাদের নাম উঠে এসেছে তারাও এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তারা মনে করেন রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে শুধু মাত্র হয়রানী করার জন্য তাদের নাম দেওয়া হয়েছে। এভাবে নাম প্রকাশ করায় সমাজে ও পরিবারের কাছে তাদের সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে বলেও তারা মনে করেন। সরকারের কাছে তাদের দাবী সঠিক ভাবে তদন্ত করে রাজাকারের নামের তালিকা করা হোক।
রাজাকারের তালিকায় নাম প্রকাশ হওয়া সিংড়ার আব্দুর রাজ্জাক খান তিনি কোন দিন রাজাকার ছিলেন না দাবী করে জানান, তিনি হঠাৎ করেই জানতে পারেন তার নাম রাজাকারের তালিকায় এসেছে। তিনি মনে করেন এই সুযোগ নিয়ে কেউ হয়তো সামাজিক,সাংসারিক ও অর্থনৈতিকভাবে তাকে ক্ষতিগ্রস্থ করতেই তার নাম এই তালিকায় দিয়েছেন। সেজন্য তিনি সরকারের কাছে অনুরোধ করেন সঠিক তথ্য নিয়ে রাজাকারের তালিকা তৈরী করার।
আব্দুর রাজ্জাক খানের বড় ভাই ভাই আয়ুব খান জানান, সমাজে তাদের সুনাম ক্ষুন্ন করতেই রাজাকারের তালিকায় তার ভাইয়ের নাম দেওয়া হয়েছে। তিনি দাবী করেন, এই এলাকায় অনেক রাজাকার ছিলেন যারা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট নিয়ে মুক্তিযোদ্ধার কোটা ভোগ করছেন। বুক ফুলিয়ে সমাজে চলাফেরা করছেন। সমাজের প্রতিষ্ঠিতি ভালো মানুষের নাম রাজাকারের তালিকায় দিয়ে তাদের বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। তাদের হয়রানীর করার জন্য এই নাম দেওয়া হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। সরকারের কাছে তার দাবী সঠিকভাবে প্রকৃত রাজাকারের তালিকা তৈরী করা হোক।
তালিকাভুক্ত আর একজন সিংড়ার আবু বক্করের বড় ভাই আসাদুজ্জামান জানান, এভাবে রাজাকারের তালিকায় তার ভ্ইায়ের নাম আসাটাই অত্যন্ত দূঃখজনক। তার নাম তালিকায় দিয়ে অপপ্রচার করা হচ্ছে। শুধু তাই নয় তালিকাভুক্তদের বাবা ও চাচাদের নাম সহ পরিবারের সদস্যদের হয়রানী করা হচ্ছে। এছাড়াও এলাকার আরো যাদের নাম এই তালিকায় দেখা যাচ্ছে তাদের মধ্যে অনেকেই স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকারের মত কোন কিছুর সাথে জড়িত নয়।
তালিকায় নাম উঠা আরেকজন আব্দুর রাজ্জাক বলেন,যারা তার নাম রাজাকারের তালিকায় দিয়েছেন তারা সমাজে তার ভাবমুর্তি নষ্ট করতেই এই তালিকায় নাম দিয়েছেন। এখন তাদের নিজেদেরই অনুতপ্ত হওয়া উচিৎ। তিনি সবসময় স্বাধীনতার পক্ষের মানুষ। সিংড়ার আওয়ামীলীগ নেতা বর্তমান আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের পক্ষে নির্বাচন করেছেন তিনি। পলকের পক্ষে নির্বাচন করে বিরোধী দলের কর্মি হত্যা মামলায় আসামীও হয়েছেন তিনি। এরপর থেকে রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছেন। রাজনীতি থেকে সড়ে আসায় তার নাম দেওয়া হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। শুধুমাত্র প্রতিহিংসা বসত হয়ে এভাবে রাজাকারের তালিকায় নাম দেওয়াটা অত্যান্ত লজ্জাজনক ঘটনা। তিনি মনে করেন এই তালিকা তৈরীর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ করা উচিত।
আব্দুর রাজ্জাকের স্ত্রী জানান, স্বামী রাজাকার ছিলেন এমন কথা তিনি এর আগে শুনে নাই। এখন তিনি মানুষের মুখে জানতে পেরেছেন তার স্বামী রাজাকার। তিনি এ কথা শুনে একেবারেই হতাশ।
মকবুল হোসেন সহ একাধিক এলাকাবাসি জানান, তারা সিংড়ার অনেক রাজাকারের নাম শুনেছেন কিন্তু তাদের নাম এই তালিকায় পাওয়া যায়নি। এছাড়া এই তালিকায় যাদের নাম দেখা গেছে তাদের নাম তারা এর আগে শুনেন নাই। হঠাৎ করে এতো বছর পর এভাবে রাজাকারের তালিকায় সাধারন মানুষের নাম শুনে কোন ভাবেই মানতে পারছেন না তারা। তারা মনে করেন শত্রুতা করে অনেকের নাম রাজাকারের তালিকায় দেওয়া হয়েছে।
সিংড়ার সাবেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আলহাজ্ব সাহাদাৎ হোসেন জানান, তার জানা মতে এলাকার কয়েকজন রাজাকার মুক্তিযোদ্ধা গেজেটে নাম তালিকাভুক্ত করে ভাতা উত্তোলন করে আসছে। এভাবে ভাতা উত্তোলন অবৈধ বলে তিনি দাবী করেন। এছাড়া বর্তমান রাজাকারের তালিকায় কিছু কিছু ব্যক্তির নাম এসেছে যারা রাজাকারের ভুমিকায় ছিলেন না। কিভাবে তাদের নাম রাজাকারের তালিকায় এসেছে তা তিনি জানেন না।
সিংড়ার আর এক মুক্তিযোদ্ধা নাজিমুদ্দিন জানান, মুক্তিযুদ্ধে রাজাকারের ভুমিকায় থাকা অনেকেই এখন টাকা দিয়ে অবৈধভাবে মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার দাবী যাচাই বাছাই করে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার তালিকা বাতিল করে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার তালিকা করা হোক।
সিংড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার মাহাতো জানান, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয় থেকে সারাদেশে রাজাকারের তালিকা তৈরী করা হয়েছে। সেই তালিকায় সিংড়া উপজেলার অনেকজনের নাম উঠে এসেছে। তবে তাদের কাছে এবিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের কোন নির্দেশনা আসেনি। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে তাদের কাছে সরকারী নির্দেশনার কাগজ এসে পৌছানোর পর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে জানান তিনি।