ডেস্ক নিউজ
উত্তরের বিভাগীয় প্রাচীন শহর পদ্মাপাড়ের রাজশাহী। আম, সিল্ক, পান আর কৃষি নির্ভর বরেন্দ্রভূমি। দেশে সবজি আর মাছ চাষের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী জেলা। নগর ও গ্রাম সবখানে লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। এক সময়ের অপেক্ষাকৃত অনুন্নত জনপদ ছিল রাজশাহী।
তবে সময়ের ব্যবধানে উন্নয়নযজ্ঞে এখন পাল্টে গেছে পুরো রাজশাহীর রূপ। বিদ্যুত, সড়ক অবকাঠামো থেকে সবখানে লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। ২৪০৭ দশমিক ১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বিভাগীয় জেলা ও নগর রাজশাহী। এখানে প্রায় ২৪ লাখ মানুষের বসবাস। একটি সিটি করপোরেশন, ৯টি উপজেলা, ১৪টি পৌরসভায় ৬টি সংসদীয় আসন রয়েছে এ জেলায়।
বর্তমান সরকারের সময়ে সবচেয়ে উন্নয়ন দৃশ্য এখন চোখে পড়ার মতো রাজশাহী শহরে। দেশের সবচাইতে বসবাস উপযোগী শহর হিসেবেও খ্যাতি পেয়েছে এরই মধ্যে। নির্মলবায়ুর শহর হিসেবেও স্বীকৃত এ শহর। আর গ্রামের চেহারা পাল্টে শহরের হাওয়া লেগেছে সর্বত্র। বর্তমানে কয়েক হাজার কোটি টাকার উন্নয়নযজ্ঞ চলছে এখানে।
কর্মসংস্থান সৃষ্টি থেকে শুরু করে প্রসার ঘটেছে ব্যবসা বাণিজ্যেও। আর পর্যটন ক্ষেত্রেও নেয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। শহরের উন্নয়নে সর্বস্ব স্বপ্ন দিয়ে মনের মতো করে গড়ছেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। স্থানীয় এমপি ফজলে হোসেন বাদশাও উন্নয়নে ব্রত হয়ে একযোগে রাজশাহীকে এগিয়ে নেয়ার প্রাণপণে চেষ্টা চালিয়ে চালিয়ে ক্রমেই তিলোত্তমা নগরী হিসেবে গড়তে অবদান রাখছেন। তারা আশা করছেন, আগামী ৫ বছরের মধ্যে রাজশাহী নগরী হয়ে উঠবে দেশের অন্যতম বসবাস উপযোগী শহর হিসেবে। বাড়বে কর্মস্থান, পর্যটনের পরিধি। যানজটমুক্ত দেশের একমাত্র শহর হবে রাজশাহী।
গত এক যুগে যেমন পাল্টেছে শহরের রূপ তেমনভাবেই জেগে উঠেছে গ্রামের অবকাঠামোও। গ্রামের রাস্তায় পাড়ি জমালে সুউচ্চ ভবন দেখে মনে হবে শহরের বাইরে আলাদা আলাদা শহর। বর্তমান সরকারের সময়ে জেলায় সবখানে বহুমুখী উন্নয়ন চিত্র লক্ষ্য করা গেছে।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আধুনিক রূপ পেয়েছে জেলার বাগমারা, চারঘাট ও বাঘা উপজেলা। আর জেলার পৌরসভাগুলোর মধ্যে উন্নয়নে এগিয়ে রয়েছে শহরের অদূরে অবস্থিত খাটাখালী। রাজনৈতিক শক্ত অবস্থানের কারণে এক সময়ের জামায়াত বিএনপি ও জঙ্গী অধ্যুষিত জেলা শহর রাজশাহীতে এখন সম্প্রীতি ও সহাবস্থান বিরাজ করছে। রাজনৈতিক দাঙ্গায় জিরো টলারেন্স এ জেলায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহীতে বর্তমানে কয়েকটি মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। এরমধ্যে অন্যতম বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক। যার বেশির ভাগ অংশ এখন দৃশ্যমান। বিশাল কর্মযজ্ঞে মাথাচাড়া দিয়েছে পদ্মাপাড়ের বিশাল বিশাল অবকাঠামো। যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালির আদলে নির্মাণ করা হচ্ছে এটি। ইতিমধ্যে বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্কে শেখ কামাল আইটি ইনকিউবেশন এ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার চালু হয়েছে। হাইটেক পার্ক পুরো চালু হলে তথ্য প্রযুক্তিখাতেই কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে রাজশাহী ভিত্তিক অন্তত ৪০ হাজার তরুণ-তরুণীর। এর পাশাপাশি রাজশাহীর শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় বোটানিক্যাল গার্ডেন ও চিড়িয়াখানায় নির্মিত হচ্ছে দেশের দ্বিতীয় বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার। এসব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের অগ্রগতি এখন প্রায় ৮০ ভাগের বেশি। ২২২ কোটি তিন লাখ টাকা ব্যয় ধরে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার প্রকল্পটি হাতে নিয়েছিল রাজশাহী সিটি করপোরেশন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের এই প্রকল্পটি এখন বাস্তবায়ন করছে গণপূর্ত অধিদফতর। নভোথিয়েটারে আধুনিক প্রযুক্তির ডিজিটাল প্রজেক্টর সিস্টেমযুক্ত প্ল্যানেটরিয়াম, সায়েন্টিফিক এ্যান্ড ডিজিটাল এক্সিবিটস, ফাইভ-ডি সিমিউলেটর থিয়েটার, টেলিস্কোপ, কম্পিউটারাইজড টিকেটিং এ্যান্ড ডেকোরেটিং সিস্টেমসহ নানা সুবিধা থাকবে। ভবন নির্মাণ শেষ হলে দ্রæত অন্যান্য যন্ত্রাংশ সংযোজন হবে নভোথিয়েটারে।
আর সড়ক অবকাঠামো সম্প্রসারিত হচ্ছে এই নগরে। প্রতিটি প্রধান সড়ক উন্নীত হচ্ছে চারলেনে। এরপরেও নগরীতে যানজট নিয়ন্ত্রণে নেয়া হয়েছে মূল নগরে ৫টি ফ্লইওভার নির্মাণ।
রাাজশাহী সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, রাজশাহীকে উন্নত, আধুনিক ও বসবাস উপযোগী নগর হিসেবে গড়ে তুলতে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চলছে। চলতি বছরেই মহানগরীর উন্নয়নে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার সর্ববৃহৎ প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। নগর পাল্টতে এ প্রকল্প মাইলফলক হিসেবে দেখছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন। বৃহৎ এ প্রকল্প বাস্তবায়নে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ। ইতোমধ্যে প্রায় আট শ’ কোটি টাকার দরপত্র আহŸান করা হয়েছে। যার অনেক কাজ চলমান রয়েছে। অনেক অতিদ্রæততম সময়ে শেষ হবে।
এর অংশ হিসেবে রাজশাহী মহানগরীতে নির্মিত হতে যাচ্ছে আরও ৫টি ফ্লাইওভার ও ১৯টি অবকাঠামো উন্নয়ন। সম্প্রতি যার নক্সা প্রণয়ন ও বিস্তারিত প্রকৌশল প্রণয়নে তিনটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে।
রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, করোনার মহামারীর মধ্যেও প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। রাজশাহীতেও উন্নয়ন কাজ চলছে। রাজশাহীর উন্নয়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন। তিনি আশা প্রকাশ করে জনকণ্ঠকে বলেন, আগামীতে আরও ৩/৪ হাজার কোটি টাকার দুইটি প্রকল্প অনুমোদন পাওয়া যাবে।
মেয়র বলেন, রাজশাহীকে আরও উন্নত, আধুনিক ও বসবাস উপযোগী হিসেবে গড়ে তোলা হবে। এই নগরীতে যারা বসবাস করবেন, তারা গর্ববোধ করবেন। শুধু অবকাঠামো উন্নয়ন নয়, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও শিল্পায়নে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বিসিক শিল্পনগরী-২ ও চামড়া শিল্প পার্ক প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে। ২২টি পুকুর অধিগ্রহণ করে পার্কের মতো বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলা হচ্ছে। কয়েকটির কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।
রাজশাহী সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, রাজশাহী নগরীর পদ্মা নদী তীরবর্তী এলাকা সংস্কার ও সৌন্দর্য বর্ধনের উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন করে পদ্মাপাড়ের সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ শুরু করা হবে। যা রাজশাহীবাসীর বহুদিনের দাবি। তবে নদীতীরবর্তী এলাকার একটি বড় অংশ এখন অবৈধ দখলদারদের কাবলে রয়েছে। দখলদারেরা লালনশাহ মুক্তমঞ্চের আশপাশের এলাকা দখল করে অবৈধভাবে গোয়াল ঘর, টয়লেটসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে, দখলদারদের স্বার্থে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে সীমানা প্রাচীরের গ্রিল-নেট।
তবে রাসিকের পক্ষ থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে অনুরোধ জানিয়ে ইতোমধ্যে মাইকিং করা হয়েছে। ইতোমধ্যে পদ্মা তীরবর্তী বাঁধের ধার, ফুটপাথ, রাস্তা বিভিন্ন প্রকার অবৈধ স্থাপনা ও গরু-ছাগল অপসারণে এলাকাবাসীকে অনুরোধ জানিয়েছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ মঙ্গলবার সকালে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের একটি টিম পদ্মাপাড় এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় তারা নিজ দায়িত্বে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে এলাকাবাসীকে অনুরোধ জানিয়েছেন। সিটি করপোরেশনের অনুরোধে ইতোমধ্যে অনেকে নিজ দায়িত্বে অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করেছে। আর যেসব অবৈধ স্থাপনা আছে সেগুলোও দ্রæত সময়ের মধ্যে অপসারণ করতে হবে।
পদ্মাপাড় রাজশাহী মহানগরীর অন্যতম উন্মুক্ত বিনোদন কেন্দ্র। পদ্মাপাড় সংলগ্ন দরগাপাড়ায় অবস্থিত হযরত শাহমখদুম রূপোশ (রহ) মাজার শরীফ। পদ্মাপাড়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে লালনশাহ পার্ক। শাহমখদুম রূপোশ (রহ) মাজার শরীফ ও পদ্মাপাড়ের সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিন ছুটে আসেন দেশ-বিদেশের অসংখ্য দর্শনার্থী। নগরবাসীর বিনোদনের জন্য নগরীর অন্যতম বিনোদন কেন্দ্রকে আরও আকর্ষণীয় ও দৃষ্টিনন্দন করতে উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন। বর্তমানে ২ কোটি ৮৮ লাখ টাকার উন্নয়ন কাজ চলমান আছে শুধু শহর সৌন্দর্যের বিকাশে।
হযরত শাহ মখদুম (রহ) মাজার সংলগ্ন এলাকায় একটি ও পদ্মা গার্ডেন সংলগ্ন এলাকায় আরেকটি ঝুলন্ত ওভারব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন ওভার ব্রিজ দু’টি চলতি বছরের ১৩ ফেব্রæয়ারি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। ব্রিজের সৌন্দর্যবর্ধনে করা হয়েছে নান্দনিক গ্রাফটি।
সড়ক ছাড়াও রেল যোগাযোগে নতুন মাত্রা যোগ করেছে বিরতিহীন বনলতা। রাজশাহী থেকে ঢাকা অভিমুখে এখন আন্তঃনগর কোচ সহজে ভ্রমণ ও রাজধানীর সঙ্গে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। পদ্মা, সিল্কসিটি, ধূমকেতুর পাশাপাশি বিরতিহীন এক জোড়া (বনলতা) ট্রেন চলাচল করে এখন রাজশাহী থেকে। রাজশাহীবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল বিরতিহীন ট্রেন চালু। রাজশাহী-ঢাকা রুটে বিরতিহীন বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচলের মধ্য দিয়ে পূরণ হয়েছে এ অঞ্চলের মানুষের লালিত স্বপ্ন।
মহানগরীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী সোনাদীঘি নতুন রূপ পাচ্ছে। সোনাদীঘির হারানোর ঐতিহ্য ফিরে আনতে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় ‘এনা প্রপার্টিজ’ নামের একটি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ১৬ তলাবিশিষ্ট ‘সিটি সেন্টার’ নির্মাণ ও সোনাদীঘিকে সাজানোর চুক্তি করে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্থাপনা, মসজিদ ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে সোনাদীঘিকে উন্মুক্ত করা হয়েছে। সোনাদীঘি মার্কেট ভেঙ্গে সোনাদীঘিকে উন্মুক্ত করা হয়েছে। এখন চলছে সোনাদীঘির পাড় নির্মাণ মসজিদ নির্মাণ ও উন্নয়ন ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ। সিটি সেন্টারেরও নির্মাণ কাজ শেষ হলে অন্যতম বাণিজ্যকেন্দ্র আর সোনাদীঘি হবে দৃষ্টিনন্দন বিনোদনকেন্দ্র। পুরো চিত্রই পাল্টে যাবে। এতসব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে মানুষ উজ্জীবিত। তারা বলছেন, কল্পনার চেয়েও বেশি উন্নয়ন দৃশ্যমান এখন রাজশাহীতে। তবে হতাশাও রয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে নিম্নমানের কাজ নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে।
রাজশাহীর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে তিনটি শিল্পাঞ্চল অনুমোদন দিয়েছেন। সেগুলো হচ্ছে, বিসিক শিল্পনগরী-২, বিশেষ অর্থনৈতিক জোন ও চামড়া শিল্পপার্ক। এই তিনটি শিল্পাঞ্চলে প্রকৃত উদ্যোক্তাদের প্লট বরাদ্দ প্রদানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এতে কর্মস্থানের নতুন ক্ষেত্র তৈরি হবে অচিরেই।
এ অঞ্চলের বৃহৎ সামাজিক সংগঠন রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, রাজশাহী এখন অনেক আধুনিক শহরের একটি। প্রতিদিনই রূপ পাল্টাচ্ছে এ শহরের। তিনি বলেন, উন্নয়নকাজ তদারকি করে গুণগত মান নিশ্চিত করতে পারলেই টেকসই হয়ে উঠবে এ শহরের অবকাঠামো।
রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, বর্তমান সরকারের সময়ে নানাভাবে নগরীর উন্নয়ন হয়েছে। যা এখন দৃশ্যমান। তিনিও সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন নগর অবকাঠামো উন্নয়নে। শিক্ষার উন্নয়ন থেকে বহুমুখী কর্মযজ্ঞে অচিরেই রাজশাহীর চেহারা পাল্টে যাবে বলে মনে করেন এমপি ফজলে হোসেন বাদশা।
এদিকে রাজশাহী নগর উন্নয়নের পাশাপাশি জেলার উপজেলাগুলোতেও লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। জেলার উন্নয়নে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের নির্বাচনী এলাকা চারঘাট বাঘা। এই দুই উপজেলার মানুষ এখন আধুনিক সব সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি বলেন, মহামারী করোনার পরিস্থিতিতেও বর্তমান সরকার উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখেছে। তারই ধারাবাহিকতায় রাজশাহীর চারঘাট-বাঘায় এ ধারাও অব্যাহত রয়েছে। রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যে উন্নয়ন চলমান উন্নয়ন চলছে এসব বাস্তবায়ন হলে দুই উপজেলার সবগ্রাম হয়ে উঠবে শহর। ইতোমধ্যে এ দুই উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুত সুবিধা পৌঁছে গেছে। সড়ক অবকাঠামো কাজ ৮০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে।
এদিকে রাজশাহী জেলার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত বাগমারা উপজেলা। সবচেয়ে বড় উপজেলা বাগমারায় প্রায় চার লক্ষাধিক লোকের বাস। বাংলার বার ভূঁইয়ার স্মৃতি বিজড়িত জনপদটি ধর্মীয় কারণেও তাৎপর্য বহন করে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গা উৎসবের আদি স্থান হিসাবে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনেও রয়েছে এ জনপদের রক্তাক্ত অবদান। ১৯৮৩ সালে বৃহত্তর এই জনপদটি উপজেলার মর্যাদা পেলেও দীর্ঘদিন উন্নয়নের ছোঁয়া বঞ্চিত রয়ে যায়। বিএনপি ও জামায়াত জোট সরকারের ৫ বছরের দুঃশাসনে বাগমারায় উত্থান ঘটে ‘বাংলা’ ভাইয়ের যা বাগমারাকে একটি রক্তাক্ত ও সন্ত্রাসীর জনপদ হিসাবে পরিচিত করে। বিগত ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইঞ্জনিয়ার এনামুল হক সংসদ সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার পর বাগমারার মানুয়ের আশা-আকাক্সক্ষার লালিত স্বপ্ন-একটি সমৃদ্ধ ও বাসযোগ্য ‘বাগমারা বিনির্মাণে’ সার্বিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
গত একযুগে রাস্তাঘাট নির্মাণ, বিদ্যুতায়ন, শিক্ষা, ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন এবং জনগণের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাকরণসহ সার্বিক উন্নয়ন কর্মকাÐ সাধিত হয়েছে। সম্মিলিত ও সার্বিক প্রচেষ্টায় বাগমারা এখন তার ‘রক্তাক্ত অতীত’ গøানি ছাপিয়ে শিক্ষা ও শান্তির জনপদে পরিণত হয়েছে এবং জাতীয় পর্যায়ে উন্নয়নের ‘রোল মডেল’ স্বীকৃতি পেয়েছে।
জোট সরকারের স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকাণ্ডর ফলে স্বাধীনতার চেতনা অনেকটাই ম্নান হতে চলেছিল। এ উপলব্ধি থেকে বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি, আদর্শ ও রাজনৈতিক দর্শনসহ স্বাধীনতার ইতিহাসকে ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে সঠিকভাবে তুলে ধরাসহ জাতির জনকের অবদানকে স্মৃতিতে অম্নান করে ধরে রাখতে সাংসদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে বাগমারা উপজেলা সদর ভবানীগঞ্জে ছয়তলা বিশিষ্ট বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়েছে। কমপ্লেক্সটি ইতোমধ্যে দেশের বুদ্ধিজীবী মহলসহ সর্বস্তরের প্রশংসিত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদচারণায় মুখরিত হয়েছে।
বর্তমান সরকারের আমলে বাগমারায় শিক্ষার মান উন্নয়ন ও বিস্তারে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। শিক্ষার প্রসারে নতুন নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন এবং বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়ন সম্পন্ন হয়েছে।
বাগমারা উপজেলাকে একটি ডিজিটাল মডেল উপজেলায় রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে কাজ চলছে। বাগমারায় উন্নয়নের একটি বড় সাফল্য হলো বিদ্যুতায়ন। বিএনপি জোট সরকারের আমলে ২০০৮ এর আগে বাড়িতে বিদ্যুত লাইনের সংযোগ ছিল ১৫ ভাগের কম। এমপি এনামুল হকের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বর্তমানে শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলায় পরিণত হয়েছে। রাজশাহীর কাটাখালীতে ব্যক্তিগত উদ্যোগে স্থাপিত নর্দান পাওয়ার সল্যুশন হতে উৎপাদিত ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত হতেও বাগমারাবাসী সুফল পাচ্ছে। বর্তমান সরকারের ‘কৃষকবান্ধব’ কৃষি নীতির ফলে খাদ্য শস্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনসহ কৃষি ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সফলতা অর্জিত হয়েছে।