ডেস্ক নিউজ
কুড়িগ্রামের উলিপুরে তিস্তার ধু-ধু বালুচরে আলুর ব্যাপক চাষাবাদ হয়েছে। বিস্তীর্ণ চরজুড়ে শুধু আলু আর আলু। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ক্ষেতে রোগ বালাই কম হওয়ায় এবার আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। গত বছরে কয়েকদফা বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিয়ে আলু চাষে ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্ন বুনছেন চরাঞ্চলের চাষিরা।
সম্প্রতি সরেজমিনে তিস্তা নদীবেষ্টিত উপজেলার চর জুয়ান সতরা, চর খারিজা, গোড়াইপিয়ার চর, চর রামনিয়াসা সহ কয়েকটি চর ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন বয়সী মানুষ আলু তুলতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। ২৫০-৩০০ টাকা মজুরিতে পুরুষ শ্রমিকের পাশাপাশি, ১৫০ টাকা মজুরিতে নারী ও বিভিন্ন বয়সী শিশু-কিশোররাও শ্রম বিক্রি করছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, চলতি বছর এ উপজেলায় ৯৫২ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ণয় করা হলেও ৮৪৫ হেক্টর অর্জিত হয়। এর মধ্যে কার্ডিনাল ৩২৫, ডায়মন্ড ৪৫, এস্টেরিক্স ১৬০, গ্রেনুলা ৯৫, লাল পাকড়ি ৮৫ ও বগুড়াই ১৩৫ হেক্টর। তবে গত বছর ৭৫০ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও অর্জিত হয়েছিল ৮৮৫ হেক্টর।
উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের কিশোরপুর গ্রামের চাষি আব্দুল মতিন। প্রতিএকর ১০-১৫ হাজার টাকায় চুক্তি নিয়ে সাড়ে ১৮ একর জমিতে আলু চাষ করেছেন। গত বছর আলু চাষে প্রায় ৩ লাখ টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হন। তবে এবারে ফলন ভালো হওয়ায় লাভের আশা করছেন তিনি। আব্দুল মতিন জানান, আবহাওয়া ভালো থাকায় আলুর ফলন ভালো হয়েছে। তবে শ্রমিক সংকট। এখন কাঙ্ক্ষিত দাম না থাকায় হিমাগারে (কোল্ড স্টোরেজ) রাখা হচ্ছে। দাম ভালো হলে কয়েক লাখ টাকা আয় হবে তার।
দলদলিয়া ইউনিয়নের অর্জুন গ্রামের চাষি আনারুল ইসলাম দুই একর জমিতে আলু চাষ করেছেন। প্রতিশতক জমিতে আলু চাষে খরচ হয়েছে তার এক হাজার টাকা। আনারুলের স্ত্রী শাহের বানু জানান, ‘গতবার আলু আবাদ করি হামরা অনেক লস খাইছি। এবার লাভের আশায় আলু চাষ করছি। ফলনও ভালো। দাম ভালো পেলে গতবারের লস উঠে আসবে। ‘
দড়ি কিশোর পুর গ্রামের আশরাফুল জানান, ৮ একর জমিতে আলু চাষাবাদ করেছি। খরচ হয়েছে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টাকা। এর আগে আগাম জাতের আলু চাষ করে আকস্মিক বন্যায় ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে। তবে এ বছর লাভের আশা করছেন তিনি।
চর গোড়াইপিয়ারের চাষি শহিদুল ইসলাম বলেন, বীজ রোপণ থেকে শুরু করে আলু তোলা পর্যন্ত প্রতিকেজি আলুতে প্রায় ১০ টাকা খরচ হয়েছে। এখন ক্ষেত থেকে আলু তুলে কোল্ড স্টোরেজ পর্যন্ত যেতে প্রতি বস্তায় খরচ হচ্ছে ৭৫-৮০ টাকা। গত মৌসুমে ৫০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে তার।
আলুর চাষাবাদকে ঘিরে চরাঞ্চলের মানুষের মাঝে কর্মচাঞ্চল্য বেড়ে গেছে। বিভিন্ন বয়সী নারী ও শিশুরা আলু তোলার কাজ করে বাড়তি আয় করছেন। প্রায় ২ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলে তাদের এ কাজ। বয়স অনুযায়ী মজুরি নির্ধারণ করেন চাষিরা।
দৈনিক ২০০ টাকার মজুরিতে আলু তোলার কাজ করেন এসএসসি পরিক্ষার্থী শাকিল মিয়া। তার সাথে কাজ করেন বাবু মিয়া (১৩), শিমুল মিয়া (১১) হাফিজুর রহমান (১৩)। এরা সবাই বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। জানতে চাইলে তারা বলেন, অভাবের সংসার। লেখাপড়ার পাশাপাশি আলুর বীজ রোপণ ও আলু তোলার কাজ করি। এসব কাজে তেমন শক্তির প্রয়োজন হয় না, ভালো টাকাও আয় হয়। এতে করে আমাদের পড়ার খরচের পাশাপাশি পরিবারে সহযোগিতা করতে পারি।
এ সময় ঘোড়ার গাড়ির মালিক (গাড়িয়াল) সাগর মিয়া, আব্দুল কুদ্দুস, হাসান আলী জানান, প্রতিবস্তা ২০ টাকা দরে চর থেকে আলুর বস্তা নদীর ঘাটে পৌঁছে দিই। সারাদিনে ৭-৮ ট্রিপ (খ্যাপ) দিতে পারি। এতে অন্য ভাড়ার তুলনায় আয় ভালো হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, এবার তুলনামূলকভাবে শীত কম হওয়ায় আলুর নাবি ধসা (নেট ব্লাইট) রোগ কম হয়েছে। এ ছাড়াও কৃষকদের গ্রুপভিত্তিক পরামর্শ দিয়ে সুষম সার ও ছত্রাকনাশক ওষুধ প্রয়োগ করায় আলুর ফলন ভালো হয়েছে। আশা করি এতে করে কৃষকরা লাভবান হবেন।