ডেস্ক নিউজ
অর্থের জোগান পেলে প্রকল্পের কাজ শুরু
উত্তরাঞ্চলের স্থায়ী আর্থিক সমৃদ্ধি অর্জনে তিস্তা নদীকে নিয়ে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে। সহজ শর্তে অর্থের জোগান পেতে চীন সরকারকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মিজানুর রহমান বিষয়টি সুনিশ্চিত করেছেন।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মিজানুর রহমান জানান, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দিয়ে তার দফতরকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে পরিকল্পনা, ড্রইং, ডিজাইন করেছে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয় সব কিছু বিশ্লেষণ করেছে। তারা চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। এখন অর্থের জোগান হলে আন্তর্জাতিক টেন্ডারের মাধ্যমে তিস্তা নদীকে নিয়ে মহাপরিকল্পনার কাজ শুরু হয়ে যাবে। বর্তমান সরকারের আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করার সকল আয়োজন চলছে। একমাস আগে বাংলাদেশ সরকারের মাধ্যমে চীন সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়ে অর্থের জোগান দিতে বলা হয়েছে। দুই দেশের কূটনৈতিক পর্যায়ে সফলভাবে আলোচনা চলছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকার যেমন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করতে আগ্রহী, তেমনি চীন সরকারও অর্থ দিতে আগ্রহী। তিস্তা প্রকল্পটি দেশের জন্য একটি লাভজনক প্রকল্প হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দারিদ্র্যপীড়িত জেলা লালমনিরহাটকে অর্থনৈতিকভাবে স্থায়ী সমৃদ্ধশালী করতে তিস্তা নদীকে ঘিরে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছেন। এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা। প্রকল্প পরিকল্পনা ও নদী পর্যবেক্ষণ কাজটি দুই বছর ধরে মাঠ পর্যায়ে করেছে চায়নার প্রতিষ্ঠান চায়না পাওয়ার ও চায়না রিভার ইয়েলো। প্রকল্পটি হবে আধুনিক, দৃষ্টিনন্দন ও যুগোপযোগী। তিস্তা নদীর ডান ও বাম তীর মিলে ২২০ কিলোমিটার উচুঁ গাইড বাঁধ, দুই পাড়ে বাঁধের পাশে থাকবে সমুদ্র সৈকতের মতো রিভার ড্রাইভ, হোটেল, মোটেল, রেস্টুরেন্ট, পার্ক, বিনোদন স্পট, ১৫০ মেগাওয়াটের সৌরবিদ্যুত কেন্দ্র, আধুনিক কৃষি খামার, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, আধুনিক শহর (দুই পাড়ে), ভারি-মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান, পোশাক কারখানা, ইপিজেড, ইকোনমিক জোন, মিঠাপানি শোধনাগার, পানি ও নদী রিসার্চ সেন্টার, তথ্যপ্রযুক্তি কেন্দ্র, বিদেশী পর্যটকদের টানতে এক্সক্লুসিভ পর্যটন জোন, উদ্ধার করা হবে কয়েক লাখ হেক্টর কৃষি জমি, মূল নদীর প্রবাহ থাকবে মাত্র দুই কিলোমিটার, করা হবে নদী ভাঙ্গন রোধে, গৃহহীনদের থাকবে আবাসস্থল, সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীদের থাকবে সরকারী বাসভবন ও কোয়ার্টার, প্রকল্পজুড়ে থাকবে পরিকল্পিত বন সৃজন, দেশী বিদেশী ফলদ ও বনজ বৃক্ষ, থাকবে ঔষধি বৃক্ষ, দেশী বিদেশী ফুল গাছ প্রভৃতি। এছাড়াও থাকবে নদীর মূলস্রোত ধারা ও প্রাকৃতিক স্রোতধারার সঙ্গে খাপ খাইয়ে দুই পাড়ে কয়েকটি ছোট ছোট শাখা (চ্যানেল)। যা একটু ঘুরিয়ে পুনরায় মূলধারায় সংযোগ করা হবে।
এতে করে নদীর ভাঙ্গন স্থায়ীভাবে রোধ করা যাবে। গড়ে তোলা হবে সকল আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন নগর। রিভার ড্রাইভে পর্যটক আকর্ষণ করতে লং ড্রাইভের ব্যবস্থা থাকবে। নদীর ছোট ছোট চ্যানেলগুলোতে পর্যটক আকর্ষণে থাকবে স্পিডবোট, সী ট্রাক, ভ্রমণতরী, নৌকা। গড়ে তোলা হবে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং মিউজিয়াম। একই সঙ্গে নদীর জীববৈচিত্র্য রক্ষা, পরিবেশ রক্ষা, হলরুম, ডিজিটাল থ্রি ডি সিনে প্লেক্স, আধুনিক শপিং মল প্রভৃতি।
লালমনিরহাট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট মোঃ মতিয়ার রহমান জানান, প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক ইচ্ছায় এই তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা আধুনিক সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ার একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করার উদ্দেশ্য হচ্ছে রংপুরসহ গোটা উত্তরাঞ্চলে আর কখনও যেন মঙ্গা বা মৌসুমি কর্মসংস্থান সঙ্কট না হয়। কখনও যেন উত্তর জনপদের মানুষকে দুঃখ, কষ্টে, আর্থিক অনটন ও মঙ্গার মধ্যে পড়তে না হয়।
এদিকে ভারত সরকারের সঙ্গে তিস্তা নদীর ন্যায্য পানি বণ্টনের হিস্যা পেতে ২৬ মার্চ চুক্তি হতে পারে বলে জানা গেছে। ২৬ মার্চ বাংলাদেশ সফরে আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী উপলক্ষে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় সফরে আসছেন। অন্য দেশের বিশ্ব নেতারাও আসছেন। ২০১১ সালে তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তিস্তা নদীসহ অভিন্ন ছয়টি নদীর ন্যায্য পানি বণ্টন হিস্যা নিয়ে চুক্তির সকল আয়োজন চূড়ান্ত হয়েছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর অনাগ্রহের কারণে তিস্তা পানি চুক্তি বাস্তবায়নে সফলতার মুখ দেখতে পারেনি। সব ঠিকঠাক থাকলে এবারে সেই তিস্তা নদীর পানি বণ্টন হিস্যা চুক্তি চূড়ান্ত বাস্তবায়ন হতে পারে। আওয়ামী লীগ সরকার ও বিজেপি সরকার সেই আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করছে। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে অবস্থিত। দক্ষিণ এশিয়ার নাভী বলা যায় বাংলাদেশকে। তার মধ্যে লালমনিরহাটের অবস্থান আরও গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে।