ডেস্ক নিউজ
তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীকে (হিজড়া) সমাজের মূলধারায় আনতে বাজেটে কর ছাড় দিতে যাচ্ছে সরকার। এই বিষয়ে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে একটি ঘোষণা থাকবে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে সরকার প্রতিবন্ধীদের নিয়োগের ক্ষেত্রে এ ধরনের সুবিধা দিয়েছিল।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামীতে শিল্পপ্রতিষ্ঠান বা অফিসে তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিকে চাকরি দিলে নিয়োগকারী কর্তৃক্ষপ কর ছাড় পাবেন। করোনাভাইরাস মহামারিতে লন্ডভন্ড গোটা বিশ্বের অর্থনীতি। এই ধাক্কা লেগেছে বাংলাদেশেও। প্রথম ধাপে করোনার প্রভাব কাটিয়ে না উঠতেই আঘাত হেনেছে ‘সেকেন্ড ওয়েভ’ বা দ্বিতীয় ঢেউ। এই পরিস্থিতিতে কর্মসংস্থান সংকুচিত হলে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী আরও পিছিয়ে যাবে। তাই বিশেষ সুবিধা দিয়ে তাদের সামনে রাখার চেষ্টা করছে সরকার।
বর্তমানে কোনো প্রতিষ্ঠানে মোট জনবলের ১০ শতাংশ প্রতিবন্ধী নিয়োগ দিলে সে প্রতিষ্ঠানের মোট করের করের ৫ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়। আগামী অর্থবছরে তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিদের নিয়োগের ক্ষেত্রে একই রকম সুবিধা দেওয়া হবে। কোনো প্রতিষ্ঠান বছরের পুরো সময় মোট জনবলের ১০ শতাংশ বা ১০০ জনের বেশি তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে চাকরি দিলে প্রদেয় করের ৫ শতাংশ রেয়াত দেওয়া হবে।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের জরিপ মতে, দেশে তৃতীয় লিঙ্গের জনসংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। তবে বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা সমিতির তথ্য অনুযায়ী, তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীকে নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও দেশে এখনো তাদের সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী দেশের মোট জনসংখ্যার ক্ষুদ্র অংশ হলেও আবহমানকাল থেকে এ জনগোষ্ঠী অবহেলিত। সমাজে বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার এ জনগোষ্ঠীকে অর্থনীতির মূলধারায় আনা দরকার। যাতে তারা দেশের উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারবে। তাই তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীকে চাকরি দিলে বাজেটে কর ছাড় সুবিধা রাখা হচ্ছে। এ পদক্ষেপের ফলে তৃতীয় লিঙ্গের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে এবং তাদের সম্পর্কে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হবে। আর কর্মসংস্থান হলে মানুষের বাসাবাড়ি বা রাস্তা-ঘাটে তাদের উপদ্রম্নপ কমবে।
তারা বলছেন, তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীও চাঁদাবাজি কিংবা হাত পেতে জীবিকা চালাতে চায় না। তারা চায় স্থায়ী কর্মসংস্থানের সুযোগ। কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই বলেই তাদের চাঁদাবাজি কিংবা বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা নিতে হয়।
বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা সমিতির তথ্য ভ্যষ্য হচ্ছে, বিশেষ এই জনগোষ্ঠীর বিদ্যমান অবস্থা বিবেচনা করে তাদের কল্যাণে কোনো জাতীয় পরিকল্পনা বা সময়সীমাভিত্তিক পদক্ষেপ নেওয়ার আগে তাদের সঠিক পরিসংখ্যান জানা জরুরি। নয়তো পরিল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এমনকি আদম শুমারিতেও তাদের অন্তর্ভুক্ত করা যায়নি। তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে হিজড়া জনগোষ্ঠী স্বীকৃতি পেলেও তা সাংবিধানিকভাবে পূর্ণতা পায়নি। আবার যতটুকু স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে তার মধ্যেও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ব্যাংক ঋণ দেওয়ার বিধান থাকলেও তারা ঋণসুবিধা পাচ্ছেন না। তাদের বিষয়ে প্রত্যেকেরই যার যার অবস্থান থেকে দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণের পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।
গত কয়েক বছরে এ জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে তেমন কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি। তাদের ট্রাফিক পুলিশে চাকরি দেওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কাউকে চাকরি দেওয়া হয়নি। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে সামাজিকভাবে গ্রহণ না করার কারণেই চিকিৎসা, শিক্ষা, কর্মসংস্থানসহ নানা স্থানে বিভিন্নভাবে তাদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে হিজড়া জনগোষ্ঠীর অধিকার তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশ থেকে বেশি আইনগত অধিকার নিশ্চিত হয়েছে।