ডেস্ক নিউজ
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে দেড় বছরের কর্মপরিকল্পনা বা রোডম্যাপ তৈরি করছে নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে এ নির্বাচন অনুষ্ঠানের টার্গেট নিয়ে ‘রোডম্যাপ’ প্রস্তুত করা হচ্ছে। রাজনৈতিক দল ছাড়া অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সংলাপ শেষ করেই জুনে এই রোডম্যাপ চূড়ান্ত করা হবে। এরপরে রোডম্যাপ নিয়ে জুলাইয়ে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে বসবে ইসি। এবারের রোডম্যাপে সাত থেকে আটটি করণীয় রাখা হচ্ছে। এর মধ্যে আগামী বছরের মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে নতুন রাজনৈতিক নিবন্ধনের কাজ শেষ করার পরিকল্পনা নিচ্ছে ইসি। আগামী ১৫ থেকে ২১ জুন জনশুমারির তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষ হলে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। এক্ষেত্রে ৩০০ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের কার্যক্রম আগস্ট থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
এদিকে ধারাবাহিক সংলাপের তৃতীয় ধাপে পত্রিকার সম্পাদক, কলামিস্ট ও সিনিয়র সাংবাদিকদের সংলাপে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন বলেছেন, অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু করতে সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করবেন তারা। সুষ্ঠু নির্বাচন করার প্রয়াসের কোনো ত্রুটি থাকবে না।
ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নির্বাচনী রোডম্যাপে সাধারণত সাত থেকে আটটি বিষয়ে থাকতে পারে। তবে সংলাপে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে নির্ধারণ হবে রোডম্যাপের করণীয় বিষয়। আগামী ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে সবার অংশগ্রহণে সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করার পরিকল্পনা নিয়ে ধারাবাহিক সংলাপ চলছে। এ ছাড়া রোডম্যাপে আইনি কাঠামো পর্যালোচনা ও সংস্কারের বিষয় থাকবে। নির্বাচন প্রক্রিয়া সহজ ও যুগোপযোগী করা; ইভিএমে ভোট গ্রহণ; সংসদীয় এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণ; ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও সরবরাহ; বিধিবিধান অনুসরণপূর্বক ভোট কেন্দ্র স্থাপন; নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন ও নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নিরীক্ষা এবং সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট সবার সক্ষমতা বৃদ্ধি করার কার্যক্রম গ্রহণের নির্ধারিত টাইমফ্রেম থাকবে। জানা গেছে, জুনের মধ্যে নির্বাচনী রোডম্যাপ তৈরি হলে জুলাই থেকে ধারাবাহিকভাবে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ শুরু করবে কমিশন। রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ শেষ করে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট আইন আরপিও ও অন্যান্য আইন এবং বিধিমালা সংশোধন কার্যক্রম শুরু করা হবে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আইন সংস্কারের প্রাসঙ্গিক খসড়া প্রস্তুত করা হবে। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে আইন প্রণয়নের ব্যবস্থা করবে সংশ্লিষ্ট কমিটি। এ ছাড়া আগামী ২০ মে থেকে দেশব্যাপী ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ শুরু করছে ইসি। এই ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শেষ করে আগামী বছরের ২ মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। সেই ভোটার তালিকা দিয়ে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন নির্বাচনী সংলাপ শুরু করেছেন। গত ১৩ মার্চ প্রথম দফায় শিক্ষাবিদ, ২২ মার্চ দ্বিতীয় দফায় বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে এবং তৃতীয় দফায় ৬ এপ্রিল সাংবাদিকদের সংলাপ করেছে ইসি। এরপরে ধারাবাহিক এ সংলাপ চলতে থাকবে।
বিগত নূরুল হুদা কমিশন ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নিয়ে ১৬ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে একাদশ সংসদ নির্বাচনের (কর্মপরিকল্পনা) রোডম্যাপ ঘোষণা করেছিল। এরপরে ওই বছরের ৩১ জুলাই সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়ের মাধ্যমে সংলাপের যাত্রা শুরু করেছিল। তবে হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নতুন নির্বাচন কমিশন এবারে সংলাপের পরে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ করার কথা বলছে। ইসি জানিয়েছে, তারা পর্যায়ক্রমে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা, নারী নেত্রী, নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সংলাপ শেষ করে রোডম্যাপ প্রস্তুত করবে। এরপরে রোডম্যাপ নিয়ে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগে নির্বাচনী রোডম্যাপের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন মো. আলমগীর বলেছেন, অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ তথা আলাপ-আলোচনা করার পরেই তারা নির্বাচনী কর্মপরিকল্পনা ঠিক করবেন। তিনি বলেন, সংলাপ শেষে আমরা কর্মপরিকল্পনার একটি খসড়া করব। এরপরে তা নিয়ে আবার আলাপ-আলোচনা হবে। সেটা কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, সেটা বিশ্লেষণ করব। এরপরেই চূড়ান্ত করা হবে সেই কর্মপরিকল্পনা। আমাদের মেয়াদকালে যে সব কাজ করা সম্ভব আমরা কর্মপরিকল্পনায় সেইগুলোই বেছে নেব। তিনি বলেন, যেগুলো আইনকানুন সাপোর্ট করে আমরা সেগুলো করব। এরপরে দেখব যদি কোনো আইনকানুন পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়, তবে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আইনকানুন পরিবর্তনের সেই প্রস্তাবনা দেব।
সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে বসব। আমরা চাই রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে বসব একটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন বিষয় (রোডম্যাপ) নিয়ে, যে আমরা কী করতে চাচ্ছি। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দল ছাড়া অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের চাওয়া এবং আমাদের যে সক্ষমতা আছে তা মিলে আমরা একটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পিকচার তথা আইডিয়া (রোডম্যাপ) তৈরি করব। আর সেই আইডিয়া নিয়েই আমরা নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসব।
ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিকে বা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে। এক্ষেত্রে চলতি বছরের জুন-জুলাইয়ে রোডম্যাপ ঘোষণা হলে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ইসির হাতে প্রায় দেড় বছর সময় থাকবে। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কে এম নূরুল হুদা কমিশনের বিদায়ের পর গত ২৭ ফেব্রুয়ারি হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন শপথ নেয়। নতুন কমিশন দায়িত্ব দেওয়ার পরে দেশের বিশিষ্টজন ও নির্বাচন বিশ্লেষকরা নতুন কমিশনের কাছে নানা প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন। বিশ্লেষকদের মতে, গত দুটি কমিশন দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। বিনাভোটে নির্বাচিত হওয়ার সংস্কৃতি তৈরি হচ্ছে। জনগণ ভোট কেন্দ্রমুখী হচ্ছে না। রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা হারিয়েছে। তারা বলছেন, আস্থার সংকট নিরসন করা নতুন কমিশনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এই সংলাপ আস্থা অর্জনে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।