নিজ দলের নেতার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ এনে আমরণ অনশনে বসেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক জলি তালুকদার। পল্টনে মুক্তি ভবনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পঞ্চম তলায় গত কয়েকদিন ধরে অভিযুক্ত নিপীড়ক জাহিদ হোসেন খানের শাস্তির দাবিতে অনশন করে যাচ্ছেন তিনি। যদিও এখনও জলি তালুকদার দলীয়ভাবেই ন্যায়বিচারের দাবিতে গণমাধ্যমকে কিছু জানাতে আগ্রহী নন। তবে পার্টি অফিসে অনশনে বসলেও সিপিবি প্রধান মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম কিছুই জানেন না বলে এড়িয়ে যান।
রবিবার (২০ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টার দিকে সিপিবির কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, অফিসের ফ্লোরে মাদুর বিছিয়ে শুয়ে আছেন জলি তালুকদার। তার মাথার পাশে দুইটি প্ল্যাকার্ডে লেখা আছে— ‘সংখ্যাগরিষ্ঠাতার জোরে ঢাকা কমিটি নিপীড়কের পক্ষ নিয়ে আমার প্রতি যে অন্যায় ট্রায়াল চালিয়েছে, তার বিচার চাই। নিপীড়কের বিচার না হওয়া পর্যন্ত অনশন চলবে।’
সিপিবর সূত্রে জানা গেছে, দলের ঢাকা মহানগর কমিটির সদস্য জাহিদ হোসেন খানের বিরুদ্ধে নিপীড়নের অভিযোগ তুলে তার শাস্তির দাবিতে গত ৩ মার্চ দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন জলি তালুকদার। অভিযোগে বলা হয়- ‘গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমাবেশে যোগ দিতে মুক্তি ভবন থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের দিকে যাওয়ার সময় পার্টির মিছিলে জাহিদ হোসেন খান আমার সঙ্গে যে ন্যাক্কারজনক নিপীড়নের ঘটনা ঘটিয়েছে, সে বিষয়ে স্পষ্টভাবে আমি আমার বক্তব্য সেই মিছিলে উপস্থিত কমরেড আবদুল্লাহ কাফী রতনকে আনুষ্ঠানিকভাবেই অবহিত করেছি। সেই সঙ্গে আমি তাকে অনুরোধ করেছিলাম— এই নিপীড়ন বিষয়ে আমাকে বারবার জিজ্ঞাসাবাদের মধ্য দিয়ে নিজেরা যেন কোনও অসুস্থ চর্চা না করেন এবং আমাকেও নির্যাতনের মধ্যে না ফেলেন। কিন্তু আমি স্তম্ভিত, মর্মাহত এবং উদ্বিগ্ন এই দেখে যে, কেউ কেউ এই ঘটনাটাকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে ভয়ঙ্কর নোংরামিতে লিপ্ত হয়েছে।’
অভিযোগে আরও বলা হয়, ‘গত ১ মার্চ ঢাকা কমিটির সভায় আমার অভিযোগকে পাশ কাটিয়ে পার্টির শান্তিনগর শাখার সম্পাদকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তার কেন শাস্তি হবে না এই মর্মে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে শোকজ নোটিশ প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওই দিন জাহিদের সেই ইতর প্রকৃতির জঘন্য আচরণের প্রতিবাদ সিপিবি শান্তিনগর শাখার সভাপতি ও সম্পাদক প্রেসক্লাবের সামনে করেছিল।’
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, ‘আজ এই বয়সে এসে, পার্টির মিছিলে পার্টির লোক আমাকে এভাবে হয়রানি করতে হবে এমন মনোভাব পোষণ করে। আবার সেটাই আমাদের চুপচাপ দেখতে হবে! আমাদের ছোট মিছিলটাতে সেদিন কোনও ধাক্কাধাক্কি হুড়াহুড়ির পরিস্থিতি ছিলো না। ব্যানারে আমার পাশে দাঁড়ানো জাহিদকে দুইবার মৌখিকভাবে সতর্ক করেছি, তার পরেও কয়েক মিনিট ধরে সে আমার সঙ্গে একই আচরণ করে গেছে এবং আমি ব্যানার ছেড়ে চলে আসতে বাধ্য হয়েছি। কেন্দ্রীয় কমিটির প্রতি আমার আহ্বান থাকলো, একজন অপরাধীকে বাঁচানোর জন্য যারা এই ষড়যন্ত্রমূলক কৌশল নিয়েছে, তাদের ব্যাপারেও যথাযথ সিদ্ধান্ত নেওয়া পার্টির কর্তব্য। পার্টি যেন সে কর্তব্য পালনে পিছপা না হয়।’
গত ৬ মাসের বেশি সময় নিপীড়কের বিচার না করে উল্টো অভিযোগকারীকে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জলি তালুকদার বলেন, ‘এটা একেবারে আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমার বিশ্বাস আছে যে, এই অভ্যন্তরীণ বিষয়টি আমরা নিজেরাই সমাধান করতে পারবো। সেই কারণে এটা বাইরে যাক চাচ্ছি না। আমি নিজেও কমিউনিস্ট পার্টির গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আছি, নিজেরাই এটা সমাধান করতে পারবো বলে আশা করি। আসলে এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।’
সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে ভালো করে বলতে পারবো না। আপনি জলিকে জিজ্ঞাসা করেন। আমার ঠিক জানা নেই।’