ডেস্ক নিউজ
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন আরফানুল হক রিফাত। তিনি কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের সভাপতি। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঐক্যবদ্ধভাবে দল মনোনীত প্রার্থীকে বিজয়ী করতে কাজ করার জন্য দলের নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন।
শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার সরকারী বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের ‘স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ড’-এর সভায় আলোচনা শেষে এই সিদ্ধান্ত হয়। রাতে মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক জনকণ্ঠকে মেয়র পদে রিফাতকে দলীয় মনোনয়ন দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপি ও দলটির নেতাদের নানামুখী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দেশবাসী ও জনগণকে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ভাল রয়েছে। দেশের মানুষও ভাল রয়েছেন। কিন্তু একটি মহল দেশকে নিয়ে হায়-হুতাশ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন। যারা এটি করছেন, তারা উদ্দেশ্যমূলকভাবেই করছেন। এদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ও সতর্ক থাকতে হবে।
বিকেল সাড়ে চারটা থেকে শুরু হওয়া বৈঠকে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাড়াও বোর্ডের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফরউল্লাহ, ড. আবদুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অব) মুহাম্মদ ফারুক খান, রমেশ চন্দ্র সেন, রশিদুল আলম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, আবদুস সোবহান গোলাপ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
কুমিল্লা সিটিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে ১৪ জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমা দিয়েছিলেন। যাচাই-বাছাই শেষে মনোনয়ন বোর্ড তাদের মধ্য থেকে দলের ত্যাগী নেতা আরফানুল হক রিফাতকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করে। কুসিক নির্বাচনে রিফাত মেয়র পদে নৌকা মার্কা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। আগামী ১৫ জুন এ সিটিতে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা জানান, প্রার্থী বাছাইকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশ কিছু রাজনৈতিক নির্দেশনাও দেন। তিনি দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে বিএনপিসহ স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিদের নানামুখী ষড়যন্ত্র সম্পর্কে নেতাকর্মীদের সতর্ক অবস্থানে থেকে জনগণকে তাদের অপকর্ম সম্পর্কে অবহিত করে সচেতন করার জন্যও নেতাদের নির্দেশ দেন।
সূত্র জানায়, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিকে সচল ও সবল রাখার জন্য তার সরকারের সার্বিক কার্যক্রম তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনীতির সকল সূচকে বাংলাদেশ ভাল অবস্থানে রয়েছে। ভাল অবস্থানে থেকেই বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে। তবে সরকারী ব্যয় সঙ্কোচনের জন্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা কাটছাঁট করছি। সতর্কতা অবলম্বন করছি।
বৈঠকে কুসিকসহ স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন বিষয়ে আলোচনা হয়। মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের বিষয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ ও বিভিন্ন জরিপে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জনপ্রিয়, স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন ইমেজের প্রার্থীদের এসব নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। কুসিকসহ সব নির্বাচনে দল থেকে যাকেই প্রার্থী করা হোক না কেন, ঐক্যবদ্ধভাবে নৌকার প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করে বিজয় ছিনিয়ে আনার জন্যও নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা।
বৈঠক সূত্র জানায়, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদ ছাড়াও বৈঠকে ৩টি উপজেলা পরিষদ, ৬টি পৌরসভা এবং ১৩৮টি ইউনিয়ন পরিষদে দলের প্রার্থিতা চূড়ান্ত করা হয়। গভীর রাতে দলের কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয়।
মেয়র পদে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনে আরফানুল হক রিফাত ছাড়াও তিনটি উপজেলার মধ্যে দিনাজপুর জেলার খানা উপজেলায় সফিউল আযম চৌধুরী, সিলেট বিভাগের গোলাপগঞ্জ উপজেলায় মঞ্জুর কাদির শাফি এবং চট্টগ্রাম বিভাগের খাগড়াছড়ি উপজেলায় নৌকার প্রতীক পেয়েছেন মেমং মারমা। এছাড়া ছয়টি পৌরসভার মধ্যে মেহেরপুর পৌরসভায় মাহফুজুর রহমান রিটন, ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় আবদুল খালেক, গোপালগঞ্জ মুকসুদপুরে আতিকুর রহমান মিয়া, সিলেটের বিয়ানীবাজারে আবদুস শুকুর, রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িতে জমির হোসেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। তবে গোপালগঞ্জ সদর পৌরসভায় কাউকে দলীয় মনোনয়ন না দিয়ে উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। এছাড়া ১৩৮টি ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থিতা ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ।