ডেস্ক নিউজ
বিদেশফেরত দুই লাখ কর্মীর পুনর্বাসনের লক্ষ্যে সরকার নতুন করে আরও ৪২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারির কারণে এসব কর্মী চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরেছেন।
এই অর্থ পুনরেকত্রীকরণে (রি-ইন্টিগ্রেশন) ব্যয় করা হবে। এর আগে বিদেশফেরত কর্মীদের ঋণ দেওয়ার জন্য যে ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল, নতুন বরাদ্দ তার অতিরিক্ত। নগদ আর্থিক প্রণোদনা হিসাবে ব্যয় হবে নতুন বরাদ্দের বড় অংশ।
বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারি শুরু হলে প্রবাসী কর্মীরা সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েন। লকডাউনের কারণে বিভিন্ন দেশে কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। অনেক কর্মী চাকরি হারান। বিমান চলাচল স্বাভাবিক না হওয়ায় ছুটিতে আসা কর্মীদের অনেকে আর কর্মস্থলে ফিরতে পারেননি।
মহামারিকালে কমপক্ষে পাঁচ লাখ বাংলাদেশি কর্মী দেশে ফিরে আসেন। তাদের বেশির ভাগ দেশে ফিরেও নানা সমস্যায় পড়েছেন। এ থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে সরকার প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে চার শতাংশ সরল সুদে ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
ব্যাংককে ঋণের সিংহভাগ জোগান দেয় ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড। বাকিটা সরকারের তহবিল থেকে দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। এর কিছু ঋণ ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। রি-ইন্টিগ্রেশন খাতে নতুন বরাদ্দের কারণে বিদেশফেরত কর্মীদের জন্য মোট প্রণোদনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১২৫ কোটি টাকা।
ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড বিদেশ থেকে ফিরে আসা অভিবাসী কর্মীদের মধ্যে দুই লাখ কর্মীর প্রত্যেককে নতুন বরাদ্দ থেকে ১৩ হাজার ৫০০ টাকা করে নগদ অনুদান দেবে। এছাড়াও নতুন বরাদ্দ অর্থ দিয়ে সারা দেশে ৩০টি ওয়েলফেয়ার সেন্টার স্থাপন করা হবে।
তৈরি করা হবে ফিরে আসা কর্মীদের ডেটাবেজ। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে জানান, বিদেশফেরত ১০ হাজারের বেশি লোকের মধ্যে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।
এদিকে প্রবাসী কর্মীদের ঋণমুক্ত করার দাবি জানিয়েছে অভিবাসী কর্মীদের সংগঠন ওয়ার্বি ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন। সংগঠনের নেতারা বলছেন, অভিবাসন ব্যয় বৃদ্ধির কারণেই ঋণের বোঝা মাথায় নিতে হচ্ছে প্রবাসীদের। ঋণ নিয়ে বিদেশ গিয়ে তা পরিশোধ করতে পারেন না তারা। ফলে ঋণের ঘানি টানতেই চলে যায় জীবনের অনেকটা সময়।
এ অবস্থা থেকে উত্তরণে শূন্য অভিবাসন ব্যয় করার দাবি জানানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনাসভায় এ দাবি জানানো হয়। ওয়ার্বি ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন এই আলোচনাসভার আয়োজন করে। সহযোগিতা দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম)।
ওয়ার্বের চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুল হকের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন সাবেক সংসদ সদস্য রোকসানা ইয়াসমিন সুতী, ওয়ার্বের সহকারী পরিচালক সোহরাওয়ার্দী হোসেন, ট্রেড ইউনিয়ন নেতা নজরুল আহসান প্রমুখ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির পরিচালক জেসিয়া খাতুন।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে অভিবাসন ব্যয় প্রতিবেশী অনেক দেশের তুলনায় বেশি। ফলে যারা বিদেশে যান শ্রমিক হিসাবে, তারা ঋণের বোঝা নিয়ে ঘুরে বেড়ান। স্থানীয় মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নেওয়ার কারণে সুদের হার অনেক বেশি থাকে। কিন্তু বিদেশে গিয়ে যে আয় করেন, তা দিয়ে ঋণ শোধ করা তাদের পক্ষে কষ্টকর হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় ঋণের বোঝা নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন।
এছাড়া করোনা মহামারির কারণে অনেক শ্রমিক দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হন। এ কারণে তারা এখন দিশেহারা। এ অবস্থায় সরকারের উচিত তাদের পাশে দাঁড়ানো। সেই সঙ্গে রেমিট্যান্সের অর্থের সঠিক ব্যবহার করা প্রয়োজন।
চলতি অর্থবছরের অক্টোবরে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৬৪ কোটি ৬৮ লাখ মার্কিন ডলার, যা ১৭ মাসের মধ্যে সর্বনিু। এর আগে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের মে মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৫০ কোটি ৪৬ লাখ মার্কিন ডলার। রেমিট্যান্সের নিুগতি নভেম্বরেও থাকবে বলে মনে করছেন এ খাতের বিশ্লেষকরা।
তাদের ধারণা, নভেম্বর শেষে রেমিট্যান্স প্রবাহ ১৫৫ থেকে ১৬০ কোটি ডলারে নেমে আসবে। কারণ হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠানো এবং মহামারির কারণে বিদেশফেরত অধিকাংশ প্রবাসী এখনো যেতে পারেননি। এসব কারণে প্রবাসী আয় কমেছে।