ডেস্ক নিউজ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে নাপা সিরাপ সেবনে দুই শিশু মৃত্যুর অভিযোগে সারা দেশের পাইকারি ও খুচরা দোকান পরিদর্শন করে একটি ব্যাচের ওষুধ পরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর। এ ঘটনায় ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর, স্বাস্থ্য বিভাগ চট্টগ্রাম অঞ্চল, স্বাস্থ্য বিভাগ ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের পক্ষ থেকে পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, প্যারাসিটামল সিরাপ নাপা সেবনে দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গতকাল রাজধানীতে বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিন আয়োজিত সম্মেলন শেষে তিনি এ কথা বলেন। মন্ত্রী আরও বলেন, ওই ঘটনা তদন্তে জেলার সিভিল সার্জনসহ কর্মকর্তাদের পাঠানো হয়েছে। একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। যে ফার্মেসি থেকে ওষুধ নেওয়া হয়েছে সেখানে ওষুধ বিক্রি বন্ধ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া সিরাপগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে। আমাদের তদন্ত কমিটি কাজ করছে। অপেক্ষা করছি রিপোর্ট কী আসে। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেসব লোক জড়িত আছে, যদি দোষী প্রমাণিত হয় তাদের বিরুদ্ধে সরকারি যে আইন আছে সেই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিব।’ গত শনিবার ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ স্বাক্ষরিত এক আদেশে বলা হয়, ‘ওষুধটি পরীক্ষা করে ন্যাশনাল কন্ট্রোল ল্যাবরেটরিতে প্রতিবেদন পাঠাতে হবে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, প্যারাসিটামল ১২০ মিলিগ্রাম ও ৫ মিলিগ্রাম সিরাপের (ব্যাচ নং ৩২১১৩১২১, উৎপাদন তারিখ ১২/২০২১, মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ ১১/২০২৩) ওষুধ সেবন করে একই পরিবারের দুই শিশু মারা গেছে। এমন পরিস্থিতিতে সারা দেশে বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়ে কর্মরত সব কর্মকর্তাকে তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় অবস্থিত পাইকারি ও খুচরা ফার্মেসি পরিদর্শন করে ওই ব্যাচের নমুনা পরীক্ষা ও বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন ন্যাশনাল কন্ট্রোল ল্যাবরেটরিতে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হলো।’ ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের পরিচালক মো. আইয়ুব হোসেন বলেন, ‘অধিদফতরের বিভিন্ন আঞ্চলিক কার্যালয় নাপা সিরাপের ওই ব্যাচের ওষুধের নমুনা সংগ্রহ করছে। তবে ওই ব্যাচের ওষুধ বিক্রি বন্ধ রাখার কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি।’
গত বৃহস্পতিবার রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের দূর্গাপুর গ্রামের ইটভাটা শ্রমিক ইসমাঈল হোসেন সুজন খানের ছেলে ইয়াছিন খান (৭) ও মোরসালিন খান (৫) নাপা সিরাপ সেবনের পর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। দুই শিশুর পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন, শিশুদের হাসপাতালে নেওয়ার পর আশানুরূপ চিকিৎসা মেলেনি।
এ ঘটনা তদন্তে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটির প্রধান অধিদফতরের পরিচালক ডা. আকিব হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। স্বাস্থ্য বিভাগ চট্টগ্রাম অঞ্চল কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালককে প্রধান করে আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। স্বাস্থ্য বিভাগ ব্রাহ্মণবাড়িয়া একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এ ছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের পক্ষ থেকে পৃথক একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের তদন্ত কমিটি গতকাল দুপুরে ওই গ্রামে গিয়ে দুই শিশুর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তদন্ত কমিটির প্রধান ডা. আকিব হোসেন বলেন, যে সিরাপটি নিয়ে অভিযোগ উঠেছে, সেটি পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। ইতোমধ্যে পরীক্ষা শুরু হয়েছে।’ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাধায়ক মো. ওয়াহীদুজ্জামান জানান, ‘রোগীর স্বজন, চিকিৎসক ও কর্মীদের গাফিলতির পাশাপাশি তৃতীয় কোনো পক্ষের কারসাজি রয়েছে কি না এর তদন্তের জন্যই কমিটি গঠন করা হয়েছে।’ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম বলেন, সিরাপে ক্ষতিকারক উপাদান ছিল কি না তা দেখতে ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট আসার পর পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।