করোনা ধাক্কা কাটিয়ে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজ এগিয়ে চলেছে। এরই মধ্যে টার্মিনালটির ১০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এর মাধ্যমে দৃশ্যমান হওয়ার পথে রয়েছে দেশের বৃহত্তম বিমানবন্দরটির তৃতীয় টার্মিনাল। বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্র জানায়, পুরো তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণ কাজ শেষ হবে ২০২৩ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে। এই কাজ শেষে টার্মিনালটি চালু করা গেলে হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রীসেবার মান আরও উন্নত হবে। এতে করে বছরে ২০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে। তাতে করে বাংলাদেশের এভিয়েশন খাতে যুক্ত হবে নতুন এক অধ্যায়।
তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, করোনা সংক্রমণ এখনো না থামেলেও পালাক্রমে ২৪ ঘণ্টাই চলছে এই টার্মিনালের নির্মাণ কাজ। মিতসুবিশি করপোরেশন, ফুজিতা করপোরেশন ও স্যামসাং যৌথভাবে এই কাজটি করছে। প্রকল্পে বর্তমানে কাজ করছেন দুই হাজারেরও বেশি শ্রমিক।
তৃতীয় এই টার্মিনালে থাকছে ৫ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটার জায়গাজুড়ে ৩৭টি বিমান রাখার অ্যাপ্রোন ( প্লেন পার্ক করার জায়গা), ১ হাজার ২৩০টি গাড়ি রাখার সুবিধা, ৬৩ হাজার বর্গফুট আয়তনের একটি আমদানি-রফতানি কার্গো কমপ্লেক্স ও ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার। এছাড়াও থাকবে রাডার, কন্ট্রোল টাওয়ার, অপারেশন ভবন ও বহুতল কারপার্ক। তিন তলা এই টার্মিনাল ভবনটি স্থাপত্যরীতিতেও অনন্য। নান্দনিক ও চোখ ধাঁধাঁনো নকশায় এর নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলেছে। কেবল টার্মিনাল ভবন নয়, ভবনের বহির্বিভাগেও থাকবে এমন নকশার ছাপ।
হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের প্রকল্পটি ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর অনুমোদন পায় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক)। শুরুতে টার্মিনালটি নির্মাণের ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৩ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। পরে অবশ্য প্রকল্প ব্যয় ৭ হাজার ৭৮৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা বাড়ানো হয়। সবমিলে এখন প্রকল্পটির খরচ ২১ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকারও বেশি। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে ৫ হাজার ২৫৮ কোটি ৩ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। বাকি ১৬ হাজার ১৪১ কোটি ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে জাপানের সংস্থা জাইকা।
তৃতীয় টার্মিনালের ভেতরের ভবনটির নকশা করেছেন বিখ্যাত স্থপতি রোহানি বাহারিন। সিঙ্গাপুরের চ্যাংগি এয়ারপোর্টের টার্মিনাল ৩, চীনের গুয়াংজুর এটিসি টাওয়ার ভবন, ভারতের আহমেদাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ইসলামাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মতো সব স্থাপনার নকশাকার তিনি। এছাড়া মালদ্বীপ, ফিলিপাইন, কম্বোডিয়া, ব্রæনাই, মিয়ানমার ও ভিয়েতনামসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিমানবন্দরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রকল্পের নকশা করেছেন তিনি।
এদিকে, তৃতীয় টার্মিনালের পাইলিংয়ের সময় এরই মধ্যে মাটি খুঁড়তে গিয়ে পাওয়া গেছে পাঁচটি বোমা। বোমা পাওয়া গেলেও অনাকাঙ্খিত কোনো ঘটনা ঘটেনি। বর্তমানে তৃতীয় টার্মিনালের পুরো পাইলিং এলাকার মাটি স্ক্যানিং করেছে বিমান বাহিনীর বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট। আর যে কয়েকটি বোমা উদ্ধার করা হয়েছে, সেগুলো দক্ষতার সঙ্গে ধ্বংস করেছে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী। বোমা উদ্ধারের ঘটনায় সর্বোচ্চ সতর্কতা নেওয়া হলেও দ্রæততার সঙ্গেই এগিয়ে চলেছে তৃতীয় টার্মিনালটির নির্মাণ কাজ।
প্রকল্পটি সম্পর্কে জানতে চাইলে বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মাশার্ল মো. মফিদুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে সার্বক্ষণিক এই প্রকল্পের তদারকি করছি। এমনকি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও সবসময় যোগাযোগ রাখছি। করোনা সংক্রমণের মধ্যেও আমাদের কাজ থেমে নেই। দিনরাত কাজ চলছে। বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, আমরা ২০২৩ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে টার্মিনালটি নির্মাণের কাজ শেষ করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা আশাবাদী, কাঙ্খিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারবো।