ডেস্ক নিউজ
কোভিড-১৯ প্রতিরোধে দেশেই টিকা উৎপাদনের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্দেশনার আলোকে জমি অধিগ্রহণসহ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। টিকা উৎপাদনে প্ল্যান্ট স্থাপনের কাজ শুরু করতে যাচ্ছে ওষুধ উৎপাদনকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান ‘এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড’ (ইডিসিএল)। সেখানে তৈরি হবে প্রোটিন প্রযুক্তির টিকা (প্রোটিন সাবইউনিট ভ্যাকসিন)। রাশিয়ার স্পুটনিক-ভি ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আবিষ্কৃত ‘প্রোটিন’ প্রযুক্তিতে এ টিকা তৈরি হতে পারে। টিকা উৎপাদনে একটি কারিগরি কমিটি ও একটি উপদেষ্টা কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ পদ্ধতিতে টিকা উৎপাদন নিরাপদ ও সহজেই ব্যবহারযোগ্য। টিকার তাপমাত্রা সংবেদনশীলতাও কম। তবে একটি প্রযুক্তির ওপর নির্ভর না করার পরামর্শ তাদের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকার প্ল্যান্ট এমনভাবে করতে যাতে, স্বল্প সময়ে একাধিক প্রযুক্তির টিকা উৎপাদন করা সম্ভব হয়। কোভিড-১৯ প্রতিরোধী ভ্যাকসিন উৎপাদন কারিগরি কমিটির আহ্বায়ক ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম আমাদের সময়কে বলেন, ‘টিকা উৎপাদনের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। ভূমি অধিগ্রহণের কাজ ৯০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। অন্যান্য কাজও অনেকটাই এগিয়েছে। আশা করছি নির্দিষ্ট সময়ে আমরা উৎপাদনে যেতে পারব।’
একাদশ জাতীয় সংসদের ‘স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির’ ১১তম বৈঠকে দেশে করোনার টিকা উৎপাদনের বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে কমিটিকে জানানো হয়, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে টিকা উৎপাদনের মূল যন্ত্রপাতি ইউরোপ, আমেরিকা, জাপান প্রভৃতি দেশ থেকে আনা হবে। অন্যান্য যন্ত্রপাতি আনা হবে চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ানসহ এশিয়ার অন্যান্য দেশ থেকে। কাঁচামাল আমদানি ও প্রযুক্তি আদান-প্রদানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রর ডায়াডিক কোম্পানির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের লক্ষ্যে খসড়া এমওইউ তৈরি হয়েছে। রাশিয়ার স্পুটনিক-ভি ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আবিষ্কৃত ‘প্রোটিন’ প্রযুক্তির টিকা তৈরির আলোচনাও চলছে। টিকা উৎপাদনের লক্ষ্যে বিদেশি যন্ত্রপাতি উৎপাদন ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রাথমিকভাবে প্রাক্কলিত দর তৈরি করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সায়েদুর আমাদের সময়কে বলেন, ‘প্রোটিন পদ্ধতিতে টিকা উৎপাদন নিরাপদ ও সহজ। বাল্ক পদ্ধতিতে একবারে অনেক টিকা উৎপাদন করা সম্ভব। একই সঙ্গে এ প্রযুক্তির টিকায় তাপমাত্রা সংবেদনশীলতা মডার্না বা ফাইজারের চেয়ে অনেক কম।’ তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ‘নভোভ্যাক্স’ কিংবা কিউবার ‘সবেরানা-২’ ও ‘সবেরানা প্লাস’ এই একই প্রযুক্তির টিকা। ২ বছরের শিশুদেরও এ টিকা দেওয়া যায়।
ডা. সায়েদুর আরও বলেন, দেশে টিকা উৎপাদন অবশ্যই একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। তবে লক্ষ রাখতে হবে, উৎপাদনের এ প্রস্তুতি যেন একটি প্ল্যাটফরমের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না হয়। টিকা উৎপাদনের ক্ষেত্রে ‘প্ল্যান্ট ইন এ ফক্স’ পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। যাতে একই প্ল্যান্টে মাত্র ৭২ ঘণ্টার ব্যবধানে একাধিক প্রযুক্তির টিকা উৎপাদন করা যায়।
ইডিসিএল জানিয়েছে, টিকা উৎপাদনে গঠিত কারিগরি কমিটি ৮টি বিষয় বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিয়েছে। কোভিড-১৯ প্রতিরোধী টিকা উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করতে স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপ হিসেবে সরকারকে কার্যকর ও নিরাপদ টিকা সরবরাহের জন্য ‘ফেজ-১ ফরমুলেশন, ফিল ফিনিশিং অ্যান্ড প্যাকেজিং ইউনিট’ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইডিসিএলের গোপালগঞ্জ প্রকল্পের আরডিপিপি পুনরায় সংশোধনের মাধ্যমে টিকা উৎপাদন ইউনিট অন্তর্ভুক্ত করে কাজটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আরডিপিপি সংশোধন করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে টিকা উৎপাদনে তুলনামূলক সময় কম লাগবে। ‘
কনসালটেন্সি সার্ভিস ফর ডিটেল ইনঞ্জিনিয়ারিং ইনক্লুডিং প্রিপারেশন অব টেন্ডার ডকুমেন্ট অ্যান্ড ড্রাইং ফর ভ্যাকসিন প্লান্ট’-এর পরামর্শ সেবা গ্রহণে একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান খসড়া নকশা প্রস্তুত করেছে। কারিগরি কমিটি দেশে টিকা উৎপাদন, ব্যবহার, পরিবহন ও সাশ্রয়ী দিক বিবেচনায় প্রোটিন টিকা উৎপাদন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি ডায়াডিকের সঙ্গে ইডিসিএলের ৩ বার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আলোচনা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে স্বল্প সময়ের মধ্যে স্টিল অবকাঠামো নির্মাণ করে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি স্থাপনের মাধ্যমে টিকা উৎপাদন ইউনিট চালু করতে বিভিন্ন প্রকৌশল প্রতিষ্ঠানের পরামর্শ নেওয়া হয়েছে।
ইডিসিএল গোপালগঞ্জ প্ল্যান্টসংলগ্ন জমিতে ‘বায়ো-মেনুফ্যাকচারিং ফ্যাসেলিটি ও রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ স্থাপনে জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল আইন মোতাবেক প্রস্তাবিত স্থাবর সম্পত্তির প্রকৃত অবস্থার বিবরণী প্রস্তুত করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৩ মে প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। তখন তিনি বলেন, কয়েক মাসের মধ্যে দেশেই করোনার টিকা উৎপাদন সম্ভব হবে। দেশেই যাতে টিকা উৎপাদন করা যায়, সরকার সে ব্যবস্থা নিয়েছে।