ডেস্ক নিউজ
দুর্নীতিবাজ ভিআইপি কারাবন্দিসহ দুর্নীতির বিচারাধীন মামলায় আটক কারা হাজতি-কয়েদিদের কঠোর নজরদারিতে আনা হচ্ছে। খুব শিগগিরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কারা অধিদপ্তর হয়ে দেশের সব কারাগারে এ সংক্রান্ত আদেশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। হলমার্ক কেলেঙ্কারিতে সাজাপ্রাপ্ত বন্দি তুষার আহমেদের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে কর্মকর্তার কক্ষে এক নারীর সঙ্গে একান্তে সময় কাটানোর যে অভিযোগ রয়েছে, সেই কা- তদন্তে গঠিত দুটি কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সোনালী ব্যাংক থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা কেলেঙ্কারির অন্যতম হোতা হলমার্ক গ্রুপের মহাব্যবস্থাপকের (জিএম) সঙ্গে এক নারীর সাক্ষাতের ঘটনায় গঠিত কারা কর্তৃপক্ষের তদন্ত কমিটি মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া তাদের প্রতিবেদনে ২৫টি সুপারিশ করেছে। একই কা-ে গাজীপুর জেলা প্রশাসন গঠিত পৃথক তদন্ত কমিটি ৮টি সুপারিশ করেছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরসূত্রের খবর- দুই তদন্ত কমিটিই দেশের সব কারাগারে বন্দি দুর্নীতিবাজ কয়েদি বা হাজতিদের কড়া নজরদারিতে রাখার সুপারিশ করেছে। একই সঙ্গে কারাবিধি অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় পর পর এসব বন্দির সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাতের যে সুযোগ দেওয়া হয়, তাতেও কারা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পূর্বানুমতি নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (কারা অনুবিভাগ) সৈয়দ বেলাল হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, কাশিমপুর কারাগারে বন্দির নারীসঙ্গ কা-ে ইতোমধ্যে সিনিয়র জেল সুপার ও জেল সুপারকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। কারা অধিদপ্তর এবং গাজীপুর জেলা প্রশাসন থেকে গঠিত দুটি তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী জড়িত অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, যেন ভবিষ্যতে কেউ কারাবিধি লঙ্ঘনের মতো কর্মকা-ে জড়াতে ভয় পান। তিনি আরও বলেন, হলমার্কের তুষার আহমদসহ স্পর্শকাতর কারাবন্দিদের ওপর নজরদারি বাড়ানো হবে। কারা মহাপরিদর্শকের কার্যালয় থেকে খুব শিগগিরই দেশের সব কারাগারে এ ধরনের আদেশ পৌঁছে যাবে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, কর্মকর্তার কক্ষে নারীর সঙ্গে দুই ঘণ্টা সময় কাটানোর বিনিময়ে কাশিমপুর কারাগার ১-এর জেলার নূর মোহাম্মদকে ১ লাখ, ডেপুটি জেলার গোলাম সাকলায়েনকে ২৫ হাজার এবং সার্জেন্ট আবদুল বারী, গেট সহকারী প্রধান কারারক্ষী খলিলুর রহমানকে ৫ হাজার টাকা করে ঘুষ প্রদান করেন হলমার্কের তুষার আহমদ। তখন ওই কারাগারের গেটে বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা কর্তব্যরত ছিলেন। তাদেরও মোটা অঙ্কের টাকার মাধ্যমে ‘ম্যানেজ’ করে স্পর্শকাতর মামলার কারাবন্দি আসামিরা পরিবারের সদস্য ছাড়াও অনেকের সঙ্গে দেখা করেন। দীর্ঘদিন ধরে চলা এ অনিয়ম বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটিগুলো।
গত ৬ জানুয়ারি কাশিমপুর কারাগারে এক কর্মকর্তার কক্ষে জনৈক নারীর সঙ্গে সময় কাটান হলমার্কের বন্দি কর্মকর্তা তুষার। ওই সময় সিসিক্যামেরায় ধারনকৃত ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, সিনিয়র জেল সুপার রত্না রায় এবং ডেপুটি জেল সুপার গোলাম সাকলায়েনের উপস্থিতিতে এক নারী কারাগারে যান। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা ডেপুটি জেল সুপারের কক্ষে ওই নারীর সঙ্গে হাসি-তামাসায় সময় কাটান তুষার। ওই ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে কারা কর্তৃপক্ষ। গাজীপুর জেলা প্রশাসনও তিন সদস্যের আরেকটি কমিটি গঠন করে।
অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক আবরার হোসেনকে প্রধান করে গঠিত কারা কর্তৃপক্ষের কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের উপসচিব আবু সাঈদ মোল্লাহ এবং ময়মনসিংহের ডিআইজি প্রিজন জাহাঙ্গীর কবির।
তদন্ত প্রতিবেদনের আগেই কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার ১-এর সিনিয়র জেল সুপার রত্না রায়, জেলার নুর মোহাম্মদ, ডেপুটি জেল সুপার মোহাম্মদ গোলাম সাকলায়েন, সার্জেন্ট আবদুল বারী ও সহকারী প্রধান কারারক্ষী খলিলুর রহমানকে প্রত্যাহার করা হয়।
রত্না রায় ও গোলাম সাকলায়েনকে ‘ম্যানেজ’ করে কাশিমপুর কারাগারে বিভিন্ন হাজতি বা কয়েদি সুস্থ অবস্থায় কারা হাসপাতালে বসবাস, কারা ফটকে তাদের কক্ষে নারী বা পরিবারের সঙ্গে একান্তভাবে সময় কাটানোর সুযোগ পেতেন বলে জোর অভিযোগ রয়েছে।