নাটোর প্রতিনিধি:
ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে নাটোরের নলডাঙ্গা পৌরসভায় ভিজিএফ এর চাল বিতরণের সময় সুবিধাভোগীদের ওপর হামলা ও মারপিটের ঘটনায় পৌর মেয়র মনিরুজ্জামান মনির সহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে আহত মিঠুনের মা মর্জিনা বেগম বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেন। মর্জিনা বেগম পৌরসভার পুর্ব সোনাপাতিল গ্রামের মৃত ভুট্ট আলীর স্ত্রী। মামলার অন্য আসামীরা হলেন, মেয়রের আপন ভাতিজা উপজেলার ছাতারভাগ গ্রামের বকুল হোসেন মন্ডলের ছেলে সাগর মন্ডল (৩০), ব্রক্ষ্মপুর পুর্বপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল জলিলের ছেলে রহিদুল ইসলাম (৪৫) এবং তার ছেলে নিশান প্রামানিক (২২), নীলডাঙ্গা গ্রামের আব্দুল মজিদের ছেলে মোঃ রুবেল (৩৫) ও হলুদঘর জাঙ্গালপাড়া গ্রামের মৃত হেফাজুর রহমানের ছেলে মোঃ মিলন (৩৮)। এছাড়া অজ্ঞাত আরো ৮-১০ জন কে আসামী করা হয়েছে।
নলডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে বলে নিশ্চিত বলেন, মেয়র মনিরুজ্জামান মনিরসহ ৬ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরো অজ্ঞাতনামা ৮/১০ জনকে অভিযুক্ত করে মামলাটি দায়ের করেছেন মর্জিনা বেগম। মামলাটি যথাযথ ভাবে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অভিযুক্তদের গ্রেফতারে পুলিশ অভিযানে নেমেছে। পৌর মেয়র মনির নলডাঙ্গা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার (২২ জুন) সকাল থেকে নলডাঙ্গা পৌরসভার ভিতরে ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে ৪নং ও ৫নং ওয়ার্ডের গরীব ও দুঃস্থদের মাঝে ভিজিএফের চাল বিতরন চলছিল। এসময় লাইনে দাঁড়িয়ে চাল গ্রহণ করছিলেন প্রায় সাড়ে ৪০০ মানুষ। এ অবস্থায় দুপুর একটার দিকে ৪নং ওয়ার্ডের সোনাপাতিল মহল্লার বাসিন্দা শাহিন, জেলার, রকি, নয়ন, মিঠুন, রানা, মর্জিনা, নলডাঙ্গার রাজিব, আশিক, পুর্বসোনাপাতিল মহল্লার আলমঙ্গীর, মনিরুল, হলুদঘর মহল্লার স্বাধীন সহ অন্তত ২০ জন লাইনে দাঁড়ানো সুবিধাভোগীকে হাতুরি ও কাঠের বাটাম দিয়ে বেদম মারপিট করে পৌরসভা থেকে বের করে দেন মেয়র মনিরুজ্জামানসহ তার লোকজন। এ অবস্থায় লোকজন বাধা দিতে গেলে তাদের ওপরও চড়াও হন তারা। এসময় ক্ষুরের আঘাতে মনিরুল ইসলামসহ চারজন মারাত্মক আহত হন। আহতদের ৪ জনকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদের স্থানীয় ভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। নলডাঙ্গা পৌরসভার প্যানেল মেয়র ১ ও ৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শরিফুল ইসলাম পিয়াস জানান, পৌরসভার নানাবিধ অনিয়মের প্রতিবাদ করাসহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে মেয়র মনিরুজ্জামান মনিরের সাথে তার বিরোধ চলছে। ওই বিরোধের জেরে বৃহস্পতিবার তার ওয়ার্ডের সুবিধাভোগী ব্যক্তিদের ওপর মেয়র মনির নিজেসহ তার সহযোগি রহিদুল, নিশান, মিলন, রুবেল. সাগর ও আরো অনেকে মিলে হামলা চালায় এবং হাতুরি, বাটাম দিয়ে বেদম মারপিট করে পৌরসভা থেকে বের করে দেন। কারন ওই সুবিধাভোগীরা তার অনুসারী হওয়ায় এমনটি করা হয়েছে। ঘটনার সময় তিনি নিজেও পৌর কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন। এসময় তিনি বাধা দিতে গেলে তার দিকে তেড়ে আসেন মেয়র সহ তার সমর্থকরা। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ধারালো ক্ষুর দিয়ে আঘাত করে ৪ জনকে জখম করা হয়েছে। তাদের সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এব্যাপারে তারা আইনের আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়া এ ব্যাপারে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কাছেও অভিযোগ দেয়া হবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঈদ উপলক্ষ্যে গরীব ও দুঃস্থদের মাঝে ভিজিএফের চাল বিতরনের ব্যবস্থা করেছেন। সেই চাল বিতরন করতে গিয়ে সুবিধাভোগীদের মারপিট করে অন্যায় করেছেন। তারা এই অন্যায়ের বিচার চান।
নলডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র মনিরুজ্জামান মনির এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন ও বানোয়াট বলে দাবি করে জানান, চাল বিতরনের সময় কয়েকজন উশৃংখল যুবক বিশৃংখলার সৃষ্টি করছিল। তাদের চলে যেতে বললে খারাপ আচরন করে। এসময় উভয়ের মধ্যে কথাকাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। মারপিট বা ক্ষুরের আঘাতের ঘটনা সঠিক নয়। তিনি বলেন, তারা চাল নিয়ে ঘরের মধ্যে ভিড় করে দাঁড়িয়ে ছিল। অন্যদের সুবিধা করে দেয়ার জন্য তাদের চলে যেতে বলা হয়। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সঠিক নয়। তার সাথে শরিফুল ইসলাম পিয়াসের কোন দ্বন্দ্ব নাই বলে দাবী করেন। মামলা হওয়ার পর রাতে মোবাইলে মেয়রের সাথে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।