নাজমুল হাসান, বিশেষ প্রতিবেদক:
বউ সেজে মঞ্চে বসে ছিল মেয়েটি। লাজুক লাজুক দৃষ্টি। চোখে-মুখে আনন্দ ঝিলিক দিয়ে উঠছে ক্ষণে ক্ষণে। চারপাশে কত লোকজন, কত আয়োজন, খানাদানা, গানবাজনা। এই দৃশ্যটি নাটোরেরর দিঘাপতিয়া বালিকা শিশু সদনের। আর এই জাঁকজমকপূর্ণ এই অনুষ্ঠানের মধ্যমনি যিনি, তার নাম নূরজাহান খাতুন। যেন জাহান আলো করে বসে আছে সে।
শুক্রবার নাটোরের দিঘাপতিয়া বালিকা শিশু সদনে নূরজাহানের জাঁকজমকপূর্ণ বিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পুরো অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে সকল আনুষ্ঠানিকতা তদারকি করেন নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল, এ সময় জেলা প্রশাসক মোঃ শাহরিয়াজ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত, শিশু সদনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোস্তাক আলী মুকুল, সহ-সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক, ডাঃ আবুল কালাম আজাদসহ প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, সংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
বালিকা শিশু সদন সুত্রে জানান যায়, নূরজাহানকে সাবেক জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুনের সহযোগিতায় জেলা প্রশাসনে চাকরী দেয়া হয় হয়। সম্প্রতি তাকে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সে অনুসারে যোগ্য পাত্রের খোঁজ করা হতে থাকে। এক পর্যায়ে শহরের কান্দিভিটুয়া মহল্লার মজিবর রহমানের ছেলে মিজানুর রহমানের সাথে নূরজাহানের বিয়ে ঠিক করা হয়। গত বৃহস্পতিবার নূরজাহানের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান করা হয়। শুক্রবার শিশু সদনে উৎসবমুখর পরিবেশে বিয়ের আয়োজন করা হয়। সভ্রান্ত ঘরের মেয়ের বিয়ের যা যা আয়োজন থাকে, এর সব আয়োজনই ছিল সেখানে। কোনকিছু কমতি ছিল না। জাঁকজমকভাবে বর-বউয়ের মঞ্চ সাজানো হয়। মঞ্চের চারদিকে ফুল দিয়ে সাজানো হয়। সেই সাথে লাইটিং করা হয়। বিয়েতে নিমন্ত্রণ করা হয় প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সাংবাদিক ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষকে।
কন্যা সম্প্রদানের আগে এক অনূভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল বলেন, তিনি সবসময় শিশু সদনের শিশুদের পাশে ছিলেন। আজকে এই বোনের বিয়েতে কোন কিছুর কমতি রাখেন নাই। প্রতিবার ঈদের নামাজ আদায় করেই তিনি এখানে চলে আসেন। সময়ে অসময়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ ফেলেও মনের শান্তির জন্য এখানে চলে আসেন। তাদের খবরাখবর নিই। এখানকার কর্তৃপক্ষ যখন যা বলে তা একবাক্যে দিয়ে দিই। ভবিষতেও আমার সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে তাদের জন্য।
জেলা প্রশাসক মোঃ শাহরিয়াজ তার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন, আজ আমাদের এক মেয়েকে বিদায় দিচ্ছি। জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে বিদায় দিচ্ছি। এক বিয়েতে সম্ভবত এমপি, জেলা প্রশাসক, প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সাংবাদিক উপস্থিত থাকেনা। আজ সবাই উপস্থিত আছেন। আমরা নূরজাহান এবং মিজানুর দম্পতিকে দোয়া করি। তারা যেন সংসার জীবনে সুখি হয়।
শিশু সদনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোস্তাক আলী মুকুল বলেন, এটি একটি ব্যতিক্রমী আয়োজন। তারা যে সমাজে একা নয়, তারই স্বাক্ষর রেখেছে বিয়ের এই অনুষ্ঠান। তিনি চায় অসহায়দের পাশে বিত্তবানরা দাঁড়াবে এবং সামনে তাদের পথ চলার শক্তি জোগাবে।
বিয়ে অনুষ্ঠানে বর মিজানুর রহমান বলেন, ‘তিনি কখনো ভাবতেই পারেনি এতো জাঁকজমকভাবে বিয়ের অনুষ্ঠান হবে। প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সমাজের বড় বড় মানুষ এখানে এসেছেন। আমার খুবই ভালো লাগছে।’
বালিকা শিশু সদনে বেড়ে উঠা নূরজাহান অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, বিয়ে উপলক্ষ্যে এতো বড়সড় আয়োজন হবে তা ভাবতে পারিনা। সাবেক জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুনের কথা স্মরণ করে অশ্রুসিক্ত নয়নে নূরজাহান বলেন, আম্মা থাকলে আরও খুশি হতাম। স্থানীয় সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল, জেলা প্রশাসকসহ উপস্থিত সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে সবার দোয়া চায়।