নাটোরেরর বেসরকারী জেনারের হাসপাতালের ব্যবস্থাপক মিতা খাতুন হত্যা মামলার প্রধান আসামিকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ায় আদালতের কারণ দর্শানোর নির্দেশের প্রেক্ষিতে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা মাসুদ রানা ও অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মামুনুর রশিদ নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে আদালতে ব্যাখ্যা দাখিল করেছেন।
অপরদিকে আদালতের নির্দেশের প্রেক্ষিতে ও প্রধান আসামী জেনারেল হাসপাতালের মালিক আজিজ মোল্লাকে গ্রেফতারে ব্যর্থ হওয়ায় নাটোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী জালাল উদ্দিন আহমেদকে স্বশরীরে আদালতে হাজির হয়ে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছেন জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আব্দুর রহমান সরদার। গতকাল রবিবার তিনি এই নির্দেশ দেন। ইতিপূর্বে উক্ত হত্যা মামলার প্রধান আসামী আব্দুল আজিজ মোল্লাকে অব্যাহতি দিয়ে চার্জ শীট দাখিল করেছিলো পুলিশ। অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মামুনুর রশিদ প্রধান আসামী আজিজ মোল্লাকে বাদ দিয়ে চার্জশীট গ্রহণ করায় জেলা ও দায়রা জজ মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা মাসুদ রানা ও অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মামুনুর রশিদকে কারণ দর্শনোর নির্দেশ দেন।
নাটোরের দায়রা জজ আদালত সূত্রে জানা যায়,২০১৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর সকালে শহরের চকরামপুর এলাকায় অবস্থিত বেসরকারী জেনারেল হাসপাতালের ব্যবস্থাপক মিতা খাতুন ছুরিকাঘাতে খুন হয় হাসপাতালের পঞ্চম তলায় নিজের বিশ্রামাগারে। এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। দায়েরকৃত মামলায় কোন অভিযুক্তের নাম উল্লেখ ছিল না। তদন্তকালে পুলিশ হাসপাতালের মালিক আজিজ মোল্লা ও সুইপার সাগর জামাদারকে গ্রেফতার করে। পরে সাগর জামাদার আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। জবানবন্দীতে সাগর উল্লেখ করেন হাসপাতালের মালিক আব্দুল আজিজ মোল্লার নির্দেশে এবং তার দেওয়া চাকুতে মিতাকে হত্যা করা হয়। মিতাকে হত্যা করতে তার মালিক তাকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে কাজটি করান। তবুও তদন্ত কর্মকর্তা মাসুদ রানা হাসপাতালের মালিক আজিজ মোল্লাকে বাদ দিয়ে শুধু সুইপারের সাগর জমাদারের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০ নভেম্বর বিষয়টি আদালতের নজরে আসলে আদালত তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তার ব্যাখ্যা তলব করেন। একই সঙ্গে অব্যাহতির সুপারিশ কেন মঞ্জুর করা হয়েছে,সে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেন নাটোরের অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মামুনুর রশিদকে। একই সময় আদালত হাসপাতালের মালিক আজিজ মোল্লাকে ২৭ জানুয়ারীর মধ্যে গ্রেফতার করার জন্য নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ব্যক্তিগতভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওই নির্দেশ পালন করতে ব্যার্থ হয়েছেন। এর কারণ ব্যাখ্যা করার জন্য সোমবার আদালত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে আগামি ১১ ফেব্রুয়ারী মামলার পরবর্তী তারিখে স্ব-শরীরে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী জালাল উদ্দিন সোমবার সন্ধায় জানান,তিনি এ ব্যাপারে আদালতের নির্দেশ হাতে পাননি। আদেশ পেলে অবশ্যই ব্যাখ্যা দিবেন।
আদালতের আদেশ মোতাবেক তদন্তকারি কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপ পরিদর্শক মাসুদ রানা ও অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মামুনুর রশিদ গতকাল তাঁদের লিখিত ব্যাখ্যা দাখিল করেছেন। তদন্ত কর্মকর্তা তাঁর লিখিত ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেন, একজন নির্দোষ ব্যক্তি যাতে সন্দেহপূর্ণভাবে বিচারে সোপর্দ না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে আসামি আজিজ মোল্লাকে অব্যাহিত দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। যা তদন্ত তদারকি কর্মকর্তাগণও সমর্থন করেছেন।’ তবুও তিনি নবীন তদন্তকারি কর্মকর্তা হওয়ায় তাঁর ত্রুটি বিচ্যুতির জন্য বিচারকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মামুনুর রশিদ তাঁর লিখিত ব্যাখ্যায় বলেন, এজাহারে কোন আসামির নাম উল্লেখ নাই। তদন্তকারি কর্মকর্তা তদন্ত করে সন্দেহভাজন আসামি আজিজ মোল্লাকে অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেওয়ায় এবং এ ব্যাপারে এজাহারকারি ,কোর্ট ইন্সপেক্টর কোনো আপত্তি না করায় সার্বিক বিবেচনায় সরল বিশ্বাসে তিনি অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন। প্রথমবার বিধায় মহোদয়ের নিকট নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং ভবিষ্যতে এ ধরণের আদেশ দানের ক্ষেত্রে আরো বেশী সতর্ক থাকবো মর্মেব নিশ্চয়তা দিচ্ছি।’
আদালত উভয়ের লিখিত ব্যাখ্যা নথিতে রাখার নির্দেশ দেন এবং এ ব্যাপারে আগামি ১১ ফেব্রুয়ারী মামলার পরবর্তী তারিখে আদেশ দেবেন বলে জানান।