নিজস্ব প্রতিবেদক:
নাটোরের লালপুরের যুবলীগ কর্মি জাহারুল হত্যা মামলার প্রধান আসামী গোপালপুরে পৌর আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি মনজুর রহমান মঞ্জুকে গুলি করে হত্যা করেছে দূর্বৃত্তরা। মঙ্গলবার রাতে উপজেলার গোপালপুর রেলগেট এলাকায় তাকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের বড়ভাই মাসুদ রানা বাদি হয়ে টুমন খাঁকে প্রধান অভিযুক্ত করে মোট ১৬ জনের নামে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে সুমন নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে। ঘটনার পর থেকে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। মঞ্জুর পরিবারে চলছে আহাজারি। স্বজন ও এলাকাবাসী চায় হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি। নিহত মঞ্জু লালপুর উপজেলার বাহাদিপুর গ্রামের মৃত আব্দুল মান্নানের ছেলে।
পুলিশ ,নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসি সুত্রে জানা যায়, মনজুর রহমান মঞ্জু প্রতিদিনের মত গতরাতেও বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে যায় গোপালপুর রেলগেট এলাকায়। সেখানে তিনি একটি কনফেকশনারীর দোকানের সামনে চেয়ারে বসে ছিলেন তিনি। এ সময় তিনটি মোটর সাইকেলে কয়েকজন সন্ত্রাসী গিয়ে তার মাথায় ও পেটে গুলি করে চলে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি বেসরকারী হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণ করেন। এ ঘটনার পর থেকে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবীতে ফুঁসে উঠেছে স্থানীয় আওয়ামীলীগ, যুবলীগ,ছাত্রলীগ সহ এলাকাবাসী।
নিহত মঞ্জুর মা রাহেলা বেগম কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন আর নিজের বুকের ধন মঞ্জু মঞ্জু বলে আর্তনাদ করছেন। তিনি তার ছেলের হত্যাকারীদের বিচার ও শাস্তি দাবী করেন।
নিহত মঞ্জুর ভাই মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তার ভাইকে স্থানীয় সন্ত্রাসী টুমন,স্বপন ও তার সহযোগিরা গুলি করে হত্যা করেছে। তিনি তাদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচার দাবী করেন।
মনিরুল ইসলাম, আজগর আলী সহ এলাকাবাসী বলেন, মঞ্জু ছিলেন এলাকার জনদরদী মানুষ। তিনি সবসময় এলাকার মানুষের সুখ দুঃখের কথা চিন্তা করতেন। তিনি খুব ভালো মানুষ ছিলেন। কিন্তু তাকে এভাবে হত্যা করা হবে তা মেনে নিতে পারছেন না। তারা বলেন, মঞ্জু রাজনীতির পাশাপাশি ঠিকাদারি করতেন । রাজনৈতিক কিংবা ঠিকাদারি সংক্রান্ত বিরোধ আর এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জেরেই এই হত্যাকা- ঘটে থাকতে পারে। তারা দ্রুত ঘটনার সাথে জড়িতদের খুজে বের করে তাদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্ত,ুলক শাস্তির দাবী জানান।
সাবেক সংসদ সদস্যকে অভিযুক্ত করে নাটোর-১ আসনের (লালপুর-বাগাতিপাড়া) বর্তমান এমপি আবুল কালাম আজাদ বলেন, নিজের স্বার্থে সাবেক এমপি শহিদুল ইসলাম বকুল গত ৫ বছরে এলাকায় কয়েকটি সন্ত্রাসী বাহিনী তৈরী করেছেন। তিনি অপরাজনীতি করে সন্ত্রাসী দিয়ে এসব কাজ করাচ্ছেন। একসময় এই সকল সন্ত্রাসী এলাকায় ঢুকতে পারেনি। চর অঞ্চলে কোন অস্ত্রের ঝনঝনানি ছিলনা। কিন্তু গত ৫ বছরে এরা এলাকায় এসে সন্ত্রাসী চালিয়ে যাচ্ছে। সন্ত্রাসী যেই হোক তাদের বিচার হবেই। প্রশাসন দ্রুত এই হত্যাকান্ডের একটা ব্যাবস্থা নিবেন এবং সঠিক বিচার পাবে মঞ্জুর পরিবার।
তবে এ ব্যাপারে সাবেক সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তার সময়ে লালপুর ও বাগাতিপাড়া উপজেলায় সুশাসন ছিল। তার সময়ে কোন হত্যাকান্ডও ঘটেনি। তার কোন সন্ত্রাসী বাহিনী তৈরী করতে হয়নি। বরং এলাকায় সুশাসন থাকায় কোন চাাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী রাস্তায় নামতে পারেনি। যারা খুনের রাজনীতি করেন তারাই এ ধরণের বক্তব্য দিতে পারেন।
হত্যাকান্ডের ব্যাপারে লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাসিম আহমেদ জানান, গতরাতে মঞ্জু হত্যার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য নাটোর সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। এ ঘটনায় এখনো কোন মামলা দায়ের না হলেও ঘটনার সাথে জড়িত সুমন নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে এবং তাদের অভিযান চলছে। মামলা হলে ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করে আইনের হাতে সোপর্দ করা হবে।