আবু জাফর সিদ্দিকী, সিংড়া থেকে:
পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি মহৎ কাজ করেন নাটোরের সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম। সিংড়ায় যোগদানের পর থেকে তিনি অসহায় বৃদ্ধা মাকে সন্তানের কাছে, শিশু সন্তানকে মায়ের কোলে, শিকল পরা গৃহবধূকে উদ্ধার করা সহ বিভিন্ন কাজ করে ইতিমধ্যেই সিংড়াবাসীর মনে নিজের জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়েছেন। ব্যাপক গণসম্পৃক্ততার কারণে পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম ইতোমধ্যেই সিংড়ায় ২৪ ঘন্টার পুলিশ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। এরআগে তিনি জেলার বাগাতিপাড়া, বড়াইগ্রাম, নলডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন । ইন্সপেক্টর মনিরুল ইসলাম চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার তারাপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৯২ সালে পুলিশ বাহিনীতে উপ-পরিদর্শক (এস.আই) হিসেবে যোগদান করেন। উপ পরিদর্শক হিসেবে সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী ও ঢাকা মেট্রো পলিটন (ডিএমপি) তে কর্মরত ছিলেন। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে পাবনা,রাজশাহী, নীলফামারী, বগুড়া ও নাটোর জেলার বিভিন্ন থানায় অত্যন্ত দক্ষতা ও সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ছেলেদের অবহেলার শিকার ৮৫ বছর বয়সী মসিরন বেওয়া প্রায় ২০ বছর যাবৎ সিংড়া পৌর শহরের দমদমা কবরস্থানের পাশে চকলেট ও বিড়ির দোকান দিয়ে আসছিলেন। উপজেলার কুষাবাড়ী গ্রামের মৃত হুসেন প্রামাণিকের স্ত্রী রহিমা বেওয়ার মুখে লাথি মেরে ফেলে দেয় ছেলে বেল্লাল হোসেন। গ্রাম্য প্রধানদের সামনেই করা হয় মারপিট। একইভাবে উপজেলার বেলোয়া গ্রামের মৃত মছির উদ্দিন প্রামাণিকের স্ত্রী ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা মর্জিনা বেওয়া দীর্ঘ দিন ধরে ছেলেদের অবহেলার শিকার হয়ে আসছিলেন। মজিরন বেওয়া, বয়স শত বছরের উপরে। উপজেলার পুঠিমারি গ্রামে।বসতবাড়ির জায়গাটুকু জোরপূর্বক লিখে নেন নাতি লালু। এখন জমিটুকু নেয়ার জন্য বারবার চাপ দিচ্ছে। কিন্তু তাকে ঠিকমত দেখভাল করেনা। শাহিদা বেওয়া, বয়স প্রায় ৭০ বছর। বাড়ি নাটোরের সিংড়া উপজেলার খরমকুড়ি গ্রামে। মাঝে মাঝেই ছেলেদের নির্যাতনের শিকার হতে হন তাকে। ইন্সপেক্টর মনিরুল ইসলাম বিষয়গুলো জানার পর মসিরন, রহিমা বেওয়া, মর্জিনা বেওয়াকে মুচলেকা নিয়ে ছেলেদের হাতে তুলে দেন। এবং মজিরন বেওয়াকে নাতির হতে তুলে দেন।ডাহিয়া ইউনিয়নের গাড়াবাড়ি গ্রামে রেবেকা নামে এক গৃহবধূকে মাঝে মধ্যেই তার স্বামী শিকল দিয়ে বেঁধে রাখতেন এবং নির্যাতন করতেন। গণমাধ্যম কর্মীদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাৎক্ষনাৎ গভীর রাতে তিনি সঙ্গীয় ফোর্সসহ রওনা দেন উপজেলার দূর্গম এলাকায় এবং তাকে উদ্ধার করে তার পিতার বাড়িতে পৌছে দেয়।মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রহমানের বিধবা মেয়ে দেলচানের মুখে হাসি ফুটিয়ে ছিলেন মনিরুল ইসলাম। দেলচানের এক বিঘা জমি আবাদ করলে পার্শবর্তী গুরুদাসপুর উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের হরদমা গ্রামের সোহরাব তার ধান জোরপূর্বক কেটে নেয়। দীর্ঘ দিন থেকে ঘুরে কোন সমাধান হয়নি। ইন্সেপক্টর মনিরুল ইসলাম বিষয়টি জানতে পেরে দেলচানের সমুদয় টাকা আদায় করে তাঁর হাতে তুলে দেন। যৌতুক লোভী স্বামীর নির্যাতনের শিকার হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিছানায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন মমতাজ বেগম (২২) নামের এক গৃহবধু। স্বামীর মধ্যযূগীয় নির্যাতনের শিকার হয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। গণমাধ্যম কর্মীদের কাছ থেকে খবর পাওয়ার পর রাত ১টার দিকে হাসপাতালে নির্যাতিতা মমতাজ বেগমের কাছে ছুটে যান সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম। মমতাজ বেগমের কাছে ঘটনা শুনে দেড় বছরের সন্তানকে রাত ৩ টার দিকে তার কোলে ফিরিয়ে দেন তিনি। সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, মানবতার পাশে দাঁড়ানো সকলের কর্তব্য, সবাই যদি স্ব স্ব অবস্থান থেকে মানবতার জন্য এগিয়ে আসে তাহলে এ বিশ্ব হবে ভালবাসায় পরিপূর্ণ। সবাইকে তিনি মানবতার জন্য এগিয়ে আসতে আহ্বান জানান সেই সাথে ভবিষ্যতে তিনি এ রকম কাজ আরও করার জন্য প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।