নাটোরে একটি বেসরকারী সংস্থার (এনজিও) সদস্যদের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ এসেছে ওই সংস্থার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ বড়াইগ্রাম উপজেলার আহমেদপুর রুরাল রিকনস্ট্রাকশন ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে সংস্থার পদ্মা মহিলা সমিতির সদস্যদের। এ সমিতিতে ২০ জন সদস্য রয়েছে বলে জানায় সমিতির দলনেতা চম্পা বেগম। অভিযোগে জানা যায়, গত ২০১৭ সালে রুরাল রিকনস্ট্রাকশন ফাউন্ডেশনের রাজশাহী জোনের নাটোর অঞ্চলের আহমেদপুর শাখা খোলা হয়। শাখাটি খোলার পর থেকে বিভিন্ন মহিলা সমিতির নামে সদস্য সংগ্রহ করে পাশ বইয়ের মাধ্যমে টাকা সঞ্চয় করাতে থাকে। সঞ্চয়কৃত টাকার ওপর এনজিও কতৃপক্ষ তাদের বিভিন্ন অংকের ঋন দেয়। সেই ঋনের টাকা সুদ সহকারে কিস্তির মাধ্যমে পরিশোধও করে নেন তারা। এভাবেই বিশ্বস্ততা অর্জনের এক পর্যায়ে গ্রাহকদের বড় অংকের টাকা ঋন দেওয়ার কথা জানানো হয়। এই ভাবে গ্রাহকদের কাছ থেকে আরো বেশী করে সঞ্চয় জমা করায় এনজিও কতৃপক্ষ। পরে ঋন দেওয়ার কথা বলে গ্রাহকদের কাছ থেকে বিভিন্ন কাগজ পত্রে ও চেকে পাতায় স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। এরই এক পর্যায়ে এনজিও কর্মকর্তারা গ্রামের অশিক্ষিত অসহায় মহিলা সদস্যদের অজান্তে সঞ্চয়কৃত টাকা ও গ্রাহকদের নামে বড় বড় অংকের ঋনের টাকা তুলে নেয়। পরে সঞ্চয়কারীরা তাদের জমাকৃত টাকা উত্তোলন করতে গেলে এনজিও কর্মকর্তারা ব্যাংকে টাকা নেই বলে টালবাহানা করে সদস্যদের ঘোরাতে থাকে। এক পর্যায়ে সদস্যরা জানতে পারে ভূয়া স্বাক্ষরে তাদের জমাকৃত টাকা ও তাদের নামে ঋণ নেওয়া হয়েছে এবং তাদের টাকাও তুলে নেওয়া হয়েছে। এরপর গ্রাহকরা এই বিষয়ে এনজিও কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলতে গেলে তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ সহ বিভিন্ন হুমকি ধামকি দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। বিষয়টি জানতে পেরে গ্রাহকদের দলনেতা চাম্পা বেগম এর প্রতিবাদ করায় তাকেও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। স্ত্রীকে গালিগালাজ সহ অপমান করার প্রতিবাদ করলে চাম্পা বেগমের স্বামী রাকিবুল হাসানকে মিথ্য মামলা দিয়ে গ্রেফতার করিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে গ্রাহকরা তাদের জমাকৃত টাকা ফিরে পেতে ও তাদের নামে ভুয়া ঋনের হাত থেকে বাঁচতে সাংবাদিকদের বিষয়টি জানান। পরে গ্রাহকরা সোমবার স্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকার কার্যালয়ে এ ব্যাপারে প্রতিকার চেয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তাদের অভিযোগ তুলে ধরেন। এ সময় সাংবাদিকরা তাদের পাশ বই দেখে জানতে পারে বইগুলো থেকে যে স্বাক্ষরে টাকা তোলা হয়েছে তার সাথে গ্রাহকদের নমুনা স্বাক্ষরের কোন মিল নেই। এমনকি এক সদস্য রহিমার পাশ বই থেকে জরিনা নামের অপর সদস্যের ভুয়া স্বাক্ষর করা রয়েছে। অভিযোগে জানান যায় পদ্মা মহিলা সমিতির দলনেতা চম্পা বেগমের ১লাখ ২০ হাজার টাকা, ফাতেমা বেগমের ১ লাখ টাকা, জরিনা বেগমের ১ লাখ টাকা, চামেলি বেগমের ৩০ হাজার টাকা, কুলসুম বেগমের ১ লাখ টাকা, রহিমা বেগমের ১ লাখ টাকা এবং রোকেয়া বেগমের ১ লাখ ২ হাজার টাকা তাদের অজান্তে ঋনের নামে উত্তোলন করে নিয়েছে ওই এনজিওর কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে রুরাল রিকনস্ট্রাকশন ফাউন্ডেশনের নাটোর অঞ্চলের আহমেদপুর শাখার কর্মকর্তা নূরুল ইসলামের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তারা তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তাদের এনজিও কোন গ্রাহকদের টাকা উত্তোলন করতে করতে পারেনা। গ্রাকদের ঋণ দেওয়া হয়েছে। সেই ঋনের টাকা পরিশোধ না করার জন্য গ্রাহকরা এমন কর্মকান্ড করছেন। এছাড়াও গ্রাহকদের কাছে ঋনের টাকা আদায় করতে গেলেও তারা তাদের কর্মিদের ওপর হামলা করে। এঘটনায় তারা একটি মামলাও করেছেন। এক গ্রাহকের পাশ বইয়ে অন্য জনের স্বাক্ষরে কিভাবে টাকা উত্তোলন করা সম্ভব হলো জানতে চাইলে তিনি ব্যাস্ত আছেন বলে মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।