নাটোর প্রতিনিধি:
নাটোরে একটি ধর্ষণ মামলায় আদালত চত্বরে মানিক হোসেন (২০) নামে ধর্ষকের অভিযোগে কারাগারে থাকা এক হাজতির সাথে ধর্ষণের শিকার এক তরুণীর (১৭) বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। আর বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পরই ধর্ষকের জামিন মঞ্জুর করেছে জেলা ও দায়রা জজ আদালত। তবে সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে রাতে অথবা আগামীকাল অভিযুক্ত নাটোর কারাগার থেকে বের হবে বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী।
আদালত সুত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে নাটোর জেলার গুরুদাসপুর উপজেলার চাপিলা ইউনিয়নের রওশনপুর উত্তরপাড়া গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে মানিক হোসেন একই এলাকার এক তরুণীর ঘরে ঢুকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এসময় মেয়েটির আশপাশের লোকজন টের পেয়ে মানিককে আটকে রাখে। একপর্যায়ে মানিক তরুণীকে বিয়ের জন্য রাজি হয়ে কাজি ডেকে আনার কথা বলে সটকে পড়ে। এর মধ্যে তরুণীর পরিবার বিয়ের জন্য ছেলের পরিবারের লোকজনের সাথে কথাবার্তা চালিয়ে যেতে থাকে। তাতে সফল না হয়ে ঘটনার একমাস পর গত ১৯ অক্টোবর ধর্ষণের শিকার তরুণী গুরুদাসপুর থানায় মানিককে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করেন। ওই দিনই মানিক হোসেনকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। প্রথমে জামিনের আবেদন করলে আদালত তা না মঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তখন থেকেই মানিক কারাগারে ছিলেন। এরপর বৃহস্পতিবার মামলার শুনানীর দিনে আসামী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মঞ্জুরুল আলম ধর্ষক মানিক হোসেনের জামিন আবেদন করেন। পাশাপাশি উভয় পরিবার বিয়ে দেওয়ার জন্য সম্মতি প্রকাশ করেছে বলে বিষয়টি আদালতকে অবহিত করেন।
আসামির আইনজীবী মঞ্জুরুল আলম জানান, বাদি ও আসামির পরিবারের সম্মতিতে ধর্ষণের শিকার ওই তরুণীর সাথে আসামির বিয়ে দেয়ার ব্যাপারে ঐক্যমত হয়। দায়রা জজ আদালতের তলবমতে বৃহষ্পতিবার দুপুরে আসামি মানিক হোসেনকে কারাগার থেকে আদালতে আনা হয়। দুপুরে আদালত চত্বরের নিকাহ্ রেজিষ্টার কাজী রিয়াজুল হক অভিযোগকারি তরুণীর সাথে আসামির বিয়ে রেজিষ্ট্রি করেন। বিয়ের বিষয়টি প্রকাশ্য আদালতে নিশ্চিত করলে আদালত আসামির জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন।
কাজী রিয়াজুল হক বিয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বিয়ের নিকাহ নামায় বরের পক্ষে তাঁর ভাই মাহাবুর রহমান ও কনের বাবা সাক্ষি হয়েছেন। বিয়েতে সাড়ে চার লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য্য করা হয়। আসামি পক্ষ থেকে অলংকার বাবদ এক হাজার ৩০০ টাকা পরিশোধ করা হয়।
ধর্ষনের শিকার তরুণী জানান, ধর্ষণ মামলা করেছিলাম। মানিক আমাকে মেনে নিয়েছে। আপাতত আর বলার মতো কিছু নাই।
তরুণীর বাবা জানান, আমি সন্তুষ্ট। দুই পক্ষের সম্মতিতে বিয়ে হয়ে গেল। ছেলে মেয়ের সুখই আমাদের সুখ।
ছেলের বাবা আব্দুস সালাম ব্যস্ততার অজুহাতে কোন কথা বলতে চাননি।
নাটোর দায়রা জজ আদালতের পিপি সিরাজুল ইসলাম বলেন, বিয়ের ব্যাপারে আদালতের কোনো ভ‚মিকা ছিল না। এটা উভয় পক্ষের অভিভাবকদের ব্যাপার। তবে এনিয়ে আদালত পাড়ায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এটি একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত।