নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রায় ৭২ লাখ টাকা ব্যয়ে নাটোরের বড়াইগ্রামের কামারদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ঠিকাদার ও উপ-সহকারী প্রকৌশলীর যোগসাজসে চারতলা ফাউন্ডেশনের বদলে দোতলা ফাউন্ডেশন এবং নিন্মমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করার অভিযোগ তোলা হয়েছে। প্রতিকার চেয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীসহ সংশিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এদিকে বিভিন্ন গণ মাধ্যমে এনিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর বুধবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এক সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটির প্রধান রাজশাহীর এলজিইডির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম। রাজশাহীর এলজিইডির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, ঘটনার তদন্ত চলছে। নির্ধারিত সময়েই তদন্ত প্রতিবেদন ঢাকায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হবে। তবে তিনি গণমাধ্যমে এর বেশি কথা বলতে রাজি হননি। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, গত ২১ মে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাস্তবায়নে ৭১ লাখ ৮৪ হাজার ৫০০ টাকা নির্মাণ ব্যয়ে নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার কামারদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়। যা ই-টেন্ডারে মাধ্যমে পায় নওগাঁর ব্রাদার্স এন্টারপ্রাইজ। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও এলাকাবাসীর অভিযোগ,ভবন নির্মাণে চারতলা ফাউন্ডেশনের বদলে,করা হয়েছে দোতলা ফাউন্ডেশন। এছাড়া চারতলা ফাউন্ডেশনের প্রাক্কলন অনুযায়ী সি-১কলামে ১৬টি ২০ মিলি রড, সি-২ কলামে ১৪টি ২০ মিলি রড এবং সি-৩ কলামে ১০টি ২০ মিলি রড ব্যবহারের নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু সেই নির্দেশনা না মেনে দোতলা ফাউন্ডেশনের সূত্র ধরে ব্যবহার করা হয় সি-১ কলামে ১০টি ২০ মিলি রড, সি-২ কলামে ১০টি ২০ মিলি রড ও সি-৩ কলামে আটটি ২০ মিলি রড। পাশাপাশি নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা হয় নিন্মমান ও ব্যবহার অনুপযোগী ইট। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাছিমা খাতুন বলেন, বার বার তাগাদা দেবার পরও স্থানীয় উপ-সহকারী প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন পত্রিকায় প্রকাশিত মূল কার্যাদেশ সরবরাহ করেনি। পরে তিনি মূল কার্যাদেশ গোপন রেখে চূড়ান্ত কার্যাদেশ বইতে চারতলা ফাউন্ডেশনের প্রস্তাবনা পরিবর্তন করেছেন। বিদ্যমান কার্যাদেশ অনুযায়ী নির্মাণ কাজ অব্যাহত থাকলে অন্তত ২০ লাখ টাকা ব্যয় কম হবে। অথচ মূল কার্যাদেশে দ্বিতল ভবনের জন্য দোতলা ফাউন্ডেশনের কোনো নির্দেশনা নেই বলে দাবি তার। তিনি আরও বলেন, আমাদের কাছে মূল কার্যাদেশের কপি রয়েছে, যা দিয়ে প্রমাণিত হবে নির্মাণপূর্ব চূড়ান্ত কার্যাদেশ বই পরিবর্তন করা হয়েছে।’বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য আলতাব হোসেন বলেন, বিধ্যালয় ভবন নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ করার পরও উপ-সহকারী প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন নির্মাণ কাজ অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেন। তার কথা মতোই কাজ করে ঠিকাদারের প্রতিনিধিরা। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে গত ২৪ আগস্ট এলাকাবাসী ওই নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সালমা বেগম জানান, অনিয়মের অভিযোগ এনে গত ২০ আগষ্ট স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীসহ সংশিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। আপাতত নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখান নির্দেশ দেন উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ। সিডিউল অনুসারে বিদ্যালয় ভবন নির্মান কাজ শেষ করার দাবী জানান তিনি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি শ্যামল কুমার এবং মোহাম্মদ ইউসুফ অনিয়মের অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে জানান, কার্যাদেশ অনুযায়ী তারা কাজ করছেন। নিন্মমানের উপকরণ ব্যবহারের অভিযোগ উদ্দেশ্য প্রণোদিত। উপ-সহকারী প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন জানান, অনুমোদিত নকশাসহ চূড়ান্ত কার্যাদেশ বইয়ের শুরুতে চারতলা ফাউন্ডেশনের নির্দেশনা এবং ভেতরের পৃষ্টায় দোতলা ফাউন্ডেশন করার কথা উল্লেখ থাকায় বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। ঠিকাদারের সাথে যোগসাজস করে নকসা পরিবর্তনের কথা অস্বীকার করেন তিনি। বড়াইগ্রাম উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুর রহিম জানান, পহেলা অক্টোবর ডিজাইন ও ড্রয়িং বইয়ের জটিলতার কথা উলেখ করে উর্দ্ধতন কতৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।