ডেস্ক নিউজ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলেও সরকার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে। নিত্যপণ্য মজুতদারদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, যারা মানুষের প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে কোনো রকমের খেলা খেলতে যাবে, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, সরকার জনগণের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এজন্য প্রতিটি ক্ষেত্রে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা থাকাটা অত্যন্ত জরুরি। রোববার সকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৪০টি নবনির্মিত ফায়ার স্টেশনের উদ্বোধনে দেওয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেওয়ায় অনেক উন্নত দেশে খাদ্যের জন্য হাহাকার দেখা দিয়েছে। সেখানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি। যে কোনো প্রকার মজুতদারির বিরুদ্ধে তিনি ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, যারা মানুষের প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে কোনো রকমের খেলা খেলতে যাবে, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।
দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধের কারণে বিদেশ থেকে যেসব জিনিস আমদানি করা হয়, সেগুলো আনা খুব কষ্টকর হয়ে গেছে। অনেক সময় পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক দেশ তাদের উৎপাদিত পণ্য আর রপ্তানি করছে না বা তারাও বিপদে আছে। এক্ষেত্রে আমাদের যে মাটি, মানুষ আছে তা ব্যবহার করে নিজেদের স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে। এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি থাকবে না। যেখানে যার যতটুকু আছে, তা আবাদ করতে হবে। নিজেদের প্রয়োজনীয় জিনিস নিজেরা উৎপাদন করে নিজেদের ব্যবহার করার ব্যবস্থা নিতে হবে। যেন কারও মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে না হয়। উৎপাদন বৃদ্ধি এবং দেশের সব জমি আবাদের আওতায় আনতে তিনি আবারও আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, শিল্প কলকারখানাসহ প্রতিটি ভবন যেখানে অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, বিভিন্ন ইনস্টিটিউশন, শপিংমল, বিনোদনকেন্দ্র, সিনেমা হল রয়েছে, সেখানে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। জলাধারগুলো সংরক্ষণ করতে হবে। পাশাপাশি বৃষ্টির পানি সংরক্ষণেরও ব্যবস্থা নিতে হবে। জলাধার ভরাট করে বক্স কালভার্ট করাটা ঠিক নয় উল্লেখ করে তিনি ২০০৯ সালে বসুন্ধরা শপিংমলের টাওয়ারের একটি অংশে অগ্নিকাণ্ডের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি বলেন, যেখানে বস্ন্ধুরা শপিংমল তৈরি হয়েছে, সেখানকার পুরো এলাকাটাই একসময় বিল ছিল। সেখানকার জলাধার ভরাট করে বক্স কালভার্ট করে পুরো এলাকার জলাধার বিলীন করে ফেলায় সেদিনের অগ্নিকাণ্ডে আগুন নেভানোর জন্য হোটেল সোনারগাঁওয়ের সুইমিংপুল থেকে দমকল কর্মীদের পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হয়েছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, দমকল বাহিনীর এখন ২০তলা পর্যন্ত অগ্নিনির্বাপণ সক্ষমতা রয়েছে এবং ক্রমেই এ সক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বহুতল ভবন নির্মাণের সময় দুর্ঘটনা ঘটলে সেখান থেকে উদ্ধার পাওয়ার সম্ভাবনা সম্পর্কে সবাইকে নিশ্চিত হয়ে নির্মাণ পরিকল্পনা করার পরামর্শ দেন তিনি। নিয়মিত অগ্নিনির্বাপণ মহড়ার আয়োজন এবং বহুতল ভবনে খোলা বারান্দা রাখার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
রাজধানীর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর ভবনে অনুষ্ঠিত মূল অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে পাঁচ বিভাগের ২৫টি জেলার ৩৯টি উপজেলার ৪০টি ফায়ার সার্ভিস স্টেশনও ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়। অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মোকাব্বির হোসেন বক্তৃতা করেন। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসাইন সূচনা বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে দমকল বাহিনীর আধুনিকায়ন এবং নবনির্মিত ৪০টি ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ওপর একটি ভিডিওচিত্রও প্রদর্শিত হয়।