ডেস্ক নিউজ
নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য সাশ্রয়ী আবাসন নির্মাণের পরিকল্পনা করছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এসব আবাসন নির্মাণে রাজউক এলাকায় সম্ভাব্য ৫৭টি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে প্রাথমিকভাবে মোহাম্মদপুর ও শ্যামপুর ম্যাচ কলোনি নিয়ে পাইলট প্রকল্প করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এবারের সংশোধিত ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানে (ড্যাপ) এ প্রস্তাবগুলো রাখা হয়েছে। এই উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন নগর বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের আবাসনের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ভূমি। তবে রাষ্ট্র চাইলে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব। এ বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ বলেন, গৃহায়ণের আবাসন নীতিমালায় বলা হয়েছে, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের আবাসন তৈরি করবে। যদি উচ্চবিত্তরা আবাসন সুযোগ-সুবিধা নিতে পারে তাহলে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষেরও এ অধিকার রয়েছে। ড্যাপে এই প্রস্তাব খুবই যুগোপযোগী। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের প্লট না দিয়ে ফ্ল্যাট দেওয়া হোক, কেননা এতে করে একটা ভবনে অনেক পরিবারের আবাসনের সুযোগ দেওয়া সম্ভব। কাজটি পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তাবিত ড্যাপে ১ হাজার ৫২৮ বর্গকিলোমিটার এলাকা রয়েছে। এতে আবাসিক ও বাণিজ্যিক- এই দুই মিশ্র ব্যবহার উৎসাহিত করা হয়েছে, যা পুরো ড্যাপের মধ্যে প্রায় ৩৩ শতাংশ। এখানে আবাসিককে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এর আগে ভাষাণটেকে রাজউক ও মিরপুর বেড়িবাঁধ সংলগ্ন বাউনিয়া এলাকায় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে, যা রাজধানীতে বসবাসরত নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য খুবই অপ্রতুল। আগের ড্যাপে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের আবাসনের জন্য ২২টি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষের কার্যকর প্রদক্ষেপের অভাবে তা বাস্তবায়ন হয়নি। নতুন প্রস্তাবিত ড্যাপে নির্ধারিত ৫৭টি স্থানে ১ লাখ ফ্ল্যাট নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এরই মধ্যে রাজধানীর দুটি এলাকায় (মোহাম্মদপুর ও শ্যামপুর কদমতলী) পাইলট প্রকল্প গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজউক। প্রকল্পের নথি থেকে জানা গেছে, আবাসন এলাকায় মৌলিক নাগরিক সুবিধাদি এবং অবকাঠামোর দরকার। সম্ভাব্য দুর্যোগ প্রশমনেরও কার্যকর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হয়। পরিকল্পনায় আবাসনের জন্য সম্ভাব্য এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। অন্তর্ভুক্তিমূলক আবাসনের জন্য প্রণোদনার প্রস্তাব থাকছে এই ড্যাপে। এ ছাড়া নিম্ন ও নিম্ন্ন মধ্যবিত্তের জন্য সুলভ আবাসনের সংস্থানের সুপারিশ করা হয়েছে। এই শ্রেণির আবাসনে নগরীর জনসংখ্যার বড় অংশ উপকৃত হবে। এ ছাড়াও নিম্নবিত্তের আবাসনের ব্যবস্থার বিপরীতে প্রণোদনা ফ্লোর এরিয়া রেশিও (ফার) দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদের মাধ্যমেও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য আবাসন জোগানের পথ প্রশস্ত হবে, যা সরকারের অন্যতম অঙ্গীকার ‘সবার জন্য আবাসন’সহ বাংলাদেশের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা-২০৪১ বাস্তবায়ন সহজ হবে। প্রস্তাবিত ড্যাপে সুপারিশ অনুযায়ী, ১ লাখ আবাসিক ইউনিট নির্মাণ করা হবে ২০৩৫ সালের মধ্যে। যা ন্যূনতম সুদহার (২.৫-৩ শতাংশ) ও দীর্ঘমেয়াদি কিস্তিতে (২৫-৩০ বছর)। অর্থাৎ সহজ শর্তে ঋণের জোগানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া কম মূল্যে ও গ্রহণযোগ্য মাসিক ভাড়ার ভিত্তিতে চূড়ান্তভাবে ফ্ল্যাটের মালিকানা হস্তান্তরের ব্যবস্থা করা, পর্যায়ক্রমে প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণ, রাস্তাসহ নাগরিক সুবিধার অবকাঠামো নির্মাণ প্রভৃতি সুপারিশ রয়েছে।
টিওডি আওতাভুক্ত এলাকায় ভাড়াভিত্তিক সাশ্রয়ী আবাসন প্রকল্প নির্মাণ : সুপারিশে বলা হয়েছে, বিদ্যমান সরকারি জীর্ণ কোয়ার্টারগুলো পুনঃনির্মাণ করে সেখানে ১৫-২০ শতাংশ ইউনিট নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্তের মানুষের আবাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ, সরকারি উদ্যোগে বাস্তবায়িত যে কোনো আকারের আবাসিক প্রকল্পে ১০-১৫ শতাংশ ইউনিট নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্তের মানুষের জন্য সংরক্ষণ, রাজউক ও জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় সরকার সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে প্রকল্প প্রস্তাবনা গ্রহণ করা। এ প্রসঙ্গে রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল ইসলাম বলেন, রাজধানীতে বসবাসরত অধিকাংশই নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ। তাদের আবাসনের জন্য সরকার চিন্তা করলেও তা নানাভাবে পিছিয়ে যায়। তবে এবার রাজউকের ডিটেল এরিয়া প্ল্যানে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের জন্য আবাসনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য রাজউক এরই মধ্যে দুটি পাইলট প্রকল্প হাতে নিতে স্থান নির্ধারণ করেছে। ড্যাপ গেজেট হলে এই দুটি প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। এসব আবাসন নির্মাণ সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে বাস্তবায়িত হবে, যা ২০৩৫ সালের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে।