ডেস্ক নিউজ
দলকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা নিয়ে হাঁটছে আওয়ামী লীগ। এরই মধ্যে পরিবর্তনে বার্তা নিয়ে মাঠ গোছাতে শুরু করেছে দলটি। আগামী ডিসেম্বরে হতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের ২২ তম জাতীয় সম্মেলন। সম্মেলনের আগেই নতুনমুখ খুজে নিচ্ছে দলটি। মৃত্যুজনিত কারণে শূন্য হওয়া সংসদীয় আসনগুলোর উপনির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ে ক্ষেত্রে এ বিষয়টি লক্ষ্য করা গেছে। একই পরিবাবারে বারবার মনোনয়ন দেয়ার সাংস্কৃতিক থেকে বেরিয়ে এসেছে দলটি।
আগামী দিনে আওয়ামী লীগকে ঢেলে সাজানো যে পরিকল্পনা রয়েছে, দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার; তারই প্রমাণ গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন। এ আসনে প্রয়াত ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার মেয়ে ফারজানা রাব্বি বুবলি দেয়নি দলটি। গাইবান্ধা-৫ এর উপনির্বাচনে সাবেক ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল হাসান রিপনকে দলীয় মনোনয়ন দিয়ে, আওয়ামী লীগ আবারও প্রমাণ করল; রাজনীতিতে ত্যাগী ও যোগ্যদের প্রাধান্য দেওয়ার বিষয়টি। করোনার সংকটকালে আওয়ামী লীগের যে সকল সংসদ সদস্য মারা গেছেন, তাদের আসনেও একই ধারা অব্যাহত রেখেছে দলটি। দলীয় মনোনয় দেওয়ার ক্ষেত্রে পরিবারতন্ত্র ভাঙছে আওয়ামী লীগ। বাবার মৃত্যুর পর সন্তান কিংবা স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রী এমনকি নিকট আত্মীয়রা এমপি হওয়া থেকে বাদ পড়েছে উপনির্বাচনগুলোতে।
এমপিদের পরিবার-পরিজনের বদলে তারুণ্যনির্ভর, দক্ষ, ত্যাগী ও জনপ্রিয় ব্যক্তিদের খুঁজে নিচ্ছে দলটি। জাতীয় সম্মেলনের কয়েক মাস আগে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদুল হাসান রিপনের দলীয় মনোনয়ন দেওয়ায় আওয়ামী লীগকে ঢেলে সাজানোর ইতিবাচক বার্তা বলে মনে করছেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ে সাবেক ছাত্রনেতাকে প্রাধান্য দেওয়া স্থানীয় রাজনীতিতে পারিবারিক প্রথা ভাঙার স্পষ্ট বার্তা। পাশাপাশি ছাত্রলীগ থেকে সাবেক হওয়া নেতাদের মধ্যে যারা রাজনীতির কোথায়ও অবস্থান নিতে পারেনি, দলের এই সিদ্ধান্তে তাদের মধ্যেও আশা জাগাচ্ছে। দলীয় পদ-পদবী না পাওয়াদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি করবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরে ৩০ জুলাই কুমিল্লা-৭ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক ডেপুটি স্পিকার অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ মৃত্যুবরণ করেন। এ আসনের উপনির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন চান অধ্যাপক আলী আশরাফের ছেলে এফবিসিসিআই-এর সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি মুনতাকিম আশরাফ টিটু।
টিটুকে দলীয় মনোনয়ন দেয়নি আওয়ামী লীগ। কুমিল্লা-৭ আসনে উপনির্বাচনে নৌকা মনোনয়ন দেওয়া হয়, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত চিকিৎসক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্তকে।
করোনাকালে ঢাকায় দুজন সংসদ সদস্য হারিয়েছে আওয়ামী লীগ। ঢাকা-১৮ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন। তিনি ২০২০ সালের ৯ জুলাই চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুতে শূন্য হয় ঢাকা-১৮ আসন। এ আসনে তার নিকট আত্মীয়ের কাউকে দলীয় মনোনয়ন দেয় নি আওয়ামী লীগ। সেখানে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হাবিব হাসানকে মনোনয়ন দেয় দল।
২০২০ সালের ৬ মে মৃত্যুবরণ করেন, ঢাকা-৫ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লা। মেল্লার মৃত্যুর পর ঢাকা-৫ আসনে তার বড় ছেলে মশিউর রহমান মোল্লা সজল চান নৌকার মনোনয়ন। এ নিয়ে দৌড়ঝাপ ও তদবির করেও কোনো কাজ হয় নি। পিতার পর ছেলেকে দেওয়া হয়নি নৌকার মনোনয়ন। এ আসনে যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী মনিরুল ইসলাম মনুকে দেয়া হয় দলীয় মনোনয়ন।
২০২০ সালের ২ এপ্রিল সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও পাবনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুতে শূন্য হয় পাবনা-৪ আসন। শূন্য হওয়া এই আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন ডিলুর স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে, খালাতো ভাইসহ একই পরিবারের ৬ জন সদস্য। সবাইকে চমক লাগিয়ে এ আসনে মনোনয়ন দেয়া হয় ঈশ্বরদী উপজেলার নির্বাচিত বর্তমান চেয়ারম্যান মো. নুরুজ্জামান বিশ্বাসকে। নুরুজ্জামান পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি এ অঞ্চলে মুজিব বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে যুদ্ধ করেন।
২০২০ সালের ১০ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন ৫ বারের এমপি ও সাবেক মন্ত্রী ডা. মোজাম্মেল হোসেন। তিনি বাগেরহাট-৪ আসনের এমপি ছিলেন। বাগেরহাট-৪ আসনের উপনির্বাচনে নৌকার মনোনয় চেয়ে পাননি ডা. মোজাম্মেল হোসেনের পুত্রবধূ ইসমত আরা শিরিন চৌধুরী। এ আসনে নৌকা পায় আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট আমিরুল আলম মিলন।
এবিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, আওয়ামী লীগ কখনও এমপিতন্ত্রকে প্রাধান্য দেয়নি। সব সময় প্রার্থীর জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতাকে দেখা হয়েছে। রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে কতটা গ্রহণযোগ্য সে বিষয়টি দেখা হয়েছে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, আওয়ামী লীগের সবকিছুই গণমুখী ও প্রগতিশীল চিন্তা থেকে করা হয়। দলকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা আওয়ামী লীগের সব সময়ই থাকে। সেখানে নবীনদের গুরুত্ব দেয়া হয়। যাতে ভবিষ্যতে দলকে আরও শক্তিশালী ও জনপ্রিয় করতে তুলতে পারে। আওয়ামী লীগ বদ্ধ জলাশয় নয়। দলকে যুগোপোযুগী করা, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আওয়ামী লীগকে ঢেলে সাজানো হয়। আওয়ামী লীগ হচ্ছে বহমান নদীর মত, তার নব্যতা রয়েছে, স্রোত রয়েছে। স্রোত তো বন্ধ করে দেয়া যাবে না।
মনোনয়ন প্রদানে প্রধানের বিষয়ে তিনি বলেন, যাদের জনপ্রিয়তা ও প্রয়োজনীয়তা, দলের সঙ্গে কাজ করছেন। দলের সঙ্গে কখনও বিশ্বাসঘাতকতা করেনি, যাদের সাহস রয়েছে তাদেরকে মূল্যায়ন করা হচ্ছে। একই পরিবারকে দিতে হবে এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেই। মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে অনেক কিছু বিবেচনায় আনা হয়। দলকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে জয়ীদের মনোনয়ন দেয়া হয়।