ডেস্ক নিউজ
রমজান মাস সামনে রেখে দেশের ১ কোটি নি¤œ আয়ের পরিবার সাশ্রয়ী মূল্যে টিসিবির ভোগ্যপণ্য পাবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা মেনে সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)র ভর্তুকি মূল্যের খাদ্য সহায়তার এই কার্যক্রম আজ রবিবার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ‘ফ্যামিলি কার্ডের’ ভিত্তিতে টিসিবির পণ্য বিক্রি করতে ইতোমধ্যে পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারী এ কার্যক্রমের ফলে দেশব্যাপী প্রায় ৫ কোটি দরিদ্র মানুষ সরাসরি উপকৃত হবেন। এছাড়া ভোগ্যপণ্যের বাজারের ওপর চাপ কমে এলে দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। ‘উপকারভোগী’ পরিবারের মধ্যে প্রতি লিটার ১১০ টাকা দরে ২ লিটার সয়াবিন তেল, ৫৫ টাকা কেজি দরে ২ কেজি চিনি, ৬৫ টাকা কেজি দরে ২ কেজি মসুর ডাল দেয়া হবে। এছাড়া ২ কেজি করে ছোলা পাবেন ৫০ টাকা দরে। দুই কিস্তিতে এক কোটি পরিবারের কাছে টিসিবির পণ্য পৌঁছে দেয়া হবে। প্রথম কিস্তি ২০ থেকে ৩০ মার্চ এবং দ্বিতীয় কিস্তি ৩ থেকে ২০ এপ্রিলের মধ্যে দেয়া হবে। তবে ঢাকা ও বরিশাল নগরীতে যেভাবে দেয়া হচ্ছে ঠিক সেভাবেই দেয়া হবে। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, যারা দারিদ্র্যসীমার নিচে আছেন তারা সবাই টিসিবির পণ্য পাবেন। বিতরণের আগের দিন সংশ্লিষ্ট ফ্যামিলি কার্ড হোল্ডারদের পণ্য বিক্রয়ের স্থান ও সময় জানিয়ে দেয়া হবে।
জানা গেছে, জ্বালানি তেলের দাম কমে আসায় আন্তর্জাতিক বাজারে সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। কিন্তু রমজান মাস সামনে রেখে দেশে অসাধু ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতা বেড়েছে। একারণে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মাঠে নেমেছে সরকার। এ লক্ষ্যে বেশকিছু কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। রমজানকে সামনে রেখে দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখতে মজুদ নিয়ন্ত্রণসহ আমদানিতে ভ্যাট-ট্যাক্স তুলে নেয়া হয়েছে। ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে সুযোগ নিতে না পারে সেজন্য দু-একদিনের মধ্যে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হবে। এ ছাড়া ভোগ্যপণ্যের অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা ও পণ্যের সরবরাহ বাড়াতে প্রশাসনিক পর্যায়ে শুরু হয়েছে নানামুখী তৎপরতা। এ কারণে কমতে শুরু করেছে ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, চিনি ও ছোলার মতো পণ্যের দাম। এছাড়া অন্যান্য পণ্যের দামও স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। নতুন করে আর কোন পণ্যের দাম বাড়েনি। খুব শীঘ্রই দ্রব্যমূল্য কমে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে আশা করছেন প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে বাজার মনিটরিংয়ের বিষয়টি সমন্বয় করছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বয়ং দ্রব্যমূল্য কমিয়ে আনার সরকারী সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের বিষয়গুলো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।
রমজান সামনে রেখে দেশে চাহিদার তুলনায় বেশি পরিমাণে ভোগ্যপণ্য আমদানি করা হয়েছে। সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবির সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। দেশে এখন রেকর্ড পরিমাণ ধান ও চালের মজুদ রয়েছে বলে জানিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু রোজা এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির হয়ে উঠছে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের এই অপকর্ম রুখে দিতে সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে কাজ শুরু করেছে সরকারের বিভিন্ন এজেন্সি। ভোজ্যতেলের অবৈধ মজুদের বড় বড় ভান্ডার ধরা পড়ছে অভিযানের মুখে। এ পরিস্থিতি বাজারে দ্রুত পণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি এবং দ্রব্যমূল্য কমিয়ে আনার লক্ষ্যে ১০টি উদ্যোগ রয়েছে প্রশাসনের। সরকারের নেয়া উদ্যোগগুলো হচ্ছে- ভোজ্যতেল ও চিনির শুল্ক প্রত্যাহার, ভারত থেকে ফের পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি, টিসিবির মাধ্যমে এক কোটি পরিবারের কাছে ভর্তুকির মূল্য খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেয়া, জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতরের নিয়মিত বাজারে অভিযান পরিচালনা, এলসি শূন্য মার্জিনের আমদানির সুযোগ, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর আওতায় ১০ টাকা কেজির চাল বিতরণ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাজার মনিটরিং টিম মাঠে নামানো, মজুদদারদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারি বৃদ্ধি ও বাজার পর্যবেক্ষণ, ফেরি পারাপারে পণ্য পরিবহনের অগ্রাধিকার ও পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে জেলা পুলিশের সহায়তা, পণ্য পরিবহনের সময় রাস্তায় কিংবা বাজারে চাঁদাবাজদের নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে পুলিশের নিয়মিত অভিযান পরিচালনার মতো পদক্ষেপ রয়েছে।
এর পাশাপাশি ভোগ্যপণ্যের আমদানি বৃদ্ধিতে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। রোজা সামনে রেখে দ্রব্যমূল্য কমিয়ে আনতে আরও যদি কোন পদক্ষেপ নিতে হয় সে ব্যাপারেও তাৎক্ষণিক যেকোন সিদ্ধান্ত নিতে পারবে প্রশাসন। এ প্রসঙ্গে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান জনকণ্ঠকে বলেন, এ মুহূর্তে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং ভোগ্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নামা হয়েছে। প্রশাসন সর্বশক্তি নিয়ে কাজ করছে। দ্রব্যমূল্য কমিয়ে আনা এবং ভর্তুকির মূল্যে খাদ্য সহায়তার বিষয়টি দ্রুত বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা রয়েছে। আর পুরো বিষয়টি সমন্বয় করছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। তিনি বলেন, ভোগ্যপণ্যের দাম কমাতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দফতর, অধিদফতর এবং সংস্থাগুলো একযোগে কাজ শুরু করেছে। ইতোমধ্যে বাজারে দ্রব্যমূল্য কমতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভোগ্যপণ্যের মজুদ রয়েছে এ তথ্য সরকারের কাছে রয়েছে। তাই যারা অপকর্ম ও কারসাজি করে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করবে আমরা তাদের ছাড়ব না। টিসিবির মাধ্যমে সারাদেশের এক কোটি পরিবার ভর্তুকি মূল্যের খাদ্য সহায়তা পাবেন। এর ফলে বাজারে পণ্যের চাহিদা কিছুটা হলেও কমবে। তখন ভোগ্যপণ্যের দাম আরও হ্রাস পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট যত শক্তিশালী হউক না কেন তারা রাষ্ট্রের চেয়ে বড় নয়। বাজার নিয়ন্ত্রণে পুরো প্রশাসন যার যার অবস্থান থেকে কাজ করছে।
নিম্ন আয়ের কোটি পরিবার পাচ্ছ ভর্তুকির খাদ্য সহায়তা ॥ দেশের নিম্ন আয়ের কোটি পরিবার পাবে টিসিবির ভর্তুকি মূল্যের খাদ্য সহায়তা। আজ রবিবার থেকে এই কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। এর আগে শুক্রবার রাজধানীর কাওরানবাজারে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সভাকক্ষে টিসিবি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু জানান, সরকারের আগের ভাতাভোগীদের সঙ্গে প্রান্তিক পর্যায়ের আরও ৫৭ লাখ নিম্ন আয়ের মানুষ পেয়েছেন ‘ফ্যামিলি কার্ড’। যারা রোজা উপলক্ষে এটি দিয়ে কিনতে পারবেন কম দামের টিসিবির পণ্য। আজ রবিবার থেকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে ‘এক কোটি পরিবারের’ এসব মানুষের কাছে কম দামে পণ্য বিক্রি করবে টিসিবি। তিনি বলেন, এ তালিকা করা হয়েছে করোনাভাইরাস মহামারীকালীন নগদ সহায়তা পাওয়া ৩০ লাখ পরিবারের সঙ্গে পরিসংখ্যান ব্যুরোর জনসংখ্যার দারিদ্র্যতার সূচক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় জেলা, উপজেলা, ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে। তবে ঢাকা ও বরিশাল নগরীতে কার্ড দেয়া যায়নি। জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ফ্যামিলি কার্ডের ভিত্তিতে টিসিবির পণ্য বিক্রি করতে ইতোমধ্যে প্রাথমিক প্রস্তুতিও শেষ হয়েছে বলে জানানো হয়। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, সারাদেশে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ৫৭ লাখ ১০ হাজার ‘উপকারভোগী’ পরিবারের মধ্যে টিসিবি পণ্য বিক্রি করতে ‘ফ্যামেলি কার্ড’ বিতরণ করা হয়েছে। করোনাকালীন সময়ে ৩০ লাখ পরিবারের নগদ সহায়তার ডাটাবেজের সঙ্গে এই ৫৭ লাখ ১০ হাজার ‘উপকারভোগী’ পরিবার নতুন যোগ করা হয়েছে বলে তিনি জানান। এতে স্থানীয় প্রশাসন, উপজেলা, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে নিয়ে এ তালিকা করা হয়েছে। এটা বলা যায় যে, ৮৭ লাখ পরিবার গ্যারান্টেড পাবেই। বলা যায় যে যারা দারিদ্র্যসীমার নিচে আছেন তারা সবাই পাবেন। তিনি বলেন, এক কোটি কার্ড মানে এতে অন্তত প্রতি পরিবারে ৫ জন করে যোগ করলে পাঁচ কোটি মানুষ প্রত্যক্ষভাবে এ সুযোগ পাবে। পরবর্তীতে যদি এই কার্ড স্থায়ীভাবে থেকে যায় এবং যদি আমরা চালিয়ে যাই, প্রধানমন্ত্রী সেভাবে নির্দেশ দেবেন সামনের দিনগুলোতে একই প্রক্রিয়া যাব। ঢাকা ও বরিশাল নগরীতে কার্ড দিতে না পারার কারণ জানিয়ে তিনি বলেন, ঢাকা ও বরিশালে দিতে পারেনি, ঢাকা ও বরিশালে যেভাবে ছিল সেভাবেই আমরা দেব। দরকার হলে নাম্বার মেইনটেন করব। ঢাকার পাশাপাশি বরিশালেও একই ব্যবস্থায় দেয়া হবে। তিনি জানান, টিসিবির জন্য এক কোটি চাপটা অনেক বেশি। ক্ষমতার অনেকগুণ দায়িত্ব নিতে হয়েছে। তারপরও সেটা কাভার করতে পেরেছে। তারা সেটা পারবে। যারা সত্যিকার অর্থে টিসিবি পণ্য পাওয়ার কথা তারা পাচ্ছে না, এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ঢাকায় ১২ লাখকে আগের প্রক্রিয়ায় দেয়া হবে। এর বাইরে আমরা ঠিক করেছি যে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে যতবেশি মানুষের কাছে পৌঁছানো যায়। এর বাইরে যাতে কেউ সুযোগ না নিতে পারে। ট্রাকে করে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হবে জানিয়ে টিপু মুনশি বলেন, আগেই বলে দেয়া হবে কোথায় ট্রাক থাকবে। সেখানে কোন কোন কার্ড হোল্ডার থাকবেন তাও আগে থেকে বলে দেয়া হবে। শ্রমিক অধ্যুষিত এলাকায় ছুটির দিন শুক্রবার ট্রাক যাওয়ার বিষয়ে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
রোজার আগে হুড়াহুড়ি করে পণ্য না কেনার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এতে করে অসাধু ব্যবসায়ীরা সুযোগ নেয় এবং পণ্যের দাম বাড়ে। দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের যথেষ্ট মজুদ রয়েছে। এ কারণে বেশি করে ভোগ্যপণ্য কেনার প্রয়োজন নেই। সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশের বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ার জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে দরবৃদ্ধির প্রভাব ছাড়াও ‘অসাধু ব্যবসায়ীদের’ সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ আরিফুল হাসান জানান, রমজানের আগে ও রমজানের মধ্যে দুই দফা এক কোটি নিম্ন আয়ের পরিবারের মধ্যে কার্ডের ভিত্তিতে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হবে। রবিবার থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত রোজার আগে প্রথম পর্বে সয়াবিন তেল, চিনি, মসুর ডাল বিক্রি করা হবে। এরপর রোজা শুরু হলে ৩ এপ্রিল থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত দ্বিতীয় পর্বে ওই তিন পণ্যের পাশাপাশি ছোলাও বিক্রি করা হবে বলে জানান টিসিবির চেয়ারম্যান। এছাড়া ঢাকায় এসব পণ্যের সঙ্গে খেজুরও বিক্রি করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘উপকারভোগী’ পরিবারের মধ্যে প্রতি লিটার ১১০ টাকা দরে ২ লিটার সয়াবিন তেল, ৫৫ টাকা কেজি দরে ২ কেজি চিনি, ৬৫ টাকা কেজি দরে ২ কেজি মসুর ডাল দেয়া হবে। এ ছাড়া ২ কেজি করে ছোলা পাবেন, ৫০ টাকা দরে। এছাড়া ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ১২ লাখ এবং বরিশাল সিটি করপোরেশনে ৯০ হাজার পরিবারকে কার্ড প্রদান করা সম্ভব হয়নি। ভ্রাম্যমাণ ট্রাক সেলের মাধ্যমে তাদের কাছে টিসিবি’র এ সকল পণ্য বিক্রয় করা হবে।
ভোজ্যতেলের মিলমালিকদের সঙ্গে আজ বৈঠক ॥ তিনস্তরে ভ্যাট কমানোর সুবিধা ভোক্তা পর্যায়ে কার্যকর করতে আজ রবিবার বেলা ৩টায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে জরুরী বৈঠক ডাকা হয়েছে। সভায় ভোজ্যতেলের আমদানিকারক, মিলমালিক, রিফাইনার ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা উপস্থিত থাকবেন। ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণসহ ভোক্তা পর্যায়ে দাম কমিয়ে আনতে এই বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। এদিকে, আসন্ন রমজান মাস সামনে রেখে দাম কমাতে ভোজ্যতেল ও চিনির মতো অতিপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। নিত্যপণ্যের বাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সরকার এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এতে সয়াবিনের আমদানি পর্যায়ে ১০ শতাংশ, উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ এবং ভোক্তা পর্যায়ে ৫ ভাগ অর্থাৎ মোট ৩০ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে। গত কয়েক দশকের মধ্যে দেশে এখন সর্বোচ্চ দামে ভোজ্যতেল বিক্রি হচ্ছে। ভ্যাট কমানোর এই সিদ্ধান্ত সঠিকভাবে কার্যকর হলে খুচরা পর্যায়ে দাম অনেক কমে আসবে। অথচ প্রজ্ঞাপন জারির পরও খুচরা বাজারে দাম কমেনি। ভ্যাট কমানোর সুফল যাতে ভোক্তারা পান সেদিকে তদারকি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বর্তমান বাজারে সয়াবিন তেলের প্রতিলিটার বোতলের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৬৮ টাকা। ঘোষিত হারে ভ্যাট প্রত্যাহার করা হলে প্রতি লিটারে দাম ২৯-৩০ টাকার মতো কমতে পারে বলে ধারণা দিয়েছেন সয়াবিন তেল আমদানিকারক অন্যতম কোম্পানি সিটি গ্রুপের বিপণন বিভাগের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা। তিনি জানান, ভ্যাট কমানোর ইতিবাচক প্রভাব বাজারে পড়বে। এছাড়া বাংলাদশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হাজী মোহাম্মদ আলী ভুট্টো জনকণ্ঠকে বলেন, রমজান সামনে রেখে ব্যবসায়ীরা আগেই ভ্যাট কমানোর দাবি জানিয়ে আসছিল। অবশেষে ভ্যাট প্রত্যাহার করায় ভোজ্যতেলের বাজারে স্বস্তি ফিরে আসবে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে। এছাড়া বৈশ্বিক অন্যান্য সঙ্কটের মুখে অস্থির বাজার। সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে ভোগ্যপণ্যের বাজার স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
বাজারে গোয়েন্দা নজরদারি ও অভিযান পরিচালনা আরও জোরদার করা হচ্ছে ॥ রোজা সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম কমাতে বাজারে অভিযান আরও জোরদার করা হচ্ছে। বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট দেখিয়ে দ্রব্যমূল্য বাড়ানো ও অবৈধভাবে মজুদ করার বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, ইতোমধ্যে তারা সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের তালিকা করেছেন। তালিকা অনুযায়ী প্রত্যেকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও গুদামে নজরদারি করা হচ্ছে। একইসঙ্গে প্রতিটি পাইকারি বাজারে সাদা পোশাকে নজরদারি করা হচ্ছে। যেসব ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের সদস্য হয়ে অধিক মুনাফার আশায় বাজারে সঙ্কট তৈরি করছেন, তাদের বিরুদ্ধে মামলাসহ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনায় পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে একাধিকবার বৈঠকও করেছেন।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, আমরা বাজারের অসাধু ব্যবসায়ীদের কর্মকা- মনিটরিংয়ের কাজ শুরু করেছি। গোয়েন্দা পুলিশের সব ইউনিটকে এ বিষয়ে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে সিন্ডিকেট তৈরি করে কোনও পণ্যের দাম বাড়াতে না পারে, সেজন্য নজরদারি চলছে। প্রয়োজনে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাও নেয়া হবে। একাধিক গোয়েন্দায় সংস্থার সদস্যরা জানান, ‘সম্প্রতি সয়াবিন তেলের দাম বাড়ার পর আরও সঙ্কট দেখিয়ে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী বেশি দামে বিক্রি করছে। বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে সমালোচনা শুরু হলে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিষয়টি দেখতে বলা হয়। এই নির্দেশনার পরপরই ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ গোয়েন্দা ইউনিটকে অসাধু ব্যবসায়ীদের ধরতে নজরদারি করতে বলে।
গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, তারা ইতোমধ্যে রাজধানী ঢাকার ভেতরে যত পাইকারি বাজার রয়েছে, সেই তালিকা করে বাজার অনুযায়ী আড়দদার ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের তালিকা করা শুরু করেছেন। কে কোন পণ্য আমদানি-রফতানি করে, সেই তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি কার কোথায় গুদাম রয়েছে, তা জানার চেষ্টা চলছে। ছদ্মবেশে বা ক্রেতা সেজে সাদা পোশাকে গোয়েন্দারা এসব পাইকারি মার্কেট থেকে পণ্য কেনার পর-সঙ্কট তৈরির হোতাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, প্রতিবছর রমজান আসার আগে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী পণ্য গুদামজাত করে বাজারে সঙ্কট তৈরি করে। পরে তা বেশি দামে বিক্রির চেষ্টা করে। চলতি বছরও আসছে রমজানের আগেই বাজার কিছুটা অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে ঢাকার বাইরে থেকে আনা পণ্য কেন দ্বিগুণ বা তিনগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে, তার কারণ অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।
পুলিশের বিশেষ শাখার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্যান্য বছরের মতো চলতি বছরেও রমজান মাসে বিভিন্ন পণ্যের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে দ্রব্যমূল্য উর্ধগতিতে তোলার জন্য একটি সিন্ডিকেট কাজ করছে। এখন থেকেই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা ও নজরদারি করা না হলে পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে সরকারের ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে ক্ষুণ্ণ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এই সিন্ডিকেট সরকারকে বেকায়দায় ফেলে রাজনৈতিক ফায়দা নিতে পারে। এজন্য গোয়েন্দা প্রতিবেদনে কয়েকটি সুপারিশও করা হয়েছে।
ঢাকার বাইরে থেকে পণ্য আসার ক্ষেত্রে পথের সব ভোগান্তি, বিশেষ করে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। কনজিউমার এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, বাজারে এমনভাবে নজরদারি করতে হবে যাতে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি না হয়-আবার অসাধু ব্যবসায়ীরাও যাতে কোন কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করতে না পারে। অর্থাৎ দুষ্ট দমনের পাশাপাশি শিষ্টের পালন করতে হবে। ভাল ব্যবসায়ীদের উৎসাহ দিতে হবে। আর খারাপ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। তাহলেই বাজারে একটা স্থিতিশীল পরিবেশ আসতে পারে।