ডেস্ক নিউজ
সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলোকে ‘রহস্যজনক’ উল্লেখ করে একটি মহল পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বন্ধের ষড়যন্ত্র করছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। যারা পদ্মা সেতুর বিরোধিতা করেছিল তারা এমন কিছু ঘটাতে পারে যাতে আমরা উদ্বোধনটা করতেই না পারি। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নজর রাখতে হবে। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। ষড়যন্ত্রের বিষয়ে তিন বাহিনী ছাড়াও অন্য সব বাহিনীর প্রধান ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এত বড় একটা চ্যালেঞ্জ দিয়ে যে কাজটা (পদ্মা সেতু নির্মাণ) আমরা সম্পন্ন করেছি, যারা এর বিরোধিতা করেছিল তাদের কিন্তু একটা উদ্দেশ্য আছে। কিছু কিছু তথ্য আমরা পেয়েছি- যেমন একটা ঘটনা ঘটানো হবে যেন ২৫ তারিখে আমরা উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করতে না পারি। কী করবে তা জানি না। তবে ইতোমধ্যে আপনারা দেখেছেন রেলে আগুন, লঞ্চে আগুন, ফেরিতে আগুন, এমনকি সীতাকুণ্ডে যে আগুনটা, সেটাও কিন্তু একটা জায়গা থেকে আগুন ধরে; কিন্তু বিক্ষিপ্ত কয়েকটা জায়গায় একসঙ্গে আগুন ধরে কীভাবে? আর রেলের আগুনটার একটা ভিডিও আমরা পেয়েছি নিচের দিক থেকে, রেলের চাকার কাছ থেকে আগুন জ্বলছে, এটা কী করে হয়? নিশ্চয়ই বিষয়গুলো রহস্যজনক। এজন্য আমি বলব সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। আমাদের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর দিকে সবার নজর দিতে হবে। নিরাপত্তা দিতে হবে। সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ড. ইউনূসের প্ররোচনায় বিশ্বব্যাংক আমাদের টাকাটা (পদ্মা সেতু নির্মাণে) বন্ধ করে দিয়েছিল। আমি তখন ঘোষণা দিয়েছিলাম পদ্মা সেতু নিজের টাকায় করব। যেদিন নিজের টাকায় করতে পারব সেদিনই করব। অনেকেই ভেবেছিল- এটা বোধহয় আমরা কোনো দিন করতে পারব না। কিন্তু আল্লাহর রহমতে আমরা কিন্তু সেটা করে ফেলেছি। এ ক্ষেত্রে আমি বলব এখন সবাই যেহেতু এখানে উপস্থিত আছেন- আপনাদের সবাইকে কিন্তু সতর্ক থাকতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতের নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হাইটেক পার্ক করে দিচ্ছি, ইনকিউবেটর, কম্পিউটার ল্যাব করে দিয়ে আমরা প্রযুক্তি শিক্ষার দিকে নজর দিয়েছি। পাশাপাশি স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করেছি। আমাদের পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র আমরা নির্মাণ করে যাচ্ছি। চলাচলের সুবিধার জন্য মেট্রোরেল করছি, আজকে সেটাও দৃশ্যমান। আমরা এক্সপ্রেসওয়ে করে দিচ্ছি, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। কাজেই এখানে আমাদের বাহিনীর প্রধানরা যারা আছেন আমাদের এ ব্যাপারে আরও উদ্যোগ নিতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, মনে রাখতে হবে, যখনই আমরা এগিয়ে যাই কোনো কোনো মহল তখনই নানা ধরনের ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করে। এটা আমাদের দুর্ভাগ্য। সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকার জন্য আমি অনুরোধ জানাব। যেহেতু এখানে আমাদের তিন বাহিনীর প্রধান আছেন, সেজন্যই বললাম প্রত্যেককে এ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে অপকর্ম বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, প্রযুক্তি আমাদের উন্নয়নের জন্য নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে। আবার যারা বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত তাদেরও কিন্তু সুযোগ করে দেয়। কাজেই সেদিকে লক্ষ্য রেখে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি বলেন, প্রযুক্তি যেমন আমাদের সুযোগ দেয় আর্থসামাজিক উন্নয়নে আবার প্রযুক্তির মাধ্যমেই ধ্বংসাত্মক কাজের ধরন পাল্টে যায়। এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা- এ বিষয়ে আমরা এসএসএফকে যতটুকু পারি শক্তিশালী করেছি। অন্য বাহিনীগুলোর জন্যও আমরা করে যাচ্ছি। আমাদের তো বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। পাশাপাশি সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমন করতে হবে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, আল্লাহর রহমতে আমাদের প্রতিটি বাহিনী সজাগ ও সচেতন। একটা দুর্ঘটনা ঘটেছিল; এর পর থেকে গোয়েন্দা সংস্থা, সেনা-নৌ-বিমান বাহিনী, পুলিশ-র্যাব-আনসার ভিডিপি-বিজিবি প্রত্যেকে কিন্তু দায়িত্ব পালন করেছে। এর ফলে আমরা সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদকে নিয়ন্ত্রণ এবং দমন করতে পেরেছি। এ বিষয়ে আমাদের সব সময় সচেতন থাকতে হবে। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মজিবুর রহমান। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক ও মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
পরিবেশ রক্ষায় প্রত্যেকে কমপক্ষে একটি করে গাছ লাগান : আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকারের পাশাপাশি তাঁর দল জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল প্রভাব থেকে পরিবেশ ও মানুষকে রক্ষায় যথাযথ ও সময়মতো বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বৃক্ষরোপণের প্রচারাভিযান চালাতে কমপক্ষে প্রত্যেককে একটি করে গাছের চারা রোপণে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল সকালে গণভবনে বাংলাদেশ কৃষক লীগের তিন মাসব্যাপী বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় কৃষক লীগ সভাপতি সমির চন্দ ও সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি উপস্থিত ছিলেন। এর আগে, প্রধানমন্ত্রী ষষ্ঠ ‘আদমশুমারি ও গৃহগণনা-২০২২’-এর উদ্বোধন করেন, যা সফল করতে ১৫ থেকে ২১ জুন পর্যন্ত এই প্রথমবারের মতো ডিজিটাল পদ্ধতিতে দেশব্যাপী পরিচালিত হবে।
রেমিট্যান্সের প্রবাহ স্বাভাবিক ধারায় ফিরতে শুরু করেছে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ বিশ্বে অন্যতম উচ্চ রেমিট্যান্স অর্জনকারী দেশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স অর্জিত হয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে এটি রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে, যা পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। সেই সুবাদে প্রবাস আয় প্রাপ্তিতে বিশ্বে সপ্তম স্থান অধিকার করে বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছর রেমিট্যান্স হ্রাস পাচ্ছে না বলে বলা যেতে পারে। রেমিট্যান্সের প্রবাহ কভিড-পূর্ববর্তী স্বাভাবিক ধারায় ফিরতে শুরু করেছে। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে গতকাল সংসদের বাজেট অধিবেশনে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে স্পিকার বলেন, প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত। জাতীয় পার্টির এমপি মো. রুস্তম আলী ফরাজীর তারকা চিহ্নিত লিখিত প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা সংসদে পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, ২০২১-২২ অর্থবছরে রেমিট্যান্স কিছুটা হ্রাস পেয়েছে এবং জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে ১৭ দশমিক ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্জিত হয়েছে, যা পূর্ববর্তী অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬ দশমিক ২৫ শতাংশ কম। বিগত ২০১৯-২০, ২০১৮-১৯ ও ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসের রেমিট্যান্সের গড় ছিল ১৩ দশমিক ৪২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, কভিড-পূর্ববর্তী তিন বছরের প্রথম ১০ মাসে প্রাপ্ত রেমিট্যান্সের গড় অপেক্ষা ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে প্রাপ্ত প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধি ২৮ দশমিক ৯১ শতাংশ বেশি। কাজেই চলতি অর্থবছরে রেমিট্যান্স হ্রাস পাচ্ছে না বলে বলা যেতে পারে। রেমিট্যান্সের প্রবাহ কভিড-পূর্ববর্তী স্বাভাবিক ধারায় ফিরতে শুরু করেছে।
অন্যদিকে ২০২০-২১ অর্থবছরে কভিড মহামারির সময় প্রবাসী আয়ের স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি ঘটেছিল। এ সময় প্রধানমন্ত্রী চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবাসী আয় হ্রাসের কারণসমূহ তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি কভিড-১৯ অতিমারিকে সফলভাবে মোকাবিলা করে স্বাভাবিক ধারায় ফিরে এলেও বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগকারী প্রধান প্রধান দেশের অর্থনীতিসমূহ এখনো স্বাভাবিক ধারায় ফিরে আসেনি। ফলে ওই দেশগুলোতে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীদের প্রবাসী আয় তুলনামূলকভাবে কম থাকায় রেমিট্যান্স প্রেরণ কম হয়েছে। তিনি বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরের শুরুতে কভিড অতিমারিতে প্রবাসীরা এক ধরনের অনিশ্চয়তা থেকে তাদের জমানো টাকা দেশে পাঠিয়েছিলেন। অনেকে চাকরি হারিয়ে কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করে সব অর্থ দেশে নিয়ে এসেছেন। এখন পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। অনেক প্রবাসী নতুন করে ব্যবসা শুরু করতে গিয়ে দেশে রেমিট্যান্স পাঠানো কমিয়ে দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধি ও বৈধ পথে প্রবাসী আয় প্রেরণকে আকর্ষণীয় করে তোলার মাধ্যমে পুনরায় রেমিট্যান্স প্রবাহ জোরদার করতে সরকারের গৃহীত পরিকল্পনাসমূহ তুলে ধরেন। এ সময় তিনি বলেন, বৈধ পন্থায় রেমিট্যান্স প্রেরণকে উৎসাহিত করার জন্য সরকার ২০১৯ অর্থবছর থেকে প্রেরিত প্রবাসী আয়ের ওপর ২ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা প্রদান করছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ওই নগদ প্রণোদনা ২ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ২.৫ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরও এ খাতে ২ দশমিক ৫ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনাসহ প্রণোদনা প্রদানের প্রক্রিয়া সহজীকরণে গৃহীত পদক্ষেপসমূহ অব্যাহত রাখা হবে। এ ছাড়া বৈধ উপায়ে যে কোনো পরিমাণ রেমিট্যান্স প্রেরণের বিপরীতে নগদ প্রণোদনা প্রাপ্তির জন্য রেমিট্যান্স প্রেরণকারীকে কোনো ধরনের কাগজপত্র প্রদান করতে হবে না। তিনি বলেন, আগে ৫ হাজার মার্কিন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স প্রেরণের ক্ষেত্রে নগদ প্রণোদনা প্রাপ্তির জন্য প্রবাসী আয় প্রেরণকারীর কাগজপত্র (যেমন- পাসপোর্ট, নিয়োগপত্র বা ব্যবসায় লাইসেন্সের কপি) বিদেশের এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে প্রেরণের বাধ্যবাধকতা ছিল। সরকার এই বাধ্যবাধকতা তুলে দিয়েছে। এ ছাড়া রেমিট্যান্স প্রেরণ সহজীকরণের লক্ষ্যে প্রত্যন্ত অঞ্চলে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রেরণ উৎসাহিত হচ্ছে।
সংসদ নেতা বলেন, বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ১৭০টি দেশে বাংলাদেশের ১ কোটি ২০ লাখের অধিক কর্মী কর্মরত আছেন। কভিড-১৯ অতিমারির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার নতুন নতুন শ্রমবাজার অনুসন্ধানে সচেষ্ট রয়েছে। ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী কভিড-১৯ অতিমারি সত্ত্বেও ২ লাখ ১৭ হাজার ৬৬৯ জন বাংলাদেশি কর্মীর বৈদেশিক কর্মসংস্থান হয়েছে। ২০২২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত প্রথম চার মাসে ৪ লাখ ২৬ হাজার ৫৫৮ জনকে প্রবাসে নিয়োগ করা হয়েছে। নিয়োগের এই ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত থাকবে। ফলে আগামীতে রেমিট্যান্স উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে।
মেগা প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা ত্বরান্বিত হচ্ছে : জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমামের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বৈদেশিক আর্থিক সহায়তায় বাস্তবায়িত মেগা প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা ব্যাহত নয় বরং ত্বরান্বিত হচ্ছে। দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সব ক্ষেত্রে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে প্রয়োজন মোতাবেক প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। এসব প্রকল্পে বৈদেশিক অর্থায়ন থাকায় প্রকল্প-সংক্রান্ত আমদানি ব্যয় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভারসাম্যে কোনো বিরূপ প্রভাব ফেলবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নকালে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। প্রকল্পকেন্দ্রিক অনেক ব্যাকওয়ার্ড ও ফরওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে উঠেছে। ফলে পরোক্ষভাবে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা মূলত ব্যাহত হওয়ার পরিবর্তে ত্বরান্বিত হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ঋণের সুদের হার তুলনামূলকভাবে অনেক কম এবং ঋণ পরিশোধের মেয়াদ ও গ্রেস পিরিয়ডও অনেক। ঋণের অর্থ অবমুক্তির ক্ষেত্রে বড় কোনো জটিলতা পরিলক্ষিত হয়নি। এ সময় প্রধানমন্ত্রী সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়িত পদ্মা সেতুসহ চলমান ১৬টি মেগা প্রকল্পের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। এর মধ্যে তিনি ১৪টি প্রকল্পের ব্যয়ের তথ্যও উপস্থাপন করেন। উপস্থাপিত তথ্যমতে, এসব প্রকল্পের মোট প্রাক্কলিত ব্যয় প্রায় ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন প্রায় ১ লাখ ৫৪ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ ৩ লাখ ৩৫ হাজার ২৮০ কোটি টাকা।
ভারতের সঙ্গে ৪ হাজার ৬৪৬ দশমিক ৭৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের চুক্তি রয়েছে : জাতীয় পার্টির এমপি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে তৈরি হয়েছে ভারত-বাংলাদেশ সুদৃঢ় সম্পর্ক। এই সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সহযোগিতার মাধ্যমে, যার শুরু স্বাধীনতার পর পরই। এ সময় তিনি সংসদে ২০০৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত স্বাক্ষরিত চুক্তির একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরেন, যার মধ্যে তিনটি লাইন অব ক্রেডিট চুক্তি অনুযায়ী ৩২টি প্রকল্পের বিবরণ রয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী যার আর্থিক মূল্য ৪ হাজার ৬৪৬ দশমিক ৭৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ২৬ মে পর্যন্ত ১ হাজার ৫২ দশমিক ২৮ মিলিয়ন ডলার ছাড় করা হয়েছে বলে সংসদে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, লাইন অব ক্রেডিটের আওতাধীন প্রকল্পসমূহের মধ্যে ৪০৪ দশমিক ২৪ মিলিয়ন ডলার মূল্যমানের ১৪টি প্রকল্প সমাপ্ত হয়েছে। ৪ হাজার ২১৮ মিলিয়ন ডলার মূল্যমানের ১৮টি প্রকল্প চলমান রয়েছে এবং ২ হাজার ৫৪ দশমিক ৩৬ মিলিয়ন ডলার মূল্যমানের ১০টি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ ছাড়া ২৪৭ দশমিক ৮১ মিলিয়ন ডলার অনুদান রয়েছে।
নিত্যপণ্যের অবৈধ মজুদ ও মূল্য বৃদ্ধির চেষ্টা প্রতিরোধে টাস্কফোর্স : সরকারি দলের এ কে এম রহমতুল্লাহর তারকা চিহ্নিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অতিমারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থার অবনতি ঘটে। ফলে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি দেখা দেয় এবং নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশে দ্রব্যসামগ্রীর উৎপাদন বৃদ্ধি ও সরবরাহ অব্যাহত রাখা সম্ভব হচ্ছে। দুঃখের বিষয় হলো, দেশের অভ্যন্তরে কিছু অসাধু ব্যক্তি এ সুযোগ নিয়ে নিত্যপণ্যের অবৈধ মজুদ ও মূল্য বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী জানান, সেই অবস্থা থেকে সাধারণ মানুষের অসুবিধার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি, অবৈধ মজুদ, বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাণিজ্যমন্ত্রীকে উপদেষ্টা করে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন একটি টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করা হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে সভাপতি করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দফতর, সংস্থা, গোয়েন্দা প্রতিনিধি ও এফবিসিসিআইকে নিয়ে ১৭ সদস্যের এ টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের পদক্ষেপের পর কেউ অবৈধভাবে কোনো পণ্য মজুদ করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।