১০ থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে একটি মাইলফলক স্পর্শ করবে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। ওই দিনই শতভাগ দৃশ্যমান হবে মূল সেতু। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার এই সেতুর সর্বশেষ স্প্যান ওই সময়ে বসবে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে। এর মধ্য দিয়ে পদ্মার এপার-ওপার সংযোগ স্থাপনের প্রথম পর্বের সমাপ্তি ঘটবে। শেষ স্প্যান বসানোর দিনে উপস্থিত থাকবেন সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
২০২১ সালের ডিসেম্বরে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে যান চলাচলের জন্য পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ার লক্ষ্য সামনে রেখে ক্রমেই দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে সেতুর কাজ। ইতিমধ্যে সেতুর সড়ক ও রেল অংশের স্লাব বসানোর কাজও এগিয়েছে অনেকদূর। সর্বশেষ স্প্যান বসানোর পর এই কাজে আরও গতি আসবে। একই সঙ্গে চলবে সেতুর দুই প্রান্তে সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজও। পদ্মা সেতু প্রকল্প সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে, দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগকে পেছনে ফেলে ২০১৪ সালের ১২ ডিসেম্বর যে স্বপ্নের বীজ বুনা হয়েছিল পদ্মার পাড়ে সেই স্বপ্ন এখন একেবারে তীরে ভেড়ার অপেক্ষায়। আর মাত্র কয়েকটা মাস অপেক্ষা। স্থাপন হবে উন্নয়নের মাইলফলক। তার পরই স্বপ্ন উড়বে পদ্মার এপার-ওপার। উল্লাস আর উচ্ছ্বাসে মেতে উঠবে গোটা জাতি। দূরত্ব কমে যাবে দেশের এক অঞ্চলের সঙ্গে অন্য অঞ্চলের। অর্থনীতির চাকাও ঘুরবে দ্রুত বেগে। অর্থনীতির ভীত শক্তিশালী করতে ভূমিকা রাখবে দেশের দুই ভাগকে এক করা পদ্মা সেতু। বাড়বে জীবনযাত্রার মান। পদ্মা সেতু নতুন বার্তা পৌঁছে দেবে দেশ এবং দেশের বাইরে।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পর পদ্মায় সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেলিনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সেতু নির্মাণের জন্য প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু হয় ১৯৯৮ সালে। ২০০১ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত জাপানি অর্থ সহায়ক সংস্থা (জাইকা) সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ করে। ওই সময়েই ২০০১ সালের ৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। যার মধ্য দিয়ে সেতু নির্মাণের বীজ বপন করা হয়।
মাঝখানের ৮ বছর খুব একটা অগ্রগতি না হলেও ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত হয় নকশা চূড়ান্তকরণের কাজ। দীর্ঘ পথপরিক্রমায় ২০১৪ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতু নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। ২০১৫ সালে জানুয়ারিতে নিজস্ব অর্থায়নে পুরোদমে কাজ শুরু হয় ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের স্বপ্ন বাস্তবায়নের কাজ।
ইতিমধ্যে মূল সেতুর ৪১টি স্প্যানের মধ্যে ৩৬টি স্প্যান বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে সেতুর ৫ হাজার ৪০০ মিটার দৃশ্যমান হয়ে গেছে। এখন আর পাঁচটি স্প্যান বসানো শেষ হলেই সম্পন্ন সেতুর মূল স্ট্রাকচার তৈরির কাজ। আগামী মাসের ১০ থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যেই সর্বশেষ স্ট্রাকচারটি বসানো হবে বলে সেতু বিভাগ এবং পদ্মা সেতু প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে। শেষ স্প্যান বসানোর সময় সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের উপস্থিত থাকবেন।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতু প্রকল্পের স্প্যান বসানোর পাশাপাশি সেতুর ওপরের অংশে চার লেন সড়কের স্লাব বসানো হচ্ছে। নিচের অংশে বসানো হচ্ছে রেললাইনের স্লাব। সেতুর জাজিরা প্রান্ত থেকে সড়ক ও রেলপথের স্লাব বসানো শুরু হয়েছিল গত বছরের শেষ দিকে। এখন স্লাব বসানোর কাজ সেতুর মাঝামাঝি অংশে চলে এসেছে। দেশি-বিদেশি শ্রমিকরা ভারী যন্ত্রপাতির মাধ্যমে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সমানে স্লাব বসানোর কাজ করছেন। স্প্যান বসানোর কাজ শতভাগ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্লাব বসানোর কাজ আরও দ্রুত গতিতে চলবে। ওপরে চার লেন সড়কের বিপরীতে নিচ দিয়ে চলবে দোতলা ট্রেন।
সেতুর রেলপথে বসবে মোট ২ হাজার ৯৫৯টি স্লাব। যার সবগুলোই ইতিমধ্যে প্রস্তুত করা হয়ে গেছে। এর মধ্যে গতকাল বসানো হয়েছে ১ হাজার ৬৮১টি। এই স্লাবের ওপর রেলের পাটাতন ও রেললাইন বসানোর কাজও চলছে। অন্যদিকে সেতুর ওপরে সড়ক ভাগে স্লাব বসবে মোট ২ হাজার ৯১৭টি। এর মধ্যে ১ হাজার ১৮৯টি স্লাব বসানো হয়েছে।
প্রকল্প সূত্র জানিয়েছে, আগামী ২০২১ সালের ৩০ জুনের মধ্যে পদ্মা সেতু প্রকল্পের সড়ক অংশের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়ে যাবে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অর্থাৎ আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই মূল সেতুর কাজ শেষ হবে এবং যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া যাবে।