বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘করোনার মাঝেও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ার বড় কারণ সরকারের দেয়া দুই শতাংশ প্রণোদনা। কোনো প্রবাসী ১০০ টাকা সমপরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠালে তার স্বজনরা দুই টাকা বাড়তি পাচ্ছেন। এই সুযোগ প্রবাসীদের দেশে টাকা পাঠাতে উৎসাহিত করছে।’
করোনাকালে বিশ্ব অর্থনীতি টালমাটাল হলেও বিদেশ থেকে ডলার আসা কমেনি। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অর্জিত ডলার আরও বেশি বেশি করে দেশে পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা।
গত নভেম্বরেও তারা পাঠিয়েছেন ২০৭ কোটি ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়। পরিমাণটা আগের মাস অক্টোবরের চেয়ে ১ দশমিক ৫৭ শতাংশ কম। কিন্তু গত বছরের নভেম্বরের তুলনায় ৩৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেশি। ওই সময় প্রবাসী আয় আসে ১৫৫ কোটি ডলার। আর এ বছরের অক্টোবরে এসেছিল ২১১ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর- এ পাঁচ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে এক হাজার ৯০ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময় এসেছিল ৭৭১ কোটি ডলার। সেই হিসাবে এ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসেই রেমিট্যান্স বেড়েছে ৪১ দশমিক ৩২ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘করোনার মাঝেও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ার বড় কারণ সরকারের দেয়া দুই শতাংশ প্রণোদনা। কোনো প্রবাসী ১০০ টাকা সমপরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠালে তার স্বজনরা দুই টাকা বাড়তি পাচ্ছেন। এই সুযোগ প্রবাসীদের দেশে টাকা পাঠাতে উৎসাহিত করছে।’
‘এছাড়া দেশে টাকা পাঠানো এখন অনেক সহজ হয়েছে। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মতো ডিজিটাল সেবা সম্প্রসারণের ফলে দ্রুত টাকা পাচ্ছেন স্বজনরা। এটাও রেমিট্যান্স বাড়ার কারণ’, যোগ করেন সিরাজুল ইসলাম।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘রেমিট্যান্সের এ উচ্চ প্রবৃদ্ধি অবশ্যই ইতিবাচক। গত পাঁচ মাসে দুটি ঈদ গেছে, যে কারণে প্রবাসীরা বেশি বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন।’
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম আরও বলেন, ‘যেহেতু প্রবাসী অধ্যুষিত দেশগুলোর অর্থনৈতিক অবস্থা ততটা ভালো নয়, সেহেতু এত উচ্চ হারে রেমিট্যান্স আসার কারণ খতিয়ে দেখা দরকার। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিষয়টি খতিয়ে দেখতে পারে যে কারা বেশি বেশি রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন, কেন পাঠাচ্ছেন, কাদের কাছে পাঠাচ্ছেন।’
সামগ্রিকভাবে প্রবাসী আয়ে তেজিভাব দেখা দেখা গেলেও গত জুলায়ের পর থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ একটু একটু করে কমছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত সেপ্টেম্বরে ২১৫ কোটি ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।
আগস্টে আসে ১৯৬ কোটি ডলার। অথচ গত জুলাইয়ে ছিল একক মাস হিসেবে রেমিট্যান্সের সর্বোচ্চ রেকর্ড, ২৫৯ কোটি ডলার। এর আগে এক মাসে এত বেশি রেমিট্যান্স আসার নজির নেই।