ডেস্ক নিউজ
প্রতিবছর বোরো ধানের চাল বাজারে উঠলে নতুন-পুরনো সব ধরনের চালের দাম কমে। কিন্তু এবার চিত্র ভিন্ন ছিল। বাজারে বোরো ধানের চাল আসার পরও দাম হু হু করে বেড়েছিল। পরিস্থিতি এমন হয় যে দু-তিন সপ্তাহের ব্যবধানে ৫০ কেজি চালের বস্তার দাম বাড়ে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত।
এতে প্রধান এই খাদ্যপণ্য কিনতে ভোক্তারা তীব্র চাপে পড়ে। দীর্ঘদিন অস্থির থাকার পর জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানে এবং ভারত থেকে চাল আমদানি করার খবরে চালের বাজারে আবার স্বস্তি মিলছে। পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দাম কমতে শুরু করেছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারিতে ৫০ কেজির বস্তা ১৫০ টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে কেজিতে দু-তিন টাকা কমে বিক্রি করা হচ্ছে।
গতকাল বুধবার রাজধানীর পাইকারি চালের বাজার বাবুবাজার, জোয়ারসাহারা বাজার, ভাটারা থানার নতুন বাজারসহ বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, অভিযানে এবং চাল আমদানির খবরে দেশের বাজারে চালের দাম কমতে শুরু করেছে। মূলত বড় বড় মিলার ও কম্পানিগুলো প্রতিযোগিতা করে ধান কিনে মজুদ করায় বাজারে চাল সরবরাহ কমে গিয়ে প্রতিদিনই বাড়তে থাকে চালের দাম। ফলে ভরা মৌসুমে এক ধরনের অস্থিরতা দেখা দেয় চালের বাজারে। সরকার বিষয়টি বুঝতে পেরে অভিযান চালিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। এখন সরকার চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়ায় মিলাররা চালের সরবরাহ বাড়াচ্ছেন, যার কারণে দাম কমছে।
এদিকে ভারত থেকে চাল আমদানি করার প্রস্তুতি শুরু করেছেন হিলি স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা। আমদানিকারকরা বলছেন, ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু হলে দেশের বাজারে চালের দাম অনেক কমে আসবে। তখন ভোক্তারা কম দামে চাল কিনতে পারবে।
গতকাল বাবুবাজারে সব ধরনের চালের বস্তা (৫০ কেজি) ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কমে বিক্রি হয়েছে। মিনিকেট (চিকন চাল) প্রতি বস্তা তিন হাজার থেকে তিন হাজার ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার ২০০ থেকে তিন হাজার ৩০০ টাকায়। ব্রি-২৮ চাল ও পাইজাম চাল বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৩৫০ থেকে দুই হাজার ৪০০ টাকায়। মোটা চাল (হাইব্রিড) এক হাজার ৯০০ থেকে এক হাজার ৯৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর বাবুবাজার পাইকারি চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. নিজাম উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পাইকারি বাজারে চালের দাম বস্তায় ১৫০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। ভারত থেকে আমদানি শুরু হলে চালের দাম আরো কমে আসবে। ’ তিনি বলেন, ‘এ বছর ধানের উৎপাদন খুবই ভালো ছিল। তার পরও বাজারে চালের দাম বাড়তি থাকার মূল কারণ ছিল বড় বড় মিলাররা ও কিছু কম্পানির ব্যাপকভাবে ধান কিনে মজুদ করা। ধান মজুদ করায় বাজারে চালের সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বাড়ছিল। এখন চাল আমদানি করার খবর শুনে তারা বাজারে চালের সরবরাহ বাড়িয়েছে, যার ফলে বাজারে কমছে চালের দাম। আমদানি শুরু হলে চালের দাম কেজিতে আরো পাঁচ-ছয় টাকা কমে আসবে। ’
জোয়ারসাহারা বাজারের মেসার্স সিয়াম স্টোরের ব্যবসায়ী রমিজ উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পাইকারি বাজারে দাম কমায় গত সপ্তাহের তুলনায় খুচরা বাজারে চালের দাম কেজিতে দু-তিন টাকা পর্যন্ত কমেছে। পাইকারি বাজারে আরো কমলে খুচরা পর্যায়েও কমবে। ’ তিনি বলেন, ‘গত সপ্তাহে ব্রি-২৮ ও পাইজাম প্রতি কেজি বিক্রি করি ৫২ থেকে ৫৫ টাকায়, এখন বিক্রি করছি ৫০ থেকে ৫২ টাকা, মিনিকেট ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি করেছি, এখন বিক্রি করছি ৬৮ থেকে ৭২ টাকায়। গত সপ্তাহে নাজিরশাইল ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি করেছি, এখন ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি করছি। ’
এই বাজারের মেসার্স ভাই ভাই স্টোরেও গত সপ্তাহের তুলনায় চালভেদে দাম পাঁচ-ছয় টাকা কমিয়ে বিক্রি করতে দেখা গেছে। এই দোকানের মালিক মো. নজরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এখন চালের দাম কিছু কমছে, আমদানি শুরু হলে দাম আরো কমে আসবে। ’ পাইকারি বাজারে এখন খোলা আটার দামও বস্তাপ্রতি কিছুটা কমেছে বলে তিনি জানান।