ডেস্ক নিউজ
আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে সেবাপ্রার্থীদের ভোগান্তি লাঘবে একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অধিদপ্তর। গতকাল বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিস পরিদর্শন করেন। এর পর পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। বৈঠকে ভোগান্তি কমাতে বেশকিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠক সূত্র জানায়, অনলাইনে বিদ্যমান পাসপোর্ট আবেদন ফরমে বেশ কিছু জটিলতা চিহ্নিত করা হয়েছে। সেবাপ্রত্যাশীদের তরফেও অনলাইনে আবেদন ফরম সহজ করার দাবি ছিল। বৈঠকে পাসপোর্ট আবেদন ফরম সহজ করতে প্রস্তাবনা তৈরির জন্য কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া পাসপোর্ট অফিসকে ঘিরে দালালদের দৌরাত্ম্য দীর্ঘদিনের। বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর আগে দালালদের একটি কাঠামোর আওতায় এনে তাদের ‘এজেন্ট’ হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তাবনা ছিল। যারা নির্দিষ্ট ফির বিনিময়ে সেবাপ্রত্যাশীদের সহযোগিতা করবেন। বৈঠকে দালালদের এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দিতে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে বর্তমানে দিনে ২৫৬০টি আবেদন যাচাই বাছাইয়ের সক্ষমতা আছে। অথচ দিনে জমা পড়ছে ৩ হাজারের বেশি আবেদন। এর মধ্যে আটশর বেশি আবেদনে কোনো না কোনো ত্রুটি থাকে। বর্তমানে যে জনবল ও জায়গা রয়েছে, তাতে দিনে ৪০০ থেকে ৪৫০টি আবেদন জমা পড়লে সুন্দরভাবে সেবা দেওয়া সম্ভব। রাজধানী ঢাকা শহরে সারাদেশের প্রায় ২ কোটির বেশি মানুষের বসবাস। এসব নাগরিকের পাসপোর্ট সেবা পেতে নানা ধরনের ভোগান্তি পোহাতে হয়। আবেদন জমা দিতে গিয়ে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়ানো থেকে শুরু করে পাসপোর্ট হাতে পাওয়া পর্যন্ত অনেক সময়ক্ষেপণ হয়। অতি জরুরি এ সেবা পেতে ভোগান্তির শেষ থাকে না নাগরিকদের। বিপুল সেবাপ্রত্যাশীর এ চাপ সামলাতে ঢাকায় নতুন দুটি অ্যাপ্লিকেশন প্রসেসিং সেন্টার (এপিসি) বা আবেদন প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র হচ্ছে। গতকালের বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। এই এপিসিকে ঢাকা পূর্বাঞ্চল যথাক্রমে মতিঝিল, পল্টন, রামপুরা, কেরানীগঞ্জ, কামরাঙ্গীরচর, খিলগাঁও, চকবাজার দোহার ও বংশাল এবং ঢাকা পশ্চিমাঞ্চল যেমন- আদাবর, সাভার, ধামরাই, শাহ্আলী, তুরাগ, নিউমার্কেট ও হাজারীবাগ এলাকাকে ধরা হয়েছে। এতে ঢাকায় বসবাসকারী একটি বিপুল অংশ এ অফিসগুলো থেকে আবেদন প্রক্রিয়াকরণ করতে পারবেন। পাসপোর্টের আবেদন প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ২০১৬ সালের ২৩ মার্চ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়। চিঠি অনুমোদনের পরিপ্রেক্ষিতে এখন চলছে এপিসি সেন্টার চালু করার প্রক্রিয়া।
সূত্র জানায়, বর্তমানে আগারগাঁও অফিসে জমা পড়ে ৩ হাজারের অধিক আবেদন। এত মানুষ দাঁড়ানোর মতো পর্যাপ্ত জায়গা নেই। এ ছাড়া এ ৩ হাজার জনের সঙ্গে থাকে তাদের প্রায় দুই হাজার আত্মীয়স্বজন। এ ছাড়া পাসপোর্ট ডেলিভারি নিতেও একই পরিমাণ লোক আসেন। আবার ভুল তথ্য সংশোধন চেয়েও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লোক আসেন। প্রতিনিয়ত এ বিপুলসংখ্যক মানুষ ভিড় করেন। এ জন্য আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসের জনবল বাড়ানোর দাবি অনেক দিনের। গতকালের বৈঠকে এ বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়। মাসে অন্তত ৫ লাখ পাসপোর্ট মানুষের হাতে তুলে দেওয়ার লক্ষ্যে পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অফিস (ডিআইপি) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সেবা ও সুরক্ষা বিভাগে ৯০০ জনবল চেয়ে আবেদন করেছে। এ জনবল নিয়োগ হলে ই-পাসপোর্টের কার্যক্রম স্বাভাবিক গতিতে চলবে বলে মনে করছেন ডিআইপির শীর্ষ কর্মকর্তারা। এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে কয়েকবার ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।