ডেস্ক নিউজ
করোনা মহামারীর এই সময়ে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চলতি অর্থবছর শেষে প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২ শতাংশ অর্জিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি আরও বলেন, অর্থ পাচার রোধে বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হয়েছে। বিদেশে বিনিয়োগ করার সুযোগ না দিলে হুন্ডির মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
রবিবার অর্থনৈতিক বিষয় ও সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত সভা শেষে ভার্চুয়ালি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এসব কথা বলেন। অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত কমিটির তিনটি এবং ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের জন্য ১৬টি প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। অনুমোদিত ১৬টি প্রস্তাবে মোট অর্থের পরিমাণ ১ হাজার ৩৮৭ কোটি ৩৩ লাখ ১৭ হাজার ৬৪ টাকা। মোট অর্থায়নের মধ্যে জিওবি থেকে ব্যয় হবে ৪৪৯ কোটি ৪২ লাখ ৮৪ হাজার ৮৮১ টাকা এবং দেশীয় ব্যাংক ও বৈদেশিক ঋণ ৯৩৭ কোটি ৯০ লাখ ৩২ হাজার ১৮৩ টাকা।
অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষজন অনেক বেশি সৃজনশীল ধারণা নিয়ে আসছে এবং তারা বিদেশে বিনিয়োগ করার চেষ্টা করছে। বিদেশে বিনিয়োগ করা অন্যায় কিছু না। বিদেশে বিনিয়োগের বিষয়টি কিছু শর্তের ভিত্তিতে অফিসিয়ালি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। যারা রফতানি করেন, নিজের এ্যাকাউন্টে এক্সপোর্টের বিপরীতে রিটেনশন মানি থাকে সেখান থেকে তাদের এক্সপোর্টের ২০ শতাংশ তারা বিদেশে বিনিয়োগ করতে পারবে। সেই ২০ শতাংশের ক্ষেত্রে শর্ত দেয়া হয়েছে-গ্রস সম্পদ থেকে দায়দেনা বাদ দিলে যে নেট সম্পদ থাকে সেখান থেকে ২০ শতাংশ ২৫ শতাংশের মধ্যে যেটা কম সেই পরিমাণ টাকা তারা বিদেশে বিনিয়োগ করতে পারবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে। উন্নয়নশীল দেশের কাতারে আমাদের অন্যরাও আছে। প্রত্যেক দেশেই তাদের ফরেন এক্সচেঞ্জ রেটটা তারা আস্তে আস্তে এ্যালাউ করে, জনগণের বিদেশী বিনিয়োগের জন্য, আমরাও সেই পথে যাচ্ছি। বিদেশে বিনিয়োগ হলে সেখান থেকে আয় আসবে। দেশের জনগণই সেখানে গিয়ে চাকরি করবে। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। এটা যদি বন্ধ করে রাখা হয়, অন্যদের এ্যালাউ না করি তাহলে দেশ পিছিয়ে পড়বে। এটা আমাদের ভাল উদ্যোগ। এটা নিয়ে অনেক কাজ করা হয়েছে।
আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভ আমাদের ওঠানামা করবে। যখন আমদানি বেশি করা হয় তখন সেটি রিজার্ভ থেকেই ব্যয় করতে হয়। রিজার্ভ কীভাবে হয়, যখন রফতানি করা হয় তখন আর্নিং মানিটা চলে যায় বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে। তাদের নির্দিষ্ট লিমিট থাকে, এর বেশি তারা ফরেন এক্সচেঞ্জ রাখতে পারে না। তখন তাদের বিক্রি করতে হয়, বিক্রি করলে বাংলাদেশ ব্যাংক সেটা কিনে নেয় মার্কেট প্রাইজে। সেভাবেই বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ বাড়ে। যেমনিভাবে এক্সপোর্ট তেমনিভাবে রেমিটেন্স। কারণ রেমিটেন্স যখন বেশি আসে তখন সেটি চলে যায় সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর কাছে। ব্যাংকগুলো তা বিক্রির জন্য দ্বারস্থ হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এগুলো কিনে নিয়ে তাদের ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভ বৃদ্ধি করে। অর্থমন্ত্রী বলেন, বিপুল পরিমাণ আমদানি বিল পেমেন্ট করতে হচ্ছে। এতে করে কিছুটা ওঠানামা করে। পেমেন্ট করলে রিজার্ভ কিছুটা কমে। এখন যে ৪৫ থেকে ৪৬ বিলিয়ন ডলারে ওঠানামা করছে এটা ঠিক আছে। যদি পেমেন্ট না করা হতো তাহলে আগেই রিজার্ভ ৫০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে। তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতির উন্নতি হলে জিডিপি বাড়বে। এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন সরকারের প্রাক্কলন চলতি অর্থবছরে ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। তবে আইএমএফ-এর প্রক্ষেপণ ৬ দশমিক ৬ শতাংশ হবে। আইএমএফ সব সময় রক্ষণশীল প্রক্ষেপণ করে থাকে। তবে আমার বিশ্বাস, আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে। চলতি অর্থবছরে অর্থনীতির আকার ৪৫৫ বিলিয়ন ডলার হবে, এর মাধ্যমে অর্ধ ট্রিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করতে পারব।
এক হাজার ৩৮৭ কোটি টাকার ১৬ ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন ॥ অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত কমিটির তিনটি এবং ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের জন্য ১৬টি প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। অনুমোদিত ১৬টি প্রস্তাবে মোট অর্থের পরিমাণ ১ হাজার ৩৮৭ কোটি ৩৩ লাখ ১৭ হাজার ৬৪ টাকা। ক্রয় সংক্রান্ত কমিটির প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ৭টি, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ৩টি, কৃষি মন্ত্রণালয়ের ৩টি, শিল্প মন্ত্রণালয়ের ১টি, জননিরাপত্তা বিভাগের ১টি এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের ১টি প্রস্তাবনা ছিল।
এতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) কর্তৃক মরক্কো থেকে ৪০ হাজার মে.টন (১০%+) ডিএপি সার ৩০৪ কোটি ৬১ লাখ ৭০ হাজার টাকায় আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) কর্তৃক ওসিপি, এসএ মরক্কো থেকে ৩০ হাজার (+১০%) মে. টন টিএসপি সার ১৮৫ কোটি ৯ লাখ ৩৫ হাজার ৫০০ টাকায় আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) কর্তৃক জেএসসি ফরেন ইকোনমিক কর্পোরেশন প্রোডিনত্রোগ রাশিয়া হতে ৩০ হাজার (+১০%) মে. টন এমওপি সার ১৫৩ কোটি ২৭ লাখ ৬৫ হাজার ৬২৫ টাকায় আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এছাড়া অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত কমিটিতে ৩টি নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এগুলো হলো- জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের জন্য ২০টি সিলভার রঙের টয়োটা হাইয়েস মাইক্রোবাস সরকারী প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড থেকে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে কিনবে সরকারী যানবাহন অধিদফতর। ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) আধুনিক জিও লোকেশন সিস্টেম সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে কিনবে এবং এনটিএমসিকে মোবিলিয়াম, ইনকরপোরেটেড ইউএসএ-এর কাছ থেকে ৫৬ কোটি ৩২ লাখ টাকায় একটি ভেহিকেল মাউন্টেড ডেটা ইনস্পেকটর (ভিওআইপি) এবং সংশ্লিষ্ট সেবা কেনার অনুমোদন দেয়া হয়েছে।