নিজস্ব প্রতিবেদক:
নাটোরের একডালা গ্রামের হাট সিংহারদহ। নাটোর -রাজশাহী মহাসড়ক সংলগ্ন এই এলাকায় মধু মাস জ্যৈষ্ঠ জুড়ে আমের মিষ্টি গন্ধে মহু মহু করে । রাস্তার দু’পাশে বসে অস্থায়ী আমের আড়ৎ। শত শত নারী পুরুষ আম বাছাই করে জীবিকা নির্বাহ করে এ মৌসুমে। নাটোর জেলা সহ আশেপাশের জেলাগুলো থেকেও আসা আম উঠানামায় ব্যস্ত থাকে আম বোঝাই ট্রাক-ভ্যানের দখলে। এই এলাকায় গড়ে ওঠা প্রাণ এগ্রো লিমিটেডে এই আম পাল্পিংয়ের মাধ্যমেই ম্যাঙ্গো ড্রিংক, জুস, ম্যাঙ্গো বারসহ তৈরী হয় দেশীয় বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী। কিন্তু চলতি মৌসুম থেকে পাল্টে যেতে শুরু করেছে চিরাচরিত এ দৃশ্যপট।
আম পাল্পিং থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিতে শুরু করেছে নাটোরের প্রাণ এগ্রো লিমিটেড। এরই অংশ হিসেবে চলতি মৌসুমে প্রতিষ্ঠানটিতে সীমিত পরিসরে শুরু হয়েছে আম সংগ্রহ ও পাল্পিং কার্যক্রম। প্রতিবছর এ কার্যক্রমের উদ্বোধনে নানা আনুষ্ঠানিকতা পালন করলেও এ বছর প্রচার বিমুখ ছিল প্রতিষ্ঠানটি। আম সরবরাহের জন্য বাগান মালিকদের সাথে ব্যবসায়ীদের অগ্রীম অর্থ চুক্তি থাকায় হঠাৎ করে সরবরাহ সীমিত করার ঘটনায় দুশ্চিন্তায় রয়েছেন জেলার কয়েক হাজার আম চাষী। বিপাকে পড়েছেন অর্থ লগ্নি দেওয়া প্রায় পাঁচ শতাধিক আম ব্যবসায়ী। এছাড়া কর্মহীন হওয়ার শংকায় রয়েছেন কয়েকশ দিনমজুর। যারা আম মৌসুমে সরবরাহকারীদের আড়তে কাজ করে জিবিকা নির্বাহ করতেন।
একাধিক আম চাষী ও সরবরাহকারী জানান, মৌসুমের শুরুতে পর্যাপ্ত পরিমাণ আম সরবরাহের টার্গেট নিয়ে বাগান ইজারা নেন তারা। আমের ফলন ভালো হওয়ায় সরবরাহের প্রাক্কালে তারা জানতে পারেন প্রাণ এগ্রো লিমিটেডের নাটোর কারখানায় আম পাল্পিং কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়ায় তারা আর আম কিনবে না চাষীদের নিকট থেকে। এর পরিবর্তে পাল্পিং কার্যক্রম চলবে রাজশাহীর গোদাগাড়িস্থ বরেন্দ্র ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক কারখানায়। এ ঘটনায় বিক্ষুদ্ধ চাষীরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি মারফত প্রাণ কর্তৃপক্ষকে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আহ্বান জানালে চাপের মুখে অল্প পরিসরে আম সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। তবে দেরীতে আম সংগ্রহ করায় ব্যবসায়ীদের অনেকেই পুজি হারানোর শংকায় রয়েছেন।
শরিফুল ইসলাম নামে এক আম সরবরাহকারী বলেন, প্রান কোম্পাণী এবার মৌসুমের শুরুতে আম সংগ্রহ শুরু করেনি। ঈদুল ফিতরের পর স্বল্প পরিসরে তারা আম নেওয়া শুরু করেছেন।
আরেক আম সরবরাহকারী ঈব্রাহিম হোসেন বলেন, গত মৌসুমে কোম্পাণীতে তিনি প্রতিদিন প্রায় ১০ থেকে ১২ টন আম সরবরাহ করেছেন। সেখানে এবার তার কাছে থেকে সর্বোচ্চ ৪ টন আম সরবরাহ নেওয়া হচ্ছে। প্রত্যেক সরবরাহকারীর কাছে থেকে গত মৌসুমের তুলনায় অনেক কম আম নেওয়া হচ্ছে। এতে করে তারা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তারা বাগান মালিকদের যে টাকা অগ্রিম দিয়েছেন সে টাকা ওঠানোই মুশকিল হয়ে পড়বে। পুজি হারানোর শংকায় এখন দিন কাটছে তাদের।
আম সংগ্রহ ও পাল্পিং কার্যক্রম সম্পর্কে জানাতে প্রতিষ্ঠানের কেউ রাজী হয়না। পরে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান অফিসের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন সহকারী ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) জুলফিকার হায়দার।
এ বিষয়ে তেবারিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ওমর আলী প্রধান বলেন, এবার মৌসুমের শুরুতে প্রাণ কারখানায় আম সংগ্রহ শুরু না হলে স্থানীয় চাষী ও আম সরবরাহকারীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয় এবং তারা দিশেহারা হয়ে পড়ে। কয়েকশ আম চাষী ও সরবরাহকারী তার কাছে এসে বিষয়টি জানালে তিনি প্রাণ কর্তৃপক্ষের সাথে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলেন এবং আম সরবরাহকারীদের কাছে থেকে আম সংগ্রহের দাবী জানান। পরবর্তী সিমিত আকারে আম সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করা হয়। তিনি আরও বলেন অন্যান্য বছরে আম মৌসুমে এই এলাকায় যে প্রাণচাঞ্চল্য ছিল এবার তা নেই। আম চাষী ও সরবরাহকারীদের মধ্যেও কোন শান্তি নেই। সরবরাহকারীরা আমের বাগান মালিকদের যে টাকা আগাম লগ্নি করেছেন তা এবার উঠবেনা।পুঁজি হারানোর আশংকায় দিন কাটছে তাদের।
প্রাণের ঢাকাস্থ হেড অফিসের সহকারী ব্যবস্থাপক হুমায়ন কবির বলেন, চলতি মৌসুম থেকে রাজশাহীর গোদাগাড়িস্থ বরেন্দ্র ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক কারখানায় আম সংগ্রহ ও পাল্পিং কার্যক্রম করা হচ্ছে। তবে স্থানীয় চাষী ও ব্যবসায়ীদের কথা বিবেচনায় রেখে নাটোর কারখানায় এবার স্বল্প পরিসরে আম পাল্পিং করা হচ্ছে। নাটোর কারখানায় টমেটোসহ আরও অন্যান্য ফলফলাদি দিয়ে তৈরী করা হচ্ছে বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী। নতুন এসব কার্যক্রমে আরও লোকের কর্মস্থানের সুযোগ রয়েছে। এখানে শ্রমিকদের কর্মহীন হওয়ার কোন শংকা নেই।