ডেস্ক নিউজ
এশিয়ার ২২ দেশের সেরা ৩০০ তরুণ উদ্যোক্তার তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন বাংলাদেশের নয়জন। এই প্রথম মার্কিন সাময়িকী ফোর্বসের বাছাইয়ে একসঙ্গে বাংলাদেশের এত সংখ্যক নাগরিক স্থান পেলেন।
উদ্ভাবনী ধারণা আর উদ্যোগের মধ্য দিয়ে ৩০ বছরের কম বয়সী যে তরুণেরা এশিয়ার দেশগুলোতে ইতিবাচক পরিবর্তনে ভূমিকা রাখছেন, তাদের নিয়ে ২০১১ সাল থেকে এ তালিকা প্রকাশ করছে ফোর্বস। খবর, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার প্রকাশিত ২০২১ সালের ‘থার্টি আন্ডার থার্টি এশিয়া’ তালিকায় থাকা বাংলাদেশের ৯ উদ্যোক্তা ছয়টি উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছেন। ব্যবসা প্রযুক্তি, সামাজিক প্রভাব এবং প্রথমবারের মতো চালু রিটেইল ও ই-কমার্স ক্যাটাগরিতে এশিয়ার সেরা তরুণদের কাতারে উঠে এসেছেন তারা। সফল এই ৯ তরুণ হলেন- গেজ-এর শেহজাদ নূর তাওস প্রিয় (২৪) ও মোতাসিম বীর রহমান (২৬), ক্র্যামস্ট্যাকের মীর সাকিব (২৮), হাইড্রোকোপ্লাসের রিজওয়ানা হৃদিতা (২৮) ও জাহিন রোহান রাজীন (২২), অ্যাওয়ারনেস থ্রিসিক্সটির শোমী হাসান চৌধুরী (২৬) ও রিজভী আরেফিন (২৬), অভিযাত্রিক ফাউন্ডেশনের আহমেদ ইমতিয়াজ জামি (২৭) ও পিকাবোর সহপ্রতিষ্ঠাতা মোরিন তালুকদার (২৭)। গত বছর এই তালিকায় ছিলেন বাংলাদেশের রাবা খান ও ইশরাত করিম। সর্বশেষ চার বছরে মোট ৯ বাংলাদেশি তরুণ এ তালিকায় স্থান করে নেন। এবারের তালিকা নিয়ে ফোর্বস বলেছে, মহামারীর মধ্যেও থেমে নেই উদ্যোগ ও উদ্যম। মহামারীর দিন শেষে নতুন দিনের প্রত্যাশায় ‘নিও নরমালের’ এ সময়ে তালিকার স্থান পাওয়া উদ্যোক্তা, বিজ্ঞানী, অ্যাকটিভিস্ট ও তরুণ নেতারা কঠোর পরিশ্রম অব্যাহত রেখেছেন। ফোর্বস জানিয়েছে, এবারের নির্বাচিতদের মধ্যে ১৭টি স্টার্টআপ দেড় কোটি ডলার তহবিল পেয়েছে ইতিমধ্যে। ভারতের ফিনটেকের উদ্যোগ রাজোরপে সম্ভাবনাময় প্রকল্প হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে, যেটির মূল্যমান নির্ধারণ হয়েছে ৩ বিলিয়ন ডলার। তালিকার ভূমিকায় সাময়িকীটি বলেছে, এই প্রজন্মের সবচেয়ে কঠিন সময়ের মধ্যে এই ৩০০ উদ্যোক্তা নিজেরা টিকে ছিলেন এবং দীর্ঘ লকডাউনের মধ্যে অনেকটা সফলভাবে এগিয়েছেন। সব ধরনের প্রতিকূলতা ও মহামারীর অনিশ্চয়তার মধ্যেও পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে উদ্যোগ ও ব্যবসা এগিয়ে নিয়েছেন তারা। তাদের মধ্যে কেউ কেউ এমন কঠিনতর সংকটের মধ্যেও উদ্যোগ শুরুর সাহস দেখিয়েছেন। যখন অন্যরা প্রতিবন্ধকতা দেখেছে তখন এদের মধ্যে কেউ কেউ সম্ভাবনাও খুঁজে পেয়েছেন। এই তালিকাকে এ অঞ্চলের বৈচিত্র্যময় ‘উদ্যমী’ ব্যবস্থার প্রতিফলন হিসেবে বর্ণনা করে ফোর্বস বলেছে, এশিয়ার নারীরাও অনেক এগিয়েছে। এ বছরের নির্বাচিত উদ্যোক্তাদের গড় বয়স ২৬ বছর ৪ মাস। বরাবরের মতো ২০২১ সালের তালিকার বড় অংশ রয়েছে ভারত ও চীনের উদ্যোক্তাদের দখলে।
দেশের ৬ উদ্যোগ ও ৯ উদ্যোক্তা : এ বছরের তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন রিটেইল অ্যান্ড ই-কমার্স ক্যাটাগরিতে স্থান করে নেওয়া মোরিন তালুকদার ই-কমার্স প্ল্যাটফরম পিকাবোর সহ-প্রতিষ্ঠাতা। ২০১৬ সালের ১৫ মে তার কোম্পানি যাত্রা শুরু করে। ই-কমার্স প্ল্যাটফরমের বাইরে চলতি বছরে দেশব্যাপী ১৫০ দোকান খোলার পরিকল্পনা রয়েছে পিকাবোর।
এবার প্রযুক্তি ক্যাটাগরিতে সেরাদের তালিকায় স্থান পেয়েছে বাংলাদেশের তিনটি উদ্যোগ। এর একটি হলো ‘গেজ’। এটি বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরভিত্তিক একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইভিত্তিক স্টার্টআপ। এ উদ্যোগের জন্য স্বীকৃতি পেয়েছেন শেহজাদ নূর তাওস প্রিয় ও মোতাসিম বীর রহমান। ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এ উদ্যোগ অনলাইন লেনদেনের জন্য ভিজুয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তি সরবরাহ করে। গেজ ২০২০ সালে ‘স্টার্টআপ ওয়ার্ল্ড কাপ বাংলাদেশ’ এবং ২০১৯ সালে সেরা স্টার্টআপের জন্য বাংলাদেশ বিজনেস ইনোভেশন পুরস্কার পায়। প্রযুক্তি ক্যাটাগরিতে সেরার তালিকায় থাকা আরেকটি বাংলাদেশি কোম্পানি ক্র্যামস্ট্যাক। এর প্রতিষ্ঠাতা মীর সাকিব। এই স্টার্টআপ একটি ব্যবসাভিত্তিক ইন্টেলিজেন্স প্ল্যাটফরম, যেটি তথ্য-উপাত্ত নিয়ে কাজ করে।
এইআই নিয়ে কাজ করা আরেক কোম্পানি হাইড্রোকুয়োপ্লাস এই ক্যাটাগরিতে ফোর্বসের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। এ স্টার্টআপ নিয়ে কাজ করছেন রিজওয়ানা হৃদিতা ও জাহিন রোহান রাজিন। ঢাকাভিত্তিক এই উদ্যোগ ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত। তারা নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে কাজ করছেন। এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে পানির গুণগত মান যাচাই-বাছাই করে বিভিন্ন সরকারি ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে তারা সেবা দিচ্ছেন। ২০২০ সালে জাতিসংঘের ১৭ ‘ইয়াং লিডার্সেও’ সম্মাননাও পেয়েছেন রিজওয়ানা হৃদিতা ও জাহিন রোহান রাজিন। ‘থার্টি আন্ডার থার্টি এশিয়ার’ সামাজিক প্রভাব ক্যাটাগরিতে সেরার তালিকায় স্থান পেয়েছে অ্যাওয়ারনেস থ্রিসিক্সটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা শমী চৌধুরী ও রিজভী আরেফিন। কুয়ালালামপুরভিত্তিক সেবামূলক এনজিওটি তরুণদের সংগঠিত করে তাদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে। ২৩টি দেশে তাদের দেড় হাজার ভলান্টিয়ার রয়েছে, যারা বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালায়। শমী ও রিজভী এর আগে ইউএনডিপির স্বীকৃতি পেয়েছেন। এ ক্যাটাগরিতে সেরার তালিকায় স্থান পাওয়া আরেক বাংলাদেশি উদ্যোগ অভিযাত্রিক ফাউন্ডেশন। আহমেদ ইমতিয়াজ জামি ২০১০ সালে এটি গড়ে তোলেন। সেই থেকে তিনি দারিদ্র্য দূরীকরণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, মানবাধিকার ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করছেন। ফাউন্ডেশনটি ১০ লাখের বেশি মানুষকে সহায়তা দিয়েছে এবং ৫০০ সুবিধাবঞ্চিত শিশুকে বিনামূল্যে শিক্ষার ব্যবস্থা করেছে। নিজস্ব স্কুল ও অনুদান কর্মসূচিও রয়েছে। প্রায় ১০ হাজার রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার পাশাপাশি করোনাভাইরাস মহামারীতেও কাজ করছে অভিযাত্রিক ফাউন্ডেশন।