ডেস্ক নিউজ
বিশ্বের দামি সুপার ফুডগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘কিনোয়া’ চাষ হচ্ছে বগুড়ার সোনাতলায়। গত বছর স্বল্প পরিসরে লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও পটুয়াখালী এই তিন জেলায় চাষ হলেও এবার ব্যাপক পরিসরে বগুড়ায় চাষ করে সাড়া ফেলেছেন এক সেনা কর্মকর্তা।
সোনাতলা উপজেলার তেকানি চুকাইনগর ইউনিয়নের দুর্গম যমুনার চর ভিকনের পাড়া এলাকায় প্রায় ৭ বিঘা জমিতে কিনোয়া চাষ করেছেন রবিউল আমিন নামে এক সেনা কর্মকর্তা। তিনি বলছেন, দামি এই ফসল চাষে একদিকে লাভবান হওয়া সম্ভব অন্যাদিকে, ফসলটি আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, =
ভিটামিন-ই, পটাসিয়াম এবং ফাইবারের একটি উৎকৃষ্ট উৎস হবে।
যমুনার চরে ফসলটি তত্ত্বাবধান করেছেন পূর্ব তেকানী এলাকার মো. জাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ৩ মাস আগে কিনোয়ার বীজ বোনা হয়েছিল। সেগুলো এখন পরিপক্ব হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যেই মাড়াই শুরু করব। প্রায় ৭ বিঘা জমিতে বীজ বপনের পর থেকে মাড়াই পর্যন্ত লক্ষাধিক টাকা খরচ হচ্ছে। তবে ফসল যা ফলেছে তাতে প্রায় ২০ মণ কিনোয়া পাব। ভালো দাম পেলে সেগুলো প্রায় ১২ লাখ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব। নতুন এই ফসল ‘কিনোয়া’ একটু ব্যতিক্রমী হলেও প্রতি কেজি প্রায় ১৬০০ টাকা দরে বিক্রি সম্ভব।
সেনা কর্মকর্তা (মেজর) মো. রবিউল ইসলাম বলেন, মূলত উত্তর আমেরিকার বলেভিয়া ও পেরু কিনোয়ার জন্মভূমি হিসেবে পরিচিত। তবে বর্তমানে ওখান থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছরিয়ে পড়ছে ফসলটি। এই ফসল নিয়ে দেশে গবেষণা করছেন ঢাকা শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব অ্যাগ্রোনমির অধ্যাপক ডক্টর পরিমল কান্তি বিশ্বাস। আমি তার সঙ্গে যোগাযোগ করি এবং তার কাছে থেকেই বীজ সংগ্রহ করি। তিনি এই ফসল চরাঞ্চলের বালি মাটিতে ভালো ফলবে বলে জানান। সেই অনুযায়ী আমি সোনাতলার যমুনা চরের প্রায় ৭ বিঘা জমি লিজ নিয়ে তাতে কিনোয়ার বীজ বপন করি। বেশ ভালো ফলন হয়েছে। আগামীতে সারাদেশে অত্যন্ত উপকারি এই ফসল সাধারণ কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করব।
ঢাকা শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব অ্যাগ্রোনমির প্রফেসর ডক্টর পরিমল কান্তি বিশ্বাস বলেন, কিনোয়া হাই প্রোটিন সম্পন্ন খাবার। এটিকে সুপার ফুডও বলা হয়। কিনোয়ায় অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে এবং লাইসিন সমৃদ্ধ, যা সারা শরীরজুড়ে স্বাস্থ্যকর টিসু্য বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। কিনোয়া আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন-ই, পটাসিয়াম এবং ফাইবারের একটি উৎকৃষ্ট উৎস। রান্না করা হলে এর দানাগুলো আকারে চারগুণ হয়ে যায় এবং প্রায় স্বচ্ছ হয়ে যায়। খরাপ্রবণ ও লবণাক্ত দুই ধরনের জমিতেই কিনোয়া চাষ সম্ভব। আমি আশা করি এই ফসলের প্রতি মানুষ আগ্রহী হবে এবং আগামীতে ব্যাপকভাবে কিনোয়া চাষ হবে।
অধ্যাপক পরিমল কান্তি বিশ্বাস আরও বলেন, ‘আমি পাঁচ বছর গবেষণার পর পাইলটিং করতে মাঠ পর্যায়ে কিনোয়া চাষ শুরু করেছি। ফলাফলও আশানুরূপ। আমার আবেদনের পর ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে কিনোয়া চাষের অনুমোদন দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। নভেম্বরের মাঝামাঝি এ ফসল চাষ করে মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে মাঝামাঝি সময় ফলন ঘরে তোলা যায়। দেশে কিনোয়ার মার্কেট তৈরিতে কাজ চলছে। উৎপাদিত কিনোয়া দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব।
এ বিষয়ে বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (ক্রপ), মো. এনামুল হক বলেন, কিনোয়া নামে এই ফসলটি একেবারেই নতুন। গত বছর স্বল্পপরিসরে দেশের তিন জেলায় চাষ হয়েছিল। তবে এবার বগুড়া জেলার সোনাতলা উপজেলায় প্রায় ৭ বিঘা মাটিতে চাষ হয়েছে। আগামীতে আরও ব্যাপকভাবে যেন চাষ হয় সে বিষয়ের দিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হবে।