ডেস্ক নিউজ
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুবসমাজের আইকন ছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘জাতীয় যুবদিবস-২০২১’ উপলক্ষে রবিবার (৩১ অক্টোবর) দেওয়া এক বাণীতে সরকারপ্রধান বলেন, আমি বিশ্বাস করি সব প্রতিকূলতা জয় করে আমাদের যুবসমাজ সরকারের গৃহীত রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অংশীদারিত্ব সৃষ্টির মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ ও আত্মমর্যাদাশীল দেশ প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।
জাতীয় যুবদিবস উপলক্ষে দেশের যুবসমাজকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধার্ঘ্যস্বরূপ এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘দক্ষ যুব সমৃদ্ধ দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ অত্যন্ত যথার্থ হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন যুবসমাজের আইকন। তিনি অনুধাবন করতে পেরেছিলেন যুবরাই জাতির প্রাণশক্তি, উন্নয়ন ও অগ্রগতির প্রধান নিয়ামক। তারা সাহসী, বেগবান, প্রতিশ্রুতিশীল, সম্ভাবনাময় এবং সৃজনশীল।
তিনি বলেন, স্বাধীনতা অর্জনের পর বঙ্গবন্ধু শিক্ষিত ও কর্মদক্ষ যুবসমাজ সৃষ্টি করার বিষয়ে মনোনিবেশ করেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, আলোকিত যুবসমাজই দেশের সামগ্রিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে। জাতির পিতা যুবসমাজকে শিক্ষা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি ক্রীড়ানুরাগীদের জন্য ১৯৭৫ সালের ৬ আগস্ট ‘বঙ্গবন্ধু ক্রীড়াসেবী কল্যাণ ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব অনুমোদন করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করার পর কিছু উচ্চাভিলাষী সামরিক কর্মকর্তা অবৈধভাবে দেশ পরিচালনা করে। তারা যুবসমাজকে বিপথে পরিচালিত এবং বিভ্রান্ত করে। শিক্ষা উপকরণের বদলে তাদের হাতে তুলে দেয় অস্ত্র, মাদক এবং কালো টাকা। যার ফলে দেশের শিক্ষাঙ্গনগুলো সন্ত্রাসের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে যুবসমাজকে উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্ত করতে দেশব্যাপী নানা কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছি। পরবর্তীতে ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়লাভের পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত যুবসমাজকে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করার লক্ষ্যে আমরা তথ্যপ্রযুক্তিসহ বিভিন্ন কারিগরি, বৃত্তিমূলক এবং কৃষিভিত্তিক বহুমুখী প্রশিক্ষণ প্রদান করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, আমরা যুবঋণ দিয়ে তাদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছি। গত ১৩ বছরে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে প্রবাসেও যুবদের কর্মসংস্থানের প্রসার ঘটছে। ৬৪টি জেলা কার্যালয় ও যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং ৫০০টি উপজেলায় ৮৩টি ট্রেডে এ পর্যন্ত ৬৪ লাখ ৬১ হাজার ২৩৮ জন যুবককে প্রশিক্ষণ প্রদান করেছি। ৯ লাখ ৯১ হাজার ৬৯১ জনের মধ্যে ২ হাজার ১১১ কোটি ৪২ লাখ ৮২ হাজার টাকা ঋণ বিতরণ করেছি। প্রশিক্ষিত যুবদের মধ্যে ২২ লাখ ৮০ হাজার ১৫৩ জন আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘জাতীয় যুবনীতি ২০১৭’ প্রণয়ন এবং তদানুযায়ী কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করেছি, সেই সঙ্গে ইয়ুথ ইনডেক্স প্রণয়ন করেছি। স্বেচ্ছাসেবী যুব সংগঠনগুলোকে আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করতে যুব সংগঠন (নিবন্ধন এবং পরিচালনা) আইন, ২০১৫ ও যুব সংগঠন (নিবন্ধন ও পরিচালনা) বিধিমালা, ২০১৭ প্রণয়ন করেছি। এর আওতায় ৫ হাজার ২৩টি যুব সংগঠনকে নিবন্ধন প্রদান করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, যুব সংগঠকরা সমাজ সচেতনতামূলক কার্যক্রম বাস্তবায়নের পাশাপাশি করোনা পরিস্থিতিকালীন স্বেচ্ছাসেবায় প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছে। আমরা যুবসমাজের ক্ষমতায়নের পথ সুগম করতে জাতীয় যুব কাউন্সিল (গঠন, কাঠামো, কার্যপদ্ধতি ও ব্যবস্থাপনা) বিধিমালা, ২০২১ প্রণয়ন করেছি।
জাতীয় যুবদিবস উপলক্ষে গৃহীত সব কর্মসূচির সাফল্য কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী।