ডেস্ক নিউজ
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে সোনার বাংলা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
রবিবার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) আয়োজিত স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬ তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ কথা বলেন। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে শোক দিবসের ওই অনুষ্ঠানে ইআরডির কর্মকর্তারা আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, আগস্ট মাসটি বাঙালী জাতি তথা বাংলাদেশের জন্য শোকের মাস, হৃদয়ের রক্ত ক্ষরণের মাস, অনুভূতি, উপলব্ধি ও মননশীলতার পরতে পরতে অসহ্য ও তীক্ষ যন্ত্রণা বয়ে যাওয়ার মাস।
এ কারণেই ১৫ আগস্ট জাতীয় শোকের দিন। তিনি বলেন, বাংলার আকাশ-বাতাস আর প্রকৃতির অশ্রুসিক্ত হওয়ার দিন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু একটি নাম নয়, তিনি হলেন একটি জাগ্রত ইতিহাস। একটি স্বাধীন জাতিসত্তার অপরিমেয় অহঙ্কার, বর্ণিল ঐশ্বর্য। ইতিহাসের জঘন্যতম সেই কালরাতে ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, তাদের হাতে একে একে প্রাণ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর সন্তান শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশু শেখ রাসেলসহ পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল। পৃথিবীর এই ঘৃণ্যতম হত্যাকা- থেকে বাঁচতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর সহোদর শেখ নাসের, ভগ্নীপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, ভাগ্নে যুবনেতা ও সাংবাদিক শেখ ফজলুল হক মনি, তার অন্তঃসত্ত্বা সহধর্মিণী আরজু মনি ও কর্নেল জামিলসহ পরিবারের ১৬ সদস্য ও আত্মীয়-স্বজন। সেনাবাহিনীর কিছু সংখ্যক বিপথগামী সদস্য সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বে নেমে আসে তীব্র শোকের ছায়া, সারাবিশ্ব হতবাক হয়ে যায় এবং ছড়িয়ে পড়ে ঘৃণার বিষবাষ্প।
অর্থমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশ বিনির্মাণে যখন তিনি কাজ শুরু করেছিলেন ঠিক তখনই তাকে হত্যা করা হয়। মূলত এই হত্যাকান্ডের মধ্যদিয়েই বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতকরা। কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। বাংলাদেশ এখন সত্যিই সোনার বাংলার দ্বারপ্রান্তে উপনীত। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরেই বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রার শুভ সূচনা হয়। আর এ কারণেই অর্থনীতির সর্বক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভাল করেছে। করোনা মহামারীর এই সময়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে যখন কঠিন চাপ ঠিক সেই সময়ই আমরা ভাল করছি। অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ১৯৪৭ থেকে ’৭১ এই দীর্ঘপথ পরিক্রমণে একেকটি আন্দোলনের সোপান উত্তরণের মাঝে একেক গুচ্ছ তরুণ তাজা তপ্ত প্রাণ অবিস্মরণীয় অবদান রেখেছেন। কিন্তু এসব কিছুরই পরোক্ষ এবং প্রত্যক্ষ প্রতীক ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
তাঁর কালজয়ী নেতৃত্বকে ঘিরেই আবর্তিত হয় প্রতিটি আন্দোলনের স্রোতধারা। জাতির শাণিত শিরায় অকুতোভয় সাহস ছড়িয়ে কোটি কোটি মানুষের ইচ্ছার অনিন্দ্য কুসুম ফুটিয়ে তোলেন তিনি। তিনি বাংলাদেশের ভৌগোলিক মুক্তির পাশাপাশি, অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্নে সোনার বাংলা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেন। ঘাতকরা জানত না যে, বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলা যায় না। কেননা বাংলাদেশ মানেই বঙ্গবন্ধু আর বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ। তিনি ছিলেন ন্যায্য, সত্য, কল্যাণ এবং আত্মমুক্তির পক্ষে সোচ্চার উদার হৃদয় মহান মানুষ। বঙ্গবন্ধু আছেন, তিনি থাকবেন বাঙালীর মননে, চেতনায়, ভালবাসায় অমর অক্ষয় এবং অব্যয় হয়ে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন বলেন, ১৫ আগস্ট শোকের দিন, জাতির জন্য একটি কলঙ্কিত দিন, একটি কালো অধ্যায়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদেরকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন, সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন, আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তি এনে দিতে চেয়েছিলেন- এই দিনে ঘাতকেরা হত্যা করে সেই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালীকে। ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে দেশে প্রত্যাবর্তন করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শূন্য থেকে শুরু করেন দেশ বিনির্মাণের কঠিনতম কাজ। ১৯৭২ সালেই তিনি প্রণয়ন করেন বাংলাদেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা।