ডেস্ক নিউজ
বাংলাদেশি পণ্যের নতুন গন্তব্য হতে পারে দক্ষিণ সুদান। ওষুধ, তৈরি পোশাক, কৃষি, আইটিসহ বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা রয়েছে দেশটিতে।
বর্তমানে দেশটির রাজধানী জুবার আইটি খাত বাংলাদেশি কয়েক জন ব্যবসায়ীর নিয়ন্ত্রণে। বাংলাদেশি আইটি প্রতিষ্ঠানের বিলবোর্ড দেখা গেছে জুবার বিভিন্ন সড়কে। ওষুধ, কৃষিপণ্য, গার্মেন্টস ও চামড়াজাত শিল্পও দক্ষিণ সুদানে রপ্তানি করা যেতে পারে। বাংলাদেশি পণ্যে আগ্রহ রয়েছে সে দেশের সরকার ও সাধারণ মানুষের। এই সুযোগটি কাজে লাগাতে পারে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা। এভাবে পুরো আফ্রিকার বাজারে অংশগ্রহণ করার সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের।
sudan-3দক্ষিণ সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা। সম্প্রতি সেখানে সফরে গিয়েছিলেন সেনাপ্রধান
গত মাসের প্রথম সপ্তাহে দক্ষিণ সুদানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। এ সময় তারা বাংলাদেশ সরকার ও ব্যবসায়ীদের সেখানে কৃষিভিত্তিক শিল্প খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। খুব শিগগিরই কৃষি মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দলের দক্ষিণ সুদানের বিনিয়োগ সম্ভাবনা যাচাইয়ে দেশটি সফরের কথা রয়েছে।
সম্প্রতি দক্ষিণ সুদানে সফরে গিয়েছিলেন সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। এ সময় তাকে লাল গালিচা অভ্যর্থনা জানানো হয়। সফরে দক্ষিণ সুদানে নিয়োজিত বাংলাদেশ কন্টিনজেন্টগুলো পরিদর্শন করেন জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। সেই সঙ্গে তিনি দক্ষিণ সুদান সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ ও চিফ অব ডিফেন্স ফোর্স এবং জাতিসংঘ মিশন প্রধানসহ অন্যান্য নেতৃস্থানীয় সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
সেনাবাহিনী প্রধানের এই সফরের মধ্য দিয়ে দক্ষিণ সুদানে নিয়োজিত বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের মনোবল বৃদ্ধিসহ দেশটির সরকার ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও একধাপ এগিয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ব্যবসায় প্রসারে কাজে লাগবে বলে মনে করেন অনেকেই। বাংলাদেশের প্রতি দক্ষিণ সুদানের সরকার ও জনগণের অগাদ আস্থার বিষয়টি সেনাপ্রধানের সফরের সময় দেশটির সরকার ও সামরিক বাহিনীর উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ উল্লেখ করেন।
sudan-1সম্প্রতি দক্ষিণ সুদানে সফরে গিয়েছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান।
দক্ষিণ সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা। সেখানে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি তাদের চিকিৎসাসেবা ও খাদ্য প্রদান এবং স্বাবলম্বী করতে বিভিন্ন প্রশিক্ষণসহ মানবিক সেবা দিচ্ছেন তারা। এভাবে বিশৃঙ্খল সুদানবাসীকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনা হয়েছে। এতে দক্ষিণ সুদানের সরকার থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের সব কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
এদিকে, শান্তিরক্ষীদের সুনাম কাজে লাগানোর সময় এসেছে বলে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা মনে করেন। স্থলবেষ্টিত (ল্যান্ডলক) দক্ষিণ সুদানের চার পাশে রয়েছে সুদান, সেন্ট্রাল আফ্রিকা রিপাবলিক, গণতান্ত্রিক কঙ্গো, উগান্ডা, কেনিয়া এবং ইথিওপিয়া। এর মধ্যে সেন্ট্রাল আফ্রিকা রিপাবলিক, গণতান্ত্রিক কঙ্গো এবং উগান্ডায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে রয়েছে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা। ইথিওপিয়ায় রয়েছে বাংলাদেশের দূতাবাস, যা সেখান থেকে দক্ষিণ সুদানসহ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের ভিসা কার্যক্রম তদারকি করা হয়। দেশি ও প্রবাসী ব্যবসায়ীরা বলেছেন, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করে দক্ষিণ সুদানে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর এখনই সময়। তবে ইথিওপিয়ার মতো আফ্রিকার অন্যান্য দেশেও ব্যাবসায়িক স্বার্থে দূতাবাস চালু করা জরুরি।
sudanসম্প্রতি দক্ষিণ সুদানে সফরে গিয়েছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান।
এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি আমিন হেলালী বলেন, দক্ষিণ সুদানসহ আফ্রিকার দেশগুলোতে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে কৃষি, ওষুধ, তৈরি পোশাক রপ্তানির অনেক সম্ভাবনা। বাংলাদেশের ব্যবসায়ী ঐ সব দেশে বিনিয়োগের জন্য সরকারগুলোর কাছে অনুমোদন চেয়েছে। এর আগে ব্যবসায়ীদের একটি টিম আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে সম্ভাবনা যাচাই করতে গিয়েছিল। তারা যাচাই করে এসেছে।
sudan-2সম্প্রতি দক্ষিণ সুদানে সফরে গিয়েছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান।
ওষুধ শিল্প সমিতির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আবদুল মোক্তাদির বলেন, দক্ষিণ সুদানসহ আফ্রিকার দেশগুলোতে এই মুহূর্তে কারখানা করা যাবে না। তবে ঐসব দেশে আমরা ওষুধ রপ্তানি করতে পারি। বাংলাদেশের ওষুধ দীর্ঘদিন ধরে শতাধিক দেশে রপ্তানি হয়ে আসছে।
এদিকে, বাংলাদেশের অনেকের ধারণা, মিশনে হয়তো একেক জন সদস্য অনেক টাকা পান। মিশনে বৈরী পরিবেশের মধ্যে দিনরাত যে কী পরিশ্রম করতে হয় তা চোখে না দেখলে বোঝা যাবে না। সেই পরিশ্রমের তুলনায় বেতন-ভাতা কমই পান। দক্ষিণ সুদানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ শান্তিরক্ষা মিশনের যানবাহন, অস্ত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর। শান্তিরক্ষা মিশন এসব ব্যবহার করার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে যানবাহনসহ প্রতিটি সামগ্রী থেকে জাতিসংঘ অর্থ দেয়। এক্ষেত্রে সরকার তিন গুণ আর্থিক লাভবান হচ্ছে।