ডেস্ক নিউজ
বাংলাদেশে কেউ সংখ্যালঘু নয়, এদেশ সবার। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান- সব ধর্মের মানুষের মিলিত রক্তস্রোতে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এ দেশকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ হিসেবে অম্লান রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর।
বুধবার রাতে রাজধানীর মেরুল বাড্ডার আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারে প্রবারণা পূর্ণিমা উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ ধর্মীয় তিথিতে সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ড. হাছান বলেন, মহামতি গৌতম বুদ্ধের অহিংসা ও জনহিতের বাণী শান্তি ও সম্প্রীতির দিশারী।
পূজামণ্ডপে হামলার ঘটনা প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা পাকিস্তানের পক্ষে ছিল তারা এবং তাদের পরবর্তী প্রজন্ম এখনো রয়ে গেছে। সেই কারণেই মাঝেমধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের অপচেষ্টা চালানো হয়। এ জনপদে হাজার বছর ধরে আমরা যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধনে বসবাস করছি, সেই বন্ধনে আঘাত হানার অপচেষ্টা চালানো হয় সেই কারণেই।
হাছান মাহমুদ বলেন, দুর্গাপূজাকে উপলক্ষ্য করে সেই সাম্প্রদায়িক অপশক্তি হামলা করেছে। যারা এ দেশটাকে চায় না। যারা সাম্প্রদায়িকতাকে উসকে দিয়ে বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে চায়। তারাই এ দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের অপচেষ্টা চালিয়েছে।
এর আগে সকালে মাইজভাণ্ডার দরবার শরিফের আয়োজনে রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, একজন সত্যিকার মুসলমান কখনো অন্যের ক্ষতি করতে ও সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদে জড়াতে পারে না। আউলিয়া সাধক ও দরবেশদের এই দেশে জঙ্গিবাদের ঠাঁই হবে না।সাম্প্রদায়িক উন্মাদনা ছড়িয়ে কোনো লাভ হবে না। এ দেশের মানুষ অসাম্প্রদায়িক ও উদার। সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে সর্বশক্তি দিয়ে আমাদের রুখে দিতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, সরকার ১২ রবিউল আওয়ালকে সরকারি ছুটি হিসেবে ঘোষণা করেছে। ইসলামের মূল মর্মবাণী হলো- মানুষের মধ্যে সৌহার্দ্য বৃদ্ধি করা। যারা এই মূল মর্মবাণী ধারণ করে, তারা কখনো ইসলামের নামে অন্য কারও ওপর আক্রমণ করে না। আজ ইসলামের মূল থেকে সরে গিয়ে ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হয়, তরুণদের বিপথে নিয়ে যাওয়া হয়। অলি-আউলিয়াদের মাধ্যমে ভালোবাসায় এই জনপদে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যারা এদের বিরুদ্ধে কথা বলে, সহিংসতা সৃষ্টি করে, অন্য ধর্মের প্রতি হামলা করে; তারা ফেৎনা সৃষ্টিকারী।
তিনি আরও বলেন, আমাদের এই দেশের স্বাধীনতার জন্য মুসলমান-হিন্দু একসঙ্গে যুদ্ধ করেছে। এই দেশ সবার। আজ যারা বিভ্রান্তি ছড়িয়ে যাচ্ছে, পবিত্র ধর্ম ইসলামের বিরুদ্ধে ফেৎনা ছড়িয়ে যাচ্ছে, তাদের কঠোর হাতে দমন করতে হবে। নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ না রেখে, নিজেদের মধ্যে ফেৎনা না রটিয়ে আমাদের একসঙ্গে থাকতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, এক শ্রেণির মানুষ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটিয়ে সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চায়। আমাদের নবী এত উদার, এত সহনশীল, যদি তার জীবন বিশ্লেষণ করি- তবে এমন আর কাউকে পাওয়া যাবে না। আর সেই ধর্মের মানুষকে মিথ্যাচার করে, এভাবে হেয় করা কেউ মেনে নেবে না। আমাদের সবাইকে সজাগ থাকতে হবে, যেন কেউ আমাদের মাঝে সহিংসতা সৃষ্টি করে বিদ্বেষ বাড়াতে না পারে।
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম। এখানে জঙ্গিবাদের জায়গা নেই। সব ধর্ম তাদের নিজ নিজ উৎসব-আয়োজন সুষ্ঠুভাবে পালন করবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা এবং ইসলাম আমাদের তাই শিখিয়েছে।