নাটোর প্রতিনিধি:
নাটোরের বাগাতিপাড়ায় সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুলের বাড়িতে একটি সালিশী বৈঠকে
আইয়ুব আলী (৫৫) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। নিহতের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ আইয়ুব আলীকে মারধর ও ভয়ভীতি দেখিয়ে হত্যা করা হয়েছে। মৃত্যু পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে এমন অভিযোগ অস্কীকার করেছেন সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বাগাতিপাড়া উপজেলায় স্যান্নালপাড়া গ্রামে সংসদ সদস্যর বাড়ীতে এই ঘটনা ঘটে।
নিহত আইয়ুব আলী একই উপজেলার মাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা। এদিকে ঘটনার সময় উক্ত স্থানে বাগাতিপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল মতিন উপস্থিত ছিলেন এবং তিনিও আইয়ুব আলীকে মামলা ও জেলে ঢুকানোর জন্য ভয় ভীতি প্রদর্শন করে বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এই ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে এখন সবাই তৎপর হয়েছে বলেও এলাকায় গুঞ্জন উঠেছে। প্রকাশ্যে দিনের বেলায় এমন ঘটনা ঘটায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি সহ সাধারনের মাঝে আতংক দেখা দিয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার অনেকেই বলেন, নাটোর-০১ আসন (লালপুর-বাগাতিপাড়া) সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুলের উপস্থিতিতে তার নিজ বাড়িতে একটি সালিশী বৈঠক চলার সময় আইয়ুব আলীকে লিচু গাছের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এ সময় তাকে চড় থাপ্পর সহ বিভিন্ন ভাবে মারধর করা হয়। এরপর অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তাকে গাছ থেকে খুলে একটি চেয়ারে বসানো হয়। তার একটু পরেই আইয়ুব আলী মারা যায়। পরে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে মারা যাওয়ার পর তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
এছাড়াও আরো অনেকে বলেন, একটি চাকুরীর দেওয়া ঘুসের টাকা লেনদেনকে কেন্দ্র করে আইয়ুব আলীর ছেলে সবুজের সাথে সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল এর এক নিকট আত্মীয়ের বেশ কিছুদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। এনিয়ে পূর্বেও বেশ কয়েকবার এলাকায় সালিশ বৈঠক হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আইয়ুব আলীকে তার কাছে পাওনা টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার দিন ধায্য হয় গত কয়েকদিন আগে। কিন্তু সেই টাকা ফিরৎ দিতে পারেনা আইয়ুব আলী ও তার ছেলে সবুজ। এরই ধারাবাহিকতায় দ্বন্দ্ব নিরসনের লক্ষ্যে শহিদুল ইসলাম বকুল এর বাড়িতে আজ একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেই বৈঠকেই আইয়ুব আলী মারা যায়। তবে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার উপস্থিতিতে এবং তার ভয়ভীতি প্রদর্শনে এলাকাবাসী স্তম্ভিত।
নিহত আইয়ুব আলীর ছেলে সোহাগ হোসেনের মোবাইল ফোনে ০১৩১৮১৭৮২৮০ যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এমপি বকুলের উপস্থিতিতে তার সমর্থকরা আমার আব্বাকে হত্যা করেছে। তিনি এই ঘটনার সঠিক বিচার চান। এছাড়াও থানায় কোন অভিযোগ করেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাতে আব্বার দাফন কাজ শেষ করে পরিবার সহ আত্মীয় স্বজনদের সাথে আলোচনা করে মামলা করার সিদ্ধান্ত আছে। তিনি আরো বলেন, এসব বিষয়ে থানায় অভিযোগ নিবে কিনা জানিনা। যদি না নেয় তাহলে হয়তো আদালতের কাছে যাবো। কারন আমার আব্বার কাছে কেউ কোন টাকা পাওনা ছিলোনা। একটা টাকার বিষয় নিয়ে ঝামেলা ছিলো কিন্তু সেই টাকা পরিশোধ করে দেয়া হয়েছে আগেই। এখন ক্যাডার ধরনের ছেলেরা আব্বার থেকে অবৈধ উপায়ে টাকা আদায় করার জন্য তাকে মানুষিক ও শারীরিকভাবে হয়রানী করা হয়েছে। এরফলেই আব্বা মারা গেছেন।
এ বিষয়ে বাগাতিপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল মোতিনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ সবই মিথ্যা বলে জানান। তিনি তার ব্যক্তিগত কাজে এমপি সাহেবের বাড়ীতে যাচ্ছিলেন। পথে একজন মারা গেছে শুনে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছিলেন। এরপর তিনি জানতে পারেন আইয়ুব আলীর কাছে পাওনা টাকা পরিশোধের জন্য আজ বৈঠক ছিলো। বৈঠক চলাকালিন সময়ে আইয়ুব আলী অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। রাতেই ময়না তদন্ত করে মরদেহ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আর এ বিষয়ে কারো কোন অভিযোগ পাইনি।
এদিকে এই ঘটনাটির বিষয়ে জানতে সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুলের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ঘটনার সময় তিনি বাড়ীর ভিতরেই ছিলেন এবং খাওয়া দাওয়া করছিলেন। এ সময় এলাকার কিছু মানুষ তার বাড়ীতে এসেছিল একটা টাকা পয়সার দ্বন্দ নিরসন করতে। পরে আইয়ুব আলী অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। এরপর তিনি শুনেছেন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে।