ডেস্ক নিউজ
করোনার মহামারিতে প্রতিদিনই মানুষ মারা যাচ্ছেন, আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। এরই মধ্যে বেঁচে থাকার তাগিদে জীবিকা অর্জনও মুখ্য হয়ে উঠেছে। ফলে জীবনের পাশাপাশি জীবিকা ঠিক রাখার মতো পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তারই সমাধান দিতে আটটি বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে আসন্ন ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে। সব মিলে ৬ লাখ ২ হাজার ৮৮০ কোটি টাকার মতো অঙ্ক ধরে এগোচ্ছে বাজেটের কাজ। এটি শেষ পর্যন্ত আরও বাড়তে পারে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।
আগামী বাজেটে অগ্রাধিকার বিষয়গুলো হচ্ছে করোনার মহামারি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় অর্থায়ন, কোভিড-১৯ মোকাবিলায় চলতি বছরে ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজগুলো সফলভাবে বাস্তবায়ন ও স্বাস্থ্য খাতে অতিরিক্ত বরাদ্দ। এছাড়া খাদ্য নিরাপত্তার লক্ষ্যে কৃষি খাতকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা সম্প্রসারণ, গৃহহীন দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য গৃহনির্মাণ, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে বিনা ও স্বল্পমূল্যে খাদ্য বিতরণ এবং সার্বিক মানবসম্পদ (শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নসহ) উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
জানতে চাইলে সাবেক সিনিয়র অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, স্বাস্থ্য খাতকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। এ খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ খাত এগিয়ে নিতে এর আগে বিভিন্ন আইন ও বিধান করা হয়েছে। যে কারণে আজ দেশে বিদ্যুতের উন্নয়ন হয়েছে। এই কৌশল এখন স্বাস্থ্য খাতে অনুসরণ করতে হবে। এছাড়া আগামী বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা সম্প্রসারণ, কর্মসংস্থান ও কৃষি খাতের ওপর জোর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
সূত্র মতে, কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় অগ্রাধিকার খাতগুলোতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করাই প্রধান কাজ হিসেবে থাকছে আগামী বাজেটে। এর মধ্যে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে স্বাস্থ্য, কৃষি ও সমাজ কল্যাণ খাত, খাদ্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি। এসব খাতে অর্থায়নে কোনো ধরনের সমস্যা সৃষ্টি না হয় সে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে অর্থ বিভাগ থেকে।
দ্বিতীয় অগ্রাধিকার খাত হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজগুলো সফলভাবে বাস্তবায়ন করা। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে প্রধানমন্ত্রী সর্বশেষ ২ হাজার ৭শ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। এর আগে করোনা মোকাবিলায় ১ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকার ২১টি প্রণোদনা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সেটি ছিল প্রথম প্রণোদনা প্যাকেজ। এসব প্যাকেজের অর্থ পুরোপুরি ব্যয় সম্ভব হয়নি চলতি বাজেটে। প্যাকেজগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়নে বাজেটে অর্থায়নের বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। ফলে নতুন বাজেটে এসব খাতে বরাদ্দ অব্যাহত রাখা হবে।
তৃতীয় অগ্রাধিকারে থাকছে স্বাস্থ্য খাত। এ খাতে অতিরিক্ত বরাদ্দ, প্রণোদনা এবং ক্ষতিপূরণের অর্থ সংস্থানে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। চলতি বাজেটে ২২ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য খাতে। আসন্ন বাজেটে এ বরাদ্দ আরও বাড়ানো হচ্ছে। এরই মধ্যে করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্য খাতে অস্বাভাবিক ব্যয় বেড়েছে। বিশেষ করে চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনাকাটা ও টিকা আমদানি করতে হচ্ছে।
এতে ব্যয় হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। এছাড়া সম্মুখযোদ্ধাদের সম্মাননা হিসাবে ডাক্তারদের এককালীন প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। এটি নতুন বাজেটেও অব্যাহত থাকছে। করোনা রোগীর সেবা দিতে গিয়ে অনেক ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী মারা যাচ্ছেন। তাদের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়টিও আগামী বাজেটে থাকছে। বিশেষ করে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় এ বছরও ১০ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল থাকছে।
আসন্ন বাজেটে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্ব দেওয়া হবে। কারণ করোনার প্রভাবে অনেকে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। ড. আবুল বারকাতের গবেষণায় দেখা গেছে, শুধু লকডাউনের কারণে কর্মহীন হয়েছেন ৩ কোটি ৫৯ লাখ ৭৩ হাজার ২৭১ জন। এর মধ্যে ১ কোটি ৪৪ লাখ কর্মী কাজ হারিয়েছেন। তারা এখনো কাজে ফিরতে পারেননি। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে দেড় হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নাধীন আছে। এর মধ্যে ৫৭০ কোটি টাকা ছাড় করেছে অর্থ বিভাগ। বাকি ৯৩০ কোটি টাকা নতুন বাজেটে বরাদ্দ থাকছে।
মহামারিতে অনেক নিম্ন আয়ের মানুষ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে। ফলে এসব মানুষকে সহায়তা করতে আগামী বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সম্প্রাসরণ করা হবে। এ বিষয়কে অগ্রাধিকার তালিকায় রাখা হয়েছে। প্রাথমিক হিসাবে ধারণা করা হচ্ছে আগামী বছরে প্রায় ৮৫ লাখ দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনা হবে।
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির যারা সুবিধাভোগী তাদের বাইরে অসংখ্য মানুষ রয়েছে নিম্ন ও গরিব। তাদের দেওয়া হবে স্বল্প ও বিনামূল্যে খাদ্য। এ বিষয়টি আগামী বাজেটে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে ১০ টাকা মূল্যে খাদ্য, কাবিখা, টিআর, ভিজিডি, ভিজিএফ, ওএমএসের মাধ্যমে এসব সুবিধা দেওয়া হবে। এসব কর্মসূচির সুবিধাভোগীর সংখ্যাও বাড়ানো হচ্ছে। অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকছে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উৎপাদন পর্যায়ে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, সেচ ও বীজে প্রণোদনা, কৃষি পুনর্বাসন ও সারের ভর্তুকি দেওয়া।
এছাড়া গৃহহীন দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য গৃহনির্মাণ এবং শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নে সার্বিক মানবসম্পদ উন্নয়ন। অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আগামী বাজেটে জিডিপির আকার ৭ দশমিক ২ শতাংশ ধরে এগোচ্ছে। করোনার কারণে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার পুরোপুরি হয়নি। ব্যবসা-বাণিজ্য, পর্যটন খাত, পরিবহণ ও হোটেল রেস্তোরাঁ ব্যবসা এখনো মন্দা চলছে।
যে কারণে জিডিপির প্রবৃদ্ধি খুব বেশি হবে না এমন হিসাব থেকে আগামী বাজেটে এই প্রবৃদ্ধি ধরা হয়। চলতি অর্থবছরের শুরুতে ৮ দশমিক ২ শতাংশ ধরা হয়। পরে সেটি সংশোধন করে ৬ দশমিক ১ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়।