নিজস্ব প্রতিবেদক:
নাটোরের নলডাঙ্গায় ভরা বর্ষা মৌসুমেও বৃষ্টির অভাবে খাল-বিল,ডোবা নালায় পানি না থাকায় পাট জাগ দেওয়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন পাট চাষীরা। এবছর প্রচন্ড তাপদাহ ও অনাবৃষ্টির প্রভাব পড়েছে এ পাটে।বেশি দাম দিয়ে শ্রমিক দিয়ে পাট কেটে জাগ দেওয়ার জন্য শ্যালোমেশিনের মাধ্যমে সেচ দিয়ে ডোবা নালায় পাট জাগ দিচ্ছে।এতে বাড়তি খচর করতে হচ্ছে কৃষকদের।এবার শুরু থেকে বাজারে পাটের যে দাম তাতে কিছুটা স্বস্তি মিললেও অতিরিক্ত খরচ হওয়ায় লোকসানের শষ্কা করছেন কৃষক।আবার ডোবা ও খালে পানি না থাকায় নদীতে পাট জাগ দেওয়ায় দুষিত হচ্ছে পানি।আর এতে নদীর পানিতে অক্সিজেন সংকটে ছোট বড় দেশিও বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী মরে ভেসে উঠছে। তবে পাট জাগ দেওয়া এ সংকট মেকাবেলা করতে কাঁচা পাটের আঁশ ছাড়িয়ে অল্প পানিতে জাগ দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা।আর উপজেলা প্রশাসন বলছে দেশিও প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী রক্ষায় দ্রুত প্রদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ উজানে রাবার ড্রাম জাগিয়ে পানি আটকানোর ফলে পানির স্রোত কমে যাওয়ায় পানিতে পযাপ্ত অক্সিজেন সংকটে শত শত মণ মাছ মরে ভেসে উঠছে।
সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, নলডাঙ্গা উপজেলার ঠাকুরলক্ষীকুল গ্রামের পাটচাষী রফিকুল ইসলামের নিজের কোন জমি না থাকায় অন্যের তিন বিঘা জমি লিজ নিয়ে লাভের আশায় পাট চাষ করেছেন।কিন্ত এবছর প্রচন্ড তাপদাহ ও অনাবৃষ্টির প্রভাবে খাল-বিল,ডোবা নালায় পানির অভাবে শুকনো ডোবায় বাধ্য হয়ে শ্যালোমেশিন দিয়ে সেচ দিয়ে সেই পানিতে পাট জাগ দিচ্ছে।এতে তার অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে।তিনি জানান,এক বিঘা জমিতে বীজ রোপন থেকে শুরু করে পাট কাটা ও জাগ ও আঁশ ছড়ানোসহ মোট ১৮-২০ হাজার টাকা খরচ হয়। এক বিঘা জমিতে মোট ৭ থেকে ৮ মণ পাট উৎপাদন হয়।বাজারে যে দাম আছে তাতে খুব বেশি লাভ হবে না।
তার মত এ এলাকার হাজার হাজার পাটচাষীরা পাট কেটে জাগ দেওয়া নিয়ে বিপাকে পড়েছে। অনেক কৃষক বাধ্য হয়ে উৎপাদিত পাট জাগ দিচ্ছে বারনই খরস্রোতা নদীতে।আর এতে পাট পচে নদীর পানিতে দুষণ সৃষ্টি হয়ে পানিতে অক্সিজেন সংকট দেখা দিচ্ছে। তাতে বারনই নদীর শ্যামনগরসহ ৬ টি দেশিও মাছের অভয়াশ্রমের ছোট বড় হাজারো মাছ ও জলজ প্রাণী মরে ভেসে উঠছে।বারনই নদীর দুই ধারে গত শনিবার (২৩ জুলাই) রাতে টেংরা, পুটি, চিংড়ি, গুচিসহ আধা মরা ও মরা ৫ থেকে ১৫ কেজি ওজনের মা মাছ রই, কাতল, বোয়াল ভেসে উঠলে স্থানীয়রা ধরে নিয়ে যায়।।স্থানীয়দের অভিয়োগ খাল-বিল ও ডোবা নালায় বৃষ্টির অভাবে পানি না থাকায় চাষীরা বারনই নদীতে পাট জাগ দেওয়ায় পানি দুষণ হয়ে এসব ছোট বড় শত শত মণ মাছ ও জলজ প্রাণী মরে ভেসে উঠছে।
শ্যামনগর অভয়শ্রমের পাহারাদার সমজান আলী সমু বলেন,পাট জাগ দেওয়ায় পানিতে গ্যাস হওয়ায় অভয়াশ্রমের ৫ কেজি ১০-১৫ কেজি ওজনের মা মাছ মওে ভেসে উঠছে।আমার নাতী ১০ কেজি ওজনের গ্লাসকাপ মরে ভেসে উঠলে ধরে নেয়।শুধু আমার নাতীর মত হাজার হাজার মানুষ বিভিন্ন ধরনের মাছ ধরে নিয়ে গেছে।
শ্যামনগর গ্রামের নিরেন কুমার বলেন,আমার ভাই ৩ কেজি ওজনের একটি আড়ঁ মাছ ভেসে উঠলে ধরে যায়।এইভাবে পাট জাগ দেওয়ায় এসব মাছ মরে যাচ্ছে।
সাবেক জনপ্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম বলেন,উজানে রাবার ড্রাম নদীর পানি প্রবাহ বন্ধ করা ও খাল-বিল ও ডোবা নালায় বৃষ্টির অভাবে পানি না থাকায় চাষীরা বারনই নদীতে পাট জাগ দেওয়ায় পানি দুষণ হয়ে এসব ছোট বড় শত শত মণ মাছ ও জলজ প্রাণী মরে ভেসে উঠছে।
বারনই পাশে বসবাসকারী সন্তোস কুমার বলেন,সকালে গোসল করতে এসে দেখি দেশিও প্রজাতির পুটি,টেংরা,গুচি,বাইম,চিংড়ি,১০ কেজি ওজনের বোয়াল ,রই কাতল মাছ মরে ভেসে উঠছে।আমিও প্রায় ৩-৪ কেজি মাছ ধরে নিয়ে গেছি।এ মাছ রক্ষা করতে সংলিষ্ট কর্তপক্ষের কাছে আবেদন জানাই।
তবে পরিবেশ বিবিএসএসফ দপ্তর সম্পাদক ফজলে রাব্বী বলেন, বারনই নদীতে গনহারে পাট জাগ দেওয়া বন্ধ করতে না পারলে দেশিও বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী এ ভাবে মরে যেতে যেতে এক সময় সব ধ্বংস হবে।এখনই প্রদক্ষেপ নেওয়া জরুরী।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার বলেন, নদীতে পাট জাগ দেওয়ায় পানি দুষণ হয়ে অ´িসিজেন ঘাটতি দেখা দেয়ায় ছোট বড় মাছ মরে ভেসে উঠলেও সংকট সমাধানে তাদের কোন করণীয় নাই।পর্যাপ্ত বৃষ্টি হলে এ সমস্যা কেটে যাবে বলে দাবী করছে মৎস্য বিভাগ।এ নদীতে দেশিও মাছের প্রজনন বৃদ্ধি করার জন্য ৬ টি মাছের অভয়াশ্রম রয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফৌজিয়া ফেরদৌস বলেন, বৃষ্টির অভাবে ডোবা নালায় পানি না থাকায় বাধ্য হয়ে কৃষকরা নদীতে পাট জাগ দিচ্ছে।তবে এ সংকট মেকাবেলায় পাট কেটে কাঁচা পাটের আঁশ ছাড়িয়ে অল্প পানিতে জাগ দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে।এবার নলডাঙ্গা উপজেলায় ১ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে।যা ৭ হাজার মেট্রিক টন পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।গত কয়েক বছর থেকে বাজারে পাটের ভালো দাম থাকায় গত বছর থেকে এ বছর একশো হেক্টর পাট বেশি চাষ হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সুখময় সরকার বলেন,বারনই নদীতে অভয়াশ্রমের মা মাছসহ ছোট বড় মাছ রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।