ডেস্ক নিউজ
চর কুকরি-মুকরি দেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপ। সবুজ ম্যানগ্রোভ ও নাম না জানা পাখির অভয়ারণ্য। এ দ্বীপটি ভোলা থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে। নদীপথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছাতে হয় সেখানে। বাহন একমাত্র ইঞ্জিনচালিত নৌকা। এ জনপদে সন্ধ্যা নামার আগেই রাতের নীরবতা নেমে আসত এক সময়। বিচ্ছিন্ন এ দ্বীপটিতে কখনও বিজলি বাতি জ্বলবে তা স্বপ্নেও ভাবেননি স্থানীয়রা। অধিকাংশ মানুষ সাগরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। সৌন্দর্যের এ লীলাভূমিতে সাগরের তলদেশ দিয়ে বিদ্যুতের তার (সাবমেরিন কেবল) নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দূর করা হয়েছে বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপের অন্ধকার।
শুধু চর কুকরি-মুকরিই নয়, অত্যন্ত দুর্গম বলে পরিচিত যমুনার বিভিন্ন চরে সাবমেরিন কেবল দিয়ে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এভাবে প্রায় ৯৯ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষের ঘরে বিদ্যুতের আলো পৌঁছেছে। বাকি আছে শুধু অতি দুর্গম হিসেবে পরিচিত তিন পার্বত্য জেলার কিছু গ্রাম। এসব এলাকাও বিদ্যুতের আওতায় দ্রুত চলে আসবে বলে জানা গেছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালে সারাদেশের মাত্র ৪৭ শতাংশ এলাকা বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় ছিল। এখন প্রায় ৯৯ দশমিক ৯ শতাংশ এলাকা বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায়। মাত্র এক দশকের মধ্যে বিদ্যুৎ বিভাগ এই অগ্রগতি অর্জন করেছে। পিছিয়ে পড়া অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলে সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। সে কারণে সরকার দুর্গম এলাকাগুলোতেও বিদ্যুৎ দিতে চায়। কারণ, বিদ্যুতের আলো মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করে।
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে নির্বাচনের আগে যে ইশতেহার দিয়েছিল সেখানে বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নের বিষয়ে বিস্তারিত বলা হয়েছিল। সরকার গরিব-মধ্যবিত্ত-মেহনতি মানুষের জীবন পরিবর্তনে কাজ করছে। বিদ্যুৎ এই পরিবর্তনের অন্যতম নিয়ামক। তিনি আরও বলেন, এখন আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো এবং তা সারাদেশে সরবরাহ করার কাজ করছি। এটার পর আমরা সাশ্রয়ীমূল্যে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে কাজ করব। বেশ কিছু প্রকল্পে কাজ চলছে, সেগুলো শেষ হলে শহরের মতো দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুতের আরও উন্নত সেবা পাবে জনগণ।
কিশোরগঞ্জের মিঠামইনের কাটখাল ইউনিয়নের মুর্শিদপুর হাওরবেষ্টিত দুর্গম এলাকা। এ অঞ্চলে বিদ্যুৎ আসবে এ কথা সেখানকার মানুষও ভাবেননি। কিন্তু সেই না ভাবা মুর্শিদপুরেও জ্বলছে বিজলি বাতি। যেসব এলাকায় এরই মধ্যে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে, সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রায় এসেছে পরিবর্তন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সুযোগও বেড়েছে কয়েক গুণ। ওই সব জনপদের বাসিন্দাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে যাওয়ার হার বেড়েছে।
যমুনার বিশাল চরে মানুষ থাকে তা শহরের বাসিন্দাদের পক্ষে আন্দাজ করাই কঠিন। মনে হয় বিশাল দরিয়ার মাঝে এক খণ্ড অন্ধকার অঞ্চল। এসব চরে সম্প্র্রতি সাবমেরিন কেবল দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহের অবকাঠামো নির্মাণ শুরু হয়েছে। আধুনিক সভ্যতার সুযোগ-সুবিধার বাইরে থাকা এসব দুর্গম চরাঞ্চলেও জ্বলবে বিজলী বাতি।
অথচ এসব চরে সন্ধ্যা নামলেই আলো বলতে শুধু ভেসে বেড়ায় অজস্র জোনাকি পোকা। আধুনিক সভ্যতার অনেক কিছুই নেই এই চরে। সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গে চরে নেমে আসে অদ্ভুত আঁধার। মূল ভূখ থেকে বিচ্ছিন্ন চর রামনগর, কালিকাবাড়ি ও পাগলার মতো দুর্গম গ্রামগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপনের কাজ শেষের দিকে। দ্রুতই সেখানেও জ্বলে উঠবে বিজলি বাতির আলো।
বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও পাহাড়বেষ্টিত ভুটানে শতভাগ মানুষকে বিদ্যুতের আওতায় আনা হয়েছে ২০১৯ সালে। পাকিস্তানে ৭৩ দশমিক ৯ শতাংশ, আফগানিস্তানে ৯৭ দশমিক ৭ শতাংশ ও ভারতে ৯৭ দশমিক ৮ শতাংশ এলাকা বিদ্যুতের আওতায় রয়েছে বলে বিশ্বব্যাংকের হিসাব বলছে। সেখানে বাংলাদেশের ৯৯ দশমিক ৯ ভাগ এলাকা বিদ্যুতের আওতায় রয়েছে। বাকি মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাবে চলতি বছরের মধ্যেই।