ডেস্ক নিউজ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার পাশাপাশি সবাইকে সঞ্চয় করার এবং দেশব্যাপী খাদ্য উৎপাদন বাড়িয়ে যে কোনো সংকট মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের (পিজিআর) ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি মঙ্গলবার সকালে এ কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ঢাকা সেনানিবাসের পিজিআর সদর দপ্তরের অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে মুদ্রাস্ফীতির ক্রমবর্ধমান প্রবণতা, বিদ্যুতের অভাব এবং বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকটের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের শুরু থেকেই সতর্ক থাকতে হবে। আমার বিশ্বাস, আমরা যদি সাবধানে এগিয়ে যাই, ইনশাআল্লাহ আমাদের কোনো সমস্যা হবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুতের ব্যাপারে আমাদের শুধু সাশ্রয়ীই হলে চলবে না। আমি চিন্তা করেছি, বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানির ব্যবহার কমাতে এলাকাভিত্তিক নির্দিষ্ট সময়ের জন্য লোডশেডিং করা যায় কিনা। এতে বিদ্যুতের ব্যবহারও কমবে। এখন বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে সংকট উত্তরণে এলাকাভিত্তিক কিছুটা লোডশেডিং চলতে পারে।
অনেক উন্নত দেশে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী দেশের প্রতি ইঞ্চি জমি এবং জলাশয়কে কাজে লাগিয়ে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে ব্যক্তি থেকে প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে সবার প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, সেক্ষেত্রে আমরা যদি সাশ্রয়ী হয়ে উঠি এবং আমাদের সঞ্চয় বাড়াতে পারি তাহলে যে কোনো পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারব। সরকার প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছে এবং দেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে প্রতিটি গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষকে ঘরবাড়ি করে দিচ্ছে। বাংলাদেশকে যারা হেয়প্রতিপন্ন করতে চেয়েছিল, আমাকে, আমার পরিবারকে, মন্ত্রিসভার সদস্য, সচিব, উপদেষ্টাকে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত করতে চেয়েছিল তাদের উপযুক্ত জবাব আমরা দিয়েছি নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের মাধ্যমে। পদ্মা সেতু শুধু একটা সেতুই নয়, আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং আমাদের স্বতন্ত্র জাতিসত্তারও বহিঃপ্রকাশ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়ন ও উন্নয়নে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেওয়া নানা পদক্ষেপ তুলে ধরেন। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া নানা উদ্যোগের কথাও জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, তিনি প্রথম ১৯৯৮ সালে ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ এবং মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন ট্রেনিং এবং আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ। আওয়ামী লীগ সরকারই প্রথম ২০০০ সালে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীতে নারী অফিসার নিয়োগ দেওয়া শুরু করে। ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠা করে বাংলাদেশ পিস বিল্ডিং সেন্টার। জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতি-২০১৮ প্রণয়ন, অ্যারোস্পেস ও এভিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এবং সিএমএইচগুলোকে অত্যাধুনিক হাসপাতালে রূপান্তর করাসহ পিজিআর সদস্যদের জন্য ঝুঁকিভাতা প্রবর্তন এবং আবাসনের বন্দোবস্তসহ বিভিন্ন কল্যাণমূলক পদক্ষেপ নেয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কারও সঙ্গে যুদ্ধ চাই না, আমরা শান্তি চাই। জাতির পিতা আমাদের যে পররাষ্ট্র নীতিমালা দিয়েছেন-‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’, আমরা সে নীতিই মেনে চলছি। কিন্তু একটি স্বাধীন দেশ হিসাবে আমাদের যেন সব রকম প্রস্তুতি থাকে। স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রতীকগুলো যেন যথাযথভাবে গড়ে ওঠে আমরা তার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছি এবং বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।
রোদ, ঝড়, বৃষ্টি মাথায় করে পিজিআর সদস্যদের দায়িত্ব পালনের ভূয়সী প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাই গার্ডস-এর লক্ষ্য’ এ মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে রেজিমেন্টের সদস্যরা সাহস, আন্তরিকতা, পেশাগত দক্ষতা, সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা এবং দেশপ্রেমের শপথে বলীয়ান হয়ে দায়িত্ব পালন করবে। কর্তব্য পালনের ক্ষেত্রে নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার, নিয়মিত প্রশিক্ষণ এবং পেশাগত অনুশীলনের মাধ্যমেই এ রেজিমেন্ট আগামীতে আরও সমৃদ্ধ হবে।