বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষ ধনী এলন মাস্ক। ই-কমার্স জায়ান্ট আমাজনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জেফ বেজোসকে হটিয়ে বিশ্বের শীর্ষ ধনী এখন টেসলা ও স্পেসএক্সের মালিক এলন মাস্ক। মাস্কের সম্পদের পরিমাণ ১৮ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। এর মধ্যে ১৬ হাজার কোটি ডলার গত বছরেই আয় করেছেন তিনি। বৈদ্যুতিক কার ব্যবসা রমরমা, ফুলে ফেঁপে উঠেছে শেয়ারবাজার, সেই সঙ্গে স্পেসএক্সের মালিকানা কি নেই মাস্কের এখন। তাঁর এত এত সাফল্যের রহস্য কী? কয়েক বছর আগে বিবিসির এক প্রতিবেদক মাস্কের সাক্ষাৎকার নেন। সেই সাক্ষাৎকারে মাস্ক জানান তাঁর সাফল্যের ৬ রহস্য—
কেবল অর্থই সব নয়
এই কথাটি এলন মাস্ক তাঁর ব্যবসার জন্য একেবারে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন। ২০১৪ সালে বিবিসির ওই প্রতিবেদক যখন তাঁর সাক্ষাৎকার নেন তখন এক প্রশ্নে এলন জবাব দেন, তিনি জানেন না তিনি কতটা ধনী। তিনি বলেন, এটা এমন না যে কোথাও একগাদা অর্থ জমিয়ে রাখা হয়েছে। বরং সত্যি হলো টেসলা, স্পেসএক্স এবং সোলার সিটিতে আমার নির্দিষ্টসংখ্যক ভোট রয়েছে এবং বাজারে সেই ভোটেরই মূল্য রয়েছে। ধনসম্পদ তাঁকে চালিত করে না। ৫০ বছর বয়সী মাস্ক আশাও করেন না ধনীর এই জীবন নিয়েই মারা যাবেন তিনি। তিনি মনে করেন, তাঁর বেশির ভাগ অর্থ মঙ্গল গ্রহে বাড়ি তৈরি করতে ব্যয় হবে এবং এই প্রকল্পে যদি তাঁর পুরো ভাগ্যও ব্যয় হয়, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
মন যা বলে শুনুন
নিজের মন বোঝাই হলো সাফল্যের মূল চাবিকাঠি—এমনটাই ভাবেন এলন মাস্ক। মাস্ক বলেন, ‘আপনি যদি চান ভবিষ্যতে বিষয়গুলো আরও ভালো হোক, আপনি নতুন আকর্ষণীয় কিছু করুন, যা জীবনকে আরও উন্নত করে তোলে।’ মাস্কের জন্য এমনটা ছিল স্পেসএক্স। তিনি এটি প্রতিষ্ঠা করেন কারণ তিনি মার্কিন স্পেস প্রোগ্রাম নিয়ে হতাশ ছিলেন। সেটি বেশি উচ্চাকাঙ্ক্ষী ছিল না। মাস্ক বলেন, ‘আমি প্রত্যাশা রেখেছিলাম যে আমরা পৃথিবী ছাড়িয়ে অগ্রসর হব, একজনকে মঙ্গল গ্রহে রাখব, চাঁদে বসতি গড়ব এবং কক্ষপথে খুব ঘন ঘন ঘুরব। যখন এটি হয়নি, তখন ‘মঙ্গল ওসিস মিশন’ ধারণা নিয়ে আসেন তিনি। এই মিশনে লাল গ্রহটিতে একটি ছোট গ্রিনহাউস পাঠানোর লক্ষ্য ছিল। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল মানুষকে মহাকাশ নিয়ে উৎসাহিত করা, নাসার বাজেট বাড়ানো।
বড় কিছু ভাবতে ভয় করা যাবে না
এলন মাস্কের ব্যবসাগুলো সম্পর্কে জানলেই বোঝা যায় কতটা সাহসী প্রকল্প এগুলো। তিনি গাড়ি শিল্পে বিপ্লব ঘটাতে চান, মঙ্গলে কলোনি বানাতে চান, ভ্যাকুয়াম টানেলে সুপার-ফাস্ট ট্রেন তৈরি করতে চান, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়েও কাজ করছেন তিনি। সবই বড় বড় ভাবনা। বিশাল বাজেটের উদ্যোগ। তাঁর সব প্রকল্প অনেকটা আশির দশকের গোড়ার দিকে কিশোর ফ্যান্টাসি ম্যাগাজিনে যেসব ধারণা থাকত তেমন। যেগুলো ভাবাই যায় না, কেউ কখনো করে দেখাতে পারবে। অবশ্য বাচ্চাদের বই থেকে যে তিনি এসব ধারণা পেয়েছেন, তা মাস্ক নিজেও বলেন।
ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত থাকুন
মাস্ক যে কতটুকু প্রস্তুত, তা তাঁর কাজ দেখলেই বোঝা যায়। মাস্ক বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বেশি ভয়াবহ সব ঝুঁকি নিয়েছেন। ২০০২ সালের মধ্যে তিনি তাঁর প্রথম দুটি উদ্যোগ অনলাইন সিটি গাইড জিপ-২ এবং অনলাইন পেমেন্ট সংস্থা পেপাল বিক্রি করে দেন। সে সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ৩০। অর্থাৎ ব্যবসায়ে মোড় ঘোরালেন, ঝুঁকি নিলেন। বিক্রি করে তাঁর ব্যাংকে এল ২০ কোটি ডলার। এর অর্ধেক নিয়ে ঝুঁকি নেওয়ার পরিকল্পনা নিলেন তিনি। বাকি অর্ধেক রেখে দেওয়ার পরিকল্পনা করলেন। এমনভাবেই সব সময় ভাগ্য নিয়ে খেলেছেন তিনি।
সমালোচকদের এড়িয়ে যান
এলন মাস্কের এমন ধারা কাজে বরাবরই অনেকের সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি। তিনি মনে করেন, মানুষ হয়তো তাঁকে ব্যর্থ করতে চাইত, কারণ নিজের উচ্চাকাঙ্ক্ষা সম্পর্কে তাঁর একধরনের অহংকার রয়েছে। এটা মাস্ককে বড় শিক্ষা দেয়। সমালোচকদের কথা শোনেননি তিনি। এটি সিদ্ধান্ত নিতে অনেক সহজ করে দেয়। কারণ, তিনি যা বিশ্বাস করেন তার প্রতিই মনোনিবেশ করেছেন।
জীবনকে উপভোগ করুন
এলন মাস্ক কাজ পাগল। সপ্তাহে ১২০ ঘণ্টাও কাজ করেন তিনি। তবে এরপরও তিনি জীবনকে উপভোগ করতে নিজের জন্য সময় রাখেন। বিভিন্ন সময় মানহানির মামলা, অনএয়ার ধূমপান এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝগড়াঝাঁটি করে বিতর্কের সৃষ্টি করেছেন তিনি। তবে তাঁর এই অপ্রত্যাশিত আচরণ তাঁর ব্যবসাগুলোকে প্রভাবিত করেনি। উদ্যোক্তা হিসেবে বরাবরই উচ্চাভিলাষী রয়েছেন। নিজের ব্যক্তিগত জীবন তাঁর ব্যবসায় প্রতিফলিত হয়নি।