বিষমুক্ত পান উৎপাদনে সাফল্য পেয়েছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা। কোনো কীটনাশক ও রাসায়নিক ব্যবহার ছাড়াই ‘হলুদ আঠা ফাঁদ এবং ‘জৈব বালাইনাশক’ ব্যবহার করে বিষমুক্ত পান উৎপাদনে পরীক্ষামূলক সাফল্য পেয়েছেন তারা। বাজারের পানে বিষ ও কীটনাশকের উপস্থিতি থাকলেও নতুন পদ্ধতিতে উৎপাদিত পানে পাওয়া যায়নি বিষের অস্তিত্ব। এতে পান ব্যবহারকারীদের দেহে হৃদরোগ ও ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগের ঝুঁকি কমবে। নতুন এই পদ্ধতিতে পানের ফলন ভালো। দেখতে সুন্দর। খেতেও সুস্বাদু। এতে পান চাষিরা লাভবান হবেন। পরীক্ষা সফল হওয়ায় এবার উদ্ভাবিত এই পদ্ধতি সারা দেশের পান চাষিদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি গবেষণা বিভাগ। পান বাঙালির সামাজিক রীতিতে আপ্যায়নের অন্যতম উপকরণ। কিন্তু বাজারে সচরাচর যে পান পাওয়া যায় সেগুলো উৎপাদনে নানা সার ও রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হয়। অজান্তে সেই পান খেয়ে অনেকেই আক্রান্ত হন হৃদরোগ এবং মরণঘাতী ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগে।
গাজীপুরের বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক (প্রশিক্ষণ ও যোগাযোগ) ড. মোহাম্মদ সামসুল আলম জানান, বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তানসহ দক্ষিণ এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে যেখানে বাঙালিরা বসবাস করেন সেসব স্থানে পানের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। পান রপ্তানি করে প্রতি বছর বিপুল রাজস্ব আয় করে সরকার। ২০১৭ সালে সৌদি আরবে রপ্তানি করা একটি পানের চালান ফেরত আসার পর নড়েচড়ে বসে সরকার। কৃষি বিজ্ঞানীরা ওই পান পরীক্ষা করে বিষ এবং ব্যাটেরিয়ার উপস্থিতি পায়। এরপর থেকে ‘সুপারি ও পান ফসলের পোকামাকড় শনাক্তকরণ এবং সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদন কর্মসূচি’ নামে একটি প্রকল্পের আওতায় কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা গবেষণা শুরু করেন। প্রায় ৩ বছরের গবেষণায় বিজ্ঞানীরা বিষ ও রাসায়নিকমুক্ত পান উৎপাদনে সাফল্য পায়। নতুন পদ্ধতিতে পানের ব্যাপক ফলন পায় চাষিরা। এই পান দেখতে সুন্দর এবং খেতেও সুস্বাদু। উৎপাদন খরচও কম। নতুন পদ্ধতিতে পরীক্ষামূলক পান উৎপাদনে সফল উজিরপুরের দাসেরহাটের পান চাষি সনাতন দাস জানান, পূর্ব পুরুষ থেকে বংশপরম্পরায় পান চাষ করছেন তারা। আগে তারা সার, খৈল-কীটনাশক ব্যবহার করতেন। এ কারণে পোকায় পান নষ্ট করে ফেলত। পানপাতা ফ্যাকাশে হতো। খেতেও ঝাঁজালো লাগত। কৃষি বিভাগের নতুন উদ্ভাবিত ‘জৈব বালাইনাশক এবং হলুদ আঠা ফাঁদ’ ব্যবহার করে তারা পানের অধিক ফলন পাচ্ছেন। এই পান দেখতে সুন্দর-খেতে সুস্বাদু। উৎপাদন খরচও কম। একই উপজেলার হানুয়া গ্রামের রিপন সরদার ও গুঠিয়া গ্রামের নাসির মুন্সি জানান, জৈব বালাইনাশক এবং হলুদ আঠা ফাঁদ ব্যবহারে পানের লতার বৃদ্ধির হার আগের চেয়ে বেশি। পানের ফলনও ভালো। পানের রোগ বালাইও কম। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও নিরাপদ ফসল উৎপাদন কর্মসূচির পরিচালক ড. মো. মাহবুবুর রহমান জানান, পান রান্না হয় না, সরাসরি খাওয়া হয়। বিষযুক্ত পান খাওয়ার মাধ্যমে মানবদেহে মরণঘাতী ক্যান্সার, হৃদরোগসহ বিভিন্ন জটিল রোগ হয়। গত ৩ বছরের গবেষণায় পরীক্ষামূলকভাবে ‘হলুদ আঠা ফাঁদ এবং জৈব বালাইনাশক’ ব্যবহারের মাধ্যমে বিষমুক্ত পান উৎপাদনে তারা সাফল্য পেয়েছেন। এখন প্রশিক্ষণ এবং মাঠ দিবসের মাধ্যমে এই কর্মসূচি সারা দেশের পান চাষিদের মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। এতে পান চাষিরা লাভবান হবেন।