ডেস্ক নিউজ
বীরাঙ্গনা শীলা গুহ বলেন, ‘আমি এখনও আপনার জন্য প্রতিদিন দু’টাকা দামের একটি করে বাতি জ্বালাই। কারণ আমার বোন যেন সুখী থাকে। বোনের যেন কোনো অমঙ্গল না আসে। আমার বোন যাতে হাজার বছর বাঁচে সে কামনা করি।’
সারা দেশের ৫৩ হাজারের বেশি গৃহহীন পরিবারকে ঘর দিতে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বরাবরের মতোই অনুষ্ঠানের মূল পর্ব শেষে স্থানীয় উপকারভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের উপকারভোগী ভিক্ষুক বীরাঙ্গনা শীলা গুহের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বক্তব্যের শুরুতেই বিনা মূল্যের ঘর পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন অশীতিপর শীলা গুহ। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আমি ঘর পেয়ে খুবই খুশি। আগে ছিলাম রাস্তার ভিখারি, এখন হলাম লাখপতি।
‘শুধু বঙ্গবন্ধুর কন্যার জন্যই আমি এ পর্যায়ে আসতে পেরেছি। তাই ভগবান তাকে দীর্ঘজীবি করুক। আর কামনা করি বঙ্গবন্ধুর আত্মা যেন শান্তি পায়। তারা যেন স্বর্গ থেকে দেখতে পায় আমরা সুখী হয়েছি।’
বীরাঙ্গনা শীলা জানান, প্রতিদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মঙ্গল কামনায় সন্ধ্যাবাতি জ্বালেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমি এখনও আপনার জন্য প্রতিদিন দু’টাকা দামের একটি করে বাতি জ্বালাই। কারণ আমার বোন যেন সুখী থাকে। বোনের যেন কোনো অমঙ্গল না আসে। আমার বোন যাতে হাজার বছর বাঁচে সে কামনা করি।’
‘আমি মুক্তিযুদ্ধের সময়ও ভাবতে পারিনি যে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেষ বয়সে আমাকে দেখে রাখবেন। তাই আমি ভীষণ খুশি হয়েছি তার ওপর।’
হঠাৎ বঙ্গবন্ধুকন্যার কাছে একটি দাবি করে বসেন শীলা। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার কাছে আমার একটি দাবি। আমাকে আপনি যে ঘর দিয়েছেন সে ঘরে একটি বারের জন্য আসবেন। আমি আপনাকে সাতকড়া দিয়ে তরকারি রান্না করে খাওয়াব।’
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বোন, আমি যদি সুযোগ পাই নিশ্চয় আসার চেষ্টা করব।’
প্রধানমন্ত্রীর এ আশ্বাস শুনে চোখের পানি যেন থামছিল না শীলার। তার কান্না দেখে প্রধানমন্ত্রীর গলাও ধরে আসে।
কাঁপা কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের যে অবদান, আপনাদের যে আত্মত্যাগ, এর মধ্য দিয়েই তো আমাদের স্বাধীনতা অর্জন। কাজেই আত্মত্যাগ কিন্তু কখনো বৃথা যায় না। হয়তো অনেক বছর আমরা আসতে পারিনি। কিন্তু এখন আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
মুজিববর্ষে দ্বিতীয় দফায় ৫৩ হাজার ৩৪০ ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারের কাছে ঘর হস্তান্তর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। রোববার দ্বিতীয় দফায় ঘর হস্তান্তরের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর আওতায় এ ঘরগুলো পাচ্ছেন গৃহহীন দরিদ্র পরিবারগুলো।
এর আগে মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ২৩ জানুয়ারি ৬৬ হাজার গৃহহীন পরিবারকে ঘর হস্তান্তর করা হয়।
যে ঘরগুলো দেয়া হচ্ছে, সেগুলোর প্রত্যেকটিতে রয়েছে দুটি করে শয়নকক্ষ, একটি রান্নাঘর, একটি টয়লেট ও একটি লম্বা বারান্দা। ঘরের নকশা পছন্দ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই।
প্রতিটি বাড়ির নির্মাণে খরচ হচ্ছে এক লাখ ৭১ হাজার টাকা। প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে এ প্রকল্পে খরচ হয়েছে ২ হাজার ২৩৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।